প্রস্টেট একটি গ্ল্যান্ড। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই গ্ল্যান্ড শুধু পুরুষদের শরীরেই থাকে। এই গ্ল্যান্ড পুরুষদের সিমেন-এর ফ্লুইড কম্পোনেন্ট রিলিজ-এ সাহায্য করে।  কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় Prostate-এর নানা সমস্যা

প্রস্টেট-এর কী সমস্যা হলে তা রোগের রূপ নেয়?

বয়স বাড়লে শারীরিক কিছু পরিবর্তন আসে, যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পুরুষদের প্রস্টেট বেড়ে যাওয়াও এমনই একটি পরিবর্তন। সাধারণত, পঞ্চাশ বছর বয়সের পর অনেকেরই প্রস্টেট বেড়ে যায়। এই বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয়, বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়ার বা ‘বিপিএইচ’। এই বিপিএইচ-এর সমস্যা চল্লিশ পার করা পুরুষদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। যদি পঞ্চাশের আগে প্রস্টেট বেড়ে যাওয়ার সমস্যা হয়, তাহলে তা দুশ্চিন্তার বিষয়।

বিপিএইচ মানেই কি ক্যানসার?

বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়ার বা বিপিএইচ খুব কমন প্রস্টেটিক রোগ। পঞ্চাশ বছর বয়স পার হলে বিপিএইচ-এর শিকার হন অনেকেই। কিন্তু বিপিএইচ মানে প্রস্টেট ক্যানসার নয়। শুধু তাই নয়, বিপিএইচ হওয়া মানেই ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া নয়। অন্য ক্যানসার যেভাবে হয়, প্রস্টেট ক্যানসারও ঠিক সেইভাবেই হয়।

শুধু বিপিএইচ-এর শিকার নাকি Prostate Cancer আক্রান্ত– এটা বোঝার উপায় কী? 

যদি ঘনঘন মূত্রত্যাগের প্রয়োজন হয়, মূত্রত্যাগের সময় জ্বালা-যন্ত্রণা হয় কিংবা মূত্রথলি পুরোপুরি খালি করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিপিএইচ-এর শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরকম উপসর্গ দেখা দিলে চিকৎসকের সঙ্গে দেখা করে পরামর্শ এবং যাবতীয় পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা উচিত। আর যদি প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয় কেউ, তাহলে শুরুর দিকে এর কোনও উপসর্গ প্রকট হয় না। তাই, ‘প্রিভেনশন বেটার দ্যান কিওর’ –অর্থাৎ, রোগ হওয়ার আগে তা প্রতিরোধ করা উচিত। চল্লিশ বছর বয়সের পর থেকে পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। তাই চল্লিশ বছর বয়সের পর সতর্কতা জরুরি। যদি বাবা, কাকা কিংবা পরিবারের পূর্বসূরির প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার রেকর্ড থাকে, তাহলে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে।

চল্লিশ বছর বয়স পার হলেই প্রতি বছর নিয়ম করে প্রস্টেট পরীক্ষা করানো উচিত। সেইসঙ্গে, রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে রক্তে কতটা পিএসএ (প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) আছে। কারণ, ক্যানসারে আক্রান্ত কিনা তা বোঝা যাবে পিএসএ-র মাত্রার উপর। তবে এর সঙ্গে ডিজিটাল রেক্টাল পরীক্ষা করা উচিত। প্রস্টেট-এ কোনও রকম সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে বায়োপসি করা দরকার। আসলে, প্রস্টেট ক্যানসার হলে শুরুর দিকে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। যখন রোগটি অ্যাডভান্সড স্টেজ-এ চলে যায়, তখন উপসর্গ প্রকট হয়। মূত্র কিংবা বীর্যের সঙ্গে রক্ত পড়ে, তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা হয়, মূত্রনালিতে কিছু আটকে রয়েছে এমন অনুভূতিও হতে পারে। আবার, প্রস্টেট ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজ-এ প্রস্রাব বন্ধও হয়ে যেতে পারে। আর তা যদি হয়, তাহলে যন্ত্রণা তলপেট থেকে শুরু করে কোমরেও ছড়িয়ে পড়বে।

প্রস্টেট বড়ো হয়ে যাওয়া কিংবা প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য কী করা উচিত?

ঘুমে যেন ব্যাঘাত না ঘটে। সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমোনো উচিত রাতে। পরিমাণ মতো জলপান করুন। প্রস্রাব চেপে রাখবেন না। ধূমপান এবং মদ্যপান করা চলবে না। শরীর ঠিক রাখার জন্য উপযুক্ত পরিশ্রম কিংবা ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করুন। আর চল্লিশ বছর বয়সের পর প্রস্টেট পরীক্ষা করান নিয়মিত।

প্রস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয় কীভাবে?

প্রস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিরাচরিত কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপি তো আছেই, এছাড়া, ক্রায়ো সার্জারির মতো উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতিও রয়েছে। এই পদ্ধতিতে ক্যানসারের কোশগুলিকে ঠান্ডায় জমিয়ে মেরে ফেলা হয়। আর রয়েছে আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি এবং হরমোন থেরাপি। নির্দিষ্ট মাত্রায় শব্দতরঙ্গ কিংবা হরমোন প্রয়োগ করে ক্যানসারের কোশগুলিকে মারা হয় এক্ষেত্রে। আর যদি এইসব থেরাপিতেও কাজ না হয়, তাহলে অস্ত্রোপচার করা ছাড়া উপায় থাকে না।                                                                                

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...