সন্ধে হয়ে আসছে দেখে দীপিকা বিছানা ছেড়ে তাড়াতাড়ি করে বালিশ, চাদর গোছানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। শ্যাম্পু করা রেশমের মতো হালকা চুলগুলো ইতিউতি ওর গোলাপি গালে বারবার উড়ে আসাতে ও বিরক্ত বোধ করছিল আর বারবারই শেপলি কোমল আঙুলগুলো দিয়ে চুলগুলো কানের পাশে ঠেলে দিতে চেষ্টা করছিল।

‘প্লিজ উঠে পড়ো… চাদর ভাঁজ করতে হবে’, বলতে বলতে দীপিকা শুভ্র-কে ধাক্বা দেয়। শুভ্র তখনও বিছানা অাঁকড়ে পড়েছিল।

‘থাকতে দাও না চুলগুলো মুখের উপর… মনে হচ্ছে যেন মেঘ চাঁদকে ঢাকবার চেষ্টা করছে, দীপিকার আপ্রাণ চেষ্টা দেখে শুভ্র শুয়ে শুয়েই মন্তব্য করল।

‘সন্ধে হয়ে আসছে শুভ্র, এবার যদি মেঘেদের বাড়ি না পাঠাই তাহলে আজ তোমার এই চাঁদকে একেবারে অস্ত যেতে হবে, বুঝেছ সোনা?’

‘তোমার আবার কীসের ভয়? না তোমার থাকার জায়গার অভাব আর না তোমাকে থাকতে দেওয়ার লোকের অভাব… যেদিন তুমি হ্যাঁ করবে সেদিনই আমি…’

‘ব্যস ব্যস, হ্যাঁ তো বলেইছি… এখন বাড়ি যাও। উদয় আসার সময় হয়ে গেছে… ততক্ষণ আমি সবকিছু ঠিকঠাক করে নিই’, যত দ্রুত সম্ভব অবিন্যস্ত ঘরটা গোছাতে গোছাতে দীপিকা জিজ্ঞেস করল, ‘কাল কখন আসবে?’

‘ওই একই সময়, বারোটার কাছাকাছি, বলেই শুভ্র একটু সিরিয়াস হল, ‘দীপা, এই ভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে আর ভালো লাগছে না, মনে হয় যেন কোনও অন্যায় করছি।’

‘অন্যায় তো আমরা করছি বটেই শুভ্র। আমরা দুজন যদি বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী হতাম তাহলে অন্য কথা ছিল, কিন্তু এখন আমি উদয়ের স্ত্রী… তুমি এখানে আসো আমার সংগীতশিক্ষক হিসেবে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের এই সম্পর্ক গড়ে তোলাটা অন্যায় নয়-তো কী?’

‘এরকম কেন বলছ?

উদয়ের অনেক আগেই আমি তোমার জীবনে এসেছি। যদি

জাত-ধর্ম তুলে আমাদের দু’জনের বাড়ির লোকেরা বাধা না দিত আমাদের প্রেমে, আর অন্য শহরে তোমার বিয়ে না দিয়ে দিত জোর করে, তাহলে হয়তো…’

‘ছাড়ো পুরোনো কথা। এটাই তো ভাগ্য বলতে হবে যে অন্য শহরে এসেও তোমার সঙ্গে হঠাৎ-ই দেখা হয়ে গেল। ভগবানও আমাদের দুজনের প্রেম দেখে উপায় একটা করেই দিয়েছেন।’

অফিস থেকে ফিরে উদয় বারান্দায় চেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিল, দীপিকা সামনে বসে উল বোনায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিল। শুভ্র বরাবরই দীপিকার হাতের তৈরি জিনিস খুব পছন্দ করত তাই কখনও সোয়েটার, দস্তানা ইত্যাদি বানিয়ে দীপিকা শুভ্রকে উপহার দিত। উদয় জিজ্ঞেস করলে বলত, বান্ধবী বা ছোটো ভাইয়ের জন্য তৈরি করছে।

দু’বছর হয়ে গেল উদয়ের সঙ্গে দীপিকার বিয়ের। প্রথম প্রথম দীপিকা খুব চুপচাপ থাকত, উদয় ভাবত নতুন শহরে এসে নতুন মানুষদের মধ্যে দীপিকার মন খারাপ লাগছে। আসলে শুভ্রকে ছেড়ে আসার জন্যই দীপিকা সবসময় উদাস থাকত।

বারবার দীপিকার মনে পড়ত সেই দিনটার কথা। ও আর শুভ্র সিনেমা দেখে হাত ধরাধরি করে হল ছেড়ে বেরোচ্ছিল হঠাৎ বড়দা-র সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে যায়। বড়দাই দীপিকার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়িতে এনে ফেলেছিল। বাবা জানতে পারায় ঘরে ওকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। কোথাও যাওয়া-আসা বা কারও ওর সঙ্গে দেখা করতে আসা একেবারে বারণ হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য দীপিকা প্রতিবাদ জানাবার চেষ্টা করেছিল। প্রায় আড়াই দিন খাবারে হাত ছোঁয়ায়নি, খিদে সহ্য করে ঘরে পড়েছিল কিন্তু কাউকে এতটুকু নরম হতে দেখেনি। অগত্যা খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ ওকেই হার মানতে হয়েছিল। শুভ্র-র জাত আলাদা এই অজুহাতে বাড়ির কেউই এই সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি।

ধীরে ধীরে দীপিকার মনোবল কমতে থাকে। ১৫ দিনের মধ্যে ওর বিয়েও ঠিক করে ফেলা হয়। কে ওর স্বামী হতে চলেছে বা কোন পরিবারে ওর বিয়ে হচ্ছে এইসব জানার কোনও আগ্রহ বোধ করেনি ও। উদয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় দীপিকার। বিয়ের পর উদয়ের সঙ্গে রায়পুর চলে আসে দীপিকা। কোম্পানির ফ্ল্যাট, ওখানেই থাকার ব্যবস্থা। ওর শ্বশুরবাড়ি ওর ফ্ল্যাটের থেকে বেশ খানিকটা দূরেই ছিল।

উদয় ছেলেটি খুবই ভালো। সামান্য গম্ভীর প্রকৃতির হলেও অত্যন্ত সহজ সরল। যে-কোনও মেয়েই ভাগ্য মনে করবে উদয়ের মতো স্বামী পেয়ে। নিজের স্ত্রী-র ভালোমন্দ সবকিছুর খেয়াল রাখত উদয়। এমনকী ফুলশয্যার রাতে দীপিকার মন ভালো নেই দেখে সামান্য মৗখিক ভদ্রতাটাকু সেরে দীপিকাকে একটু একা থাকার সুযোগ পর্যন্ত করে দিয়েছিল ও। নতুন পরিবেশে যাতে দীপিকা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে তার সমস্ত সুযোগ সুবিধাগুলিও নিজের উদ্যোগেই ব্যবস্থা করেছিল। ধীরে ধীরে শুভ্রর চিন্তা মন থেকে মুছে ফেলাই নিজের জন্য শ্রেয় মনে করল দীপিকা। নিজের নতুন সংসারে নতুন করে নিজের সুখ-শান্তি খুঁজে নিতে মনঃসংযোগ করল ও।

অফিসে প্রোমোশন পাওয়ার খুশিতে উদয় বাড়িতে একটা ছোট্ট পার্টির আয়োজন করল। আমন্ত্রিত অতিথিদের, মধ্যে সকলেই উদয়ের বন্ধুবান্ধব। পার্টিতে অতিথিদের বিশেষ করে উদয়ের অনুরোধে দীপিকাকে গানও গাইতে হল সকলের সামনে। সকলেই দীপিকার সুরেলা কণ্ঠের প্রশংসা করল।

অতিথিরা চলে যেতে উদয় এসে দীপিকার কাজে হাত লাগাল বাড়ি পরিষ্কার করতে। কাজ করতে করতেই বলল, ‘আমি জানতামই না যে আমার বউয়ের গানের গলা এত সুন্দর। তুমি গান শিখছ না কেন? তোমার মনও ভালো থাকবে আর শখও মেটানো হবে।’

শুভ্রর কথা মনে হল দীপিকার। গানের ক্লাসেই শুভ্রর সঙ্গে ওর আলাপ। ওদের দুজনের গলার দ্বৈতস্বরের মিলিত সুধা সকলকে মুগ্ধ করে দিত। একসঙ্গে ক্লাস করতে করতে কবে যে একে অপরের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ে তা আজ আর ঠিক করে মনে করতে পারে না দীপিকা। শুধু মনে পড়ে দুজনে মিলে উজ্জ্বল সংগীত জীবনের স্বপ্ন দেখত ওরা। কিন্ত ফেলে আসা ওই একটি দিনের ঘটনা জীবনের সব স্বপ্নকে তছনছ করে দিয়ে চলে গেছে আজ এই সত্যটাই সবচেয়ে বড়ো বাস্তব দীপিকার জীবনে। আজ এতদিন বাদে হঠাৎ উদয়ের মুখে গানের কথা ওঠাতে দীপিকা কোনও উত্তর দিতে পারল না।

উদয়-ই এদিক ওদিক খোঁজ করে শুভ্রকেই বেছে দিল দীপিকার নতুন মাস্টার হিসেবে। সত্য না জেনেই ওকে বাড়িতে নিয়ে এল স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করাতে, ‘দীপিকা, ইনি আজ থেকে তোমাকে গান শেখাবেন। এই অঞ্চলে শিল্পী হিসাবে উনি বেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছেন। ওনার নাম শুভ্র রায়।’

এদিকে দীপিকাও হঠাৎ শুভ্রকে সামনে দেখে বিস্ফারিত চোখে শুধু তাকিয়ে থাকে। ঠোঁট থেকে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে ওঠে। কথা বেরোয় না গলা দিয়ে। উদয় ওদিকে লক্ষ্যই করে না। দুজনের পরিচয় করিয়ে দিয়েই উদয় অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে।

‘তুমি এখানে কী করে? এক শহর থেকে অন্য শহরে আমার পিছু নিয়েছ নাকি?’

‘আরে না, না। ভুল বুঝছ তুমি। আমি তো এখানে এসেছিলাম কাজ করতে। আমার এক বন্ধু ওর অফিসে ফ্রিল্যান্স কিছু কাজের খোঁজ দিয়েছিল। সেই সুবাদেই এখানে এসে পড়ি। অফিসের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছি দীপু।

‘আমি এখন আর তোমার ‘দীপু নই। সেই অধিকার তুমি হারিয়েছ। আমি এখন বিবাহিত, উদয়ের বিবাহিত স্ত্রী।

নিয়তির খেলা বোঝে কার সাধ্য? শুভ্র আর দীপিকার হঠাৎ করে এইভাবে দেখা হওয়াটা নিয়তি ছাড়া আর কীবা হতে পারে? নিজের নিজের জীবন নিয়ে দু’জনে যেখানে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল সেখানে হঠাৎ এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা আবার দু’জনকে একই জায়গায় মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল।

‘দীপু প্লিজ, সরি ‘দীপিকা’। গান শেখাতে আসতে আমাকে না কোরো না কারণ শেখাবার জন্য যে টাকাটা পাব সেটাতে আমার খুব উপকার হবে। উদয় অতীত সম্পর্কে কিছু জানতে পারবে না আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, শুভ্রর গলায় আকুলতা ঝরে পড়ে।

শুভ্রর প্রয়োজন আছে বুঝে দীপিকা চাইলেও ‘না’ বলতে পারে না।

প্রায় তিনঘন্টা কেটে যায়, দুজনেই মেতে ওঠে গানের সাধনায়। পুরোনো দিনের স্মৃতি ফিরে আসে। সেই হাসি, ঠাট্টা তারই মাঝে সুরের মূর্ছনায় ডুবে যাওয়া।

পরের দিন শুভ্রকে উদাস দেখে দীপিকা নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না, ‘অতীত নিয়ে কেন এতটা ভেঙে পড়েছ শুভ্র? যা হওয়ার সেটা হয়েই গেছে। বরং ভবিষ্যৎ আমাদের যা দিতে চলেছে সেটাকেই দ্বিধাহীন হয়ে গ্রহণ করার চেষ্টা করো।’ শুভ্রর উদাসীনতা দীপিকার ভিতরটা কুরে কুরে খেতে শুরু করেছিল।

‘চোখের সামনে তোমাকে অন্যের হতে দেখে আমার যে কতটা কষ্ট হয় সেটা তুমি কী বুঝবে! তুমি আমার ছিলে আর এখন…’ বলতে বলতে শুভ্র দীপিকার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়া পর্যন্ত নারীকে কুমারীত্ব, বাঁচিয়ে রাখার শিক্ষা দেওয়া হয়। দীপিকাও নিজের ইচ্ছেতে না হলেও বিয়ের পর সেই সীমা লঙঘন করে নিয়েছিল কিন্তু আজ দীপিকার মনে হল যে-কাজ একদিন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওকে করতে হয়েছিল সেটা আজ নিজের খুশির জন্য করলে ক্ষতি কি? আর বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে কারওরই ব্যাপারটা জানতে পারার কথা নয়। তাছাড়া উদয় নিজের হাতেই শুভ্রকে বাড়িতে নিয়ে এসে একপ্রকার দীপিকার জিম্মায় সব ছেড়ে দিয়েছে। শুভ্র আর দীপিকার লোভাতুর মন এই লোভ সংবরণ করতে পারল না। প্রেমের জোয়ারে সব বাধা ভেঙে ফেলে দুজনে উদ্দাম প্রেমের খেলায় মত্ত হয়ে উঠল।

এই ঘটনার পর দীপিকা আবার সেই পুরোনো দীপিকা হয়ে উঠল। উদয়ের মনে হল গানের জগতে ফিরে যেতে পেরেই দীপিকার এই পরিবর্তন ঘটেছে।

‘আমাকেও এরকম একটা সোয়েটার বানিয়ে দিও কখনও’, দীপিকার হাতে নীল রঙের উলটা দেখে উদয় বলে উঠল, ‘ডিজাইনটাও খুব সুন্দর হচ্ছে।’

‘ঠিক আছে, পরেরটা তোমার জন্য বুনব। এটা কাকার ছেলের জন্য তৈরি করছি। আসলে পরের মাসে ওর জন্মদিন।’

‘তাহলে কয়েকদিনের জন্য বাপের বাড়ি ঘুরে এসো। বহুদিন হল যাওনি।’

‘না, না। আমি গেলে তোমার খাওয়া-দাওয়ার খুব অসুবিধা হবে আর তাছাড়া…’

‘আমি কি বাচ্চা নাকি যে এত চিন্তা করছ? বাপের বাড়ি কোন মেয়ে না যেতে চায়? তুমি কিছু চিন্তা কোরো না, আমি ঠিক কয়েকটা দিন চালিয়ে নিতে পারব’, উদয় জোর করাতে দীপিকা চুপ করে যায়।

‘এবার কী হবে? কী করে আমরা দ্যাখা করব? বাপের বাড়ি থেকে, তোমার সঙ্গে দ্যাখা করা অসম্ভব। কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে’, দুপুরে শুভ্র আসাতেও কিছুতেই দীপিকা গানে মন বসাতে পারে না।

‘চিন্তা কোরো না। আমিও তোমাকে না দেখে থাকতে পারব না। আমাকে ভাবতে দাও…’ শুভ্র একটা উপায় শীঘ্রই বার করে ফেলে। ‘এক কাজ করব। এই শহরেই দু-তিনদিনের জন্য হোটেলে একটা ঘর ভাড়া করে থেকে যাব। নিজের মোবাইল থেকে মাঝেমাঝেই তুমি উদয়কে ফোন করে কথা বলে নেবে। আমরা যদি হোটেল থেকে বাইরে না বেরোই তাহলে কেউ আমাদের দেখে ফেলারও ভয় থাকবে না’, দীপিকার শরীরে অাঁকিবুকি কাটতে কাটতে শুভ্র বলে।

ট্রেনের টিকিট হাতে ধরিয়ে উদয়, দীপিকাকে ট্রেনে তুলে দিল। পরের স্টেশনেই শুভ্র অপেক্ষা করছিল। ট্রেন থেকে নেমে দীপিকা শুভ্রর সঙ্গে হোটেল অভিমুখে রওনা দেয়। ঘর নেওয়াই ছিল। হঠাৎ-ই শুভ্রর সঙ্গে হোটেলের ঘরে যেতে গিয়ে দীপিকার মনে হল এই সম্পর্কটার শেষ কী? ও তো শুভ্রর রক্ষিতা নয় তাহলে কেন ওকে এত লুকিয়ে চুরিয়ে, সিসিটিভির ক্যামেরায় মুখ লুকিয়ে শুভ্রর সঙ্গে হোটেলের ঘরে ঢুকতে হচ্ছে?

‘শুভ্র, আগে যদি জানতাম হোটেলে উঠতে এতটা খারাপ লাগবে তাহলে আমি কিছুতেই তোমার সঙ্গে এখানে আসতাম না’, ঘরে ঢুকতে ঢুকতে দীপিকা বলে।

‘চিন্তা কী? এখন তো আমরা ঘরের ভিতরে এসে গিয়েছি। আর কথা ভালো লাগছে না। যার জন্য আমাদের এখানে আসা সেটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, দীপিকার মনে হয় কথাগুলো বলতে বলতে লোভে শুভ্রর চোখগুলো অস্বাভাবিক চকচক করে উঠল। যেন এটা ওদের ফুলশয্যার রাত।

‘দাঁড়াও, আগে উদয়কে ফোন করে নিই, যে আমি পৌঁছে গেছি।’

‘আরে আরে, কী করছ? তোমার বাপের বাড়ি তো কাল সকালে পৌঁছোবার কথা। ভুলে গেছ যে এখন তুমি ট্রেনে রয়েছ?’

‘শুভ্রর তির্যক হাসি দীপিকার ভালো লাগল না। একই ঘরে, লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেও দীপিকার যৗবন শুভ্রর মুক্ত আহ্বানকে কোনওভাবেই স্বীকার করতে পারল না। মাথাব্যথার মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে দীপিকা তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল।

সকালে ঘুম ভাঙতে দীপিকা ঘরেতেই চায়ের অর্ডার দিল। বেয়ারা এসে চা দিয়ে চলে গেল। চা খেয়ে দীপিকা উদয়কে ফোন করল। দীপিকাকে বলার সুযোগ না দিয়েই উদয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘উফ্ দীপিকা আমি চিন্তায় মরে যাচ্ছিলাম। তোমারও ফোন কিছুতেই লাগছিল না। চা-ব্রেকফাস্ট খেয়ে নিয়েছ? বুঝতে পারছি না, এই

ট্রেন-টা এত লেট রান করছে কেন? সাধারণত টাইমেই এটা পৌঁছোয়।’

ফোন ছেড়ে হাফ্ ছাড়ে দীপিকা। ভাগ্যিস উদয়কে বলে ফেলেনি ঠিকঠাক পৌঁছে গেছে বলে। ভগবানই বাঁচিয়েছেন। শুভ্রকে খুলে বলে ও।

শুভ্র স্ত্বান্না দেয়, ‘এত ঘাবড়িও না। বলোনি তো কিছু সুতরাং চিন্তা কোরো না। চলো নীচের রেস্তোরাঁ থেকে কিছু খেয়ে আসি। এইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকার জন্য দু’জনেরই ঘরের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসছিল।

দীপিকা সকালের জলখাবারে টোস্ট আর অমলেট বা পোচ খেয়েই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল উদয়ের সঙ্গে থেকে থেকে। এখানেও ওই একই খাবারের অর্ডার দিল দীপিকা। শুভ্র আলুর পরোটা আর দই আনিয়ে নিল নিজের জন্য।

‘এত অল্পে পেট ভরবে দীপু’, শুভ্র খেতে বসে দীপিকাকে জিজ্ঞেস করল।

‘এখন আমরা কেউ কলেজে পড়ি না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে খাওয়াদাওয়াটাও বদলানো খুব দরকার। উদয় সবসময় বলে…’ নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে দীপিকা চুপ করে যায়।

এটা কী হচ্ছে ওর… বারবার উদয়ের কথা মনে পড়ছে, ওর কথা বলে ফেলছে। উদয়ের নাম শুনে শুভ্রর মুখটা রক্তশূন্য হয়ে যায়। চুপচাপ দুজনে খেয়ে উপরে নিজেদের ঘরে ফিরে আসে ওরা।

সারাদিন টিভি দেখে কাটিয়ে দেয় দীপিকা। শুভ্র দুপুরে বেরিয়ে যায় নিজের একটা কাজ নিয়ে। দীপিকা একাই ঘরে দুপুরের লাঞ্চ আনিয়ে খেয়ে নেয়। সন্ধেবেলায় শুভ্র ফিরলে দীপিকা তৈরি হয়ে ওর সঙ্গে বাইরে একটু বেড়িয়ে আসে। সারাদিন বসে বসে বোর হয়ে উঠেছিল ও। রাত্রে ডিনার শেষে ঘরে ফিরে আসে। পোশাক বদলে বিছানায় শুয়ে পড়ে এসে। আশ্চর্য হয় দীপিকা, শুভ্রর কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার কোনও ইচ্ছাই জাগে না ওর মনে। বরং একটা অপরাধ বোধের ভাবনা মনের কোণে সমানে ছুরিকাঘাত করে মনকে রক্তাক্ত করতে থাকে।

শুভ্রকে এড়াতে পারে না দীপিকা। যন্ত্রচালিতের মতো শুভ্রর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে। নালিশ জানাতে ছাড়ে না শুভ্র, ‘আজ কী হয়েছে তোমার দীপু? এরকম মেশিনের মতো ব্যবহার করছ কেন?’

দীপিকার মুখে উত্তর জোগায় না। ওর নিজের মনই কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না। যেটা পাওয়ার জন্য ও এত উতলা হয়ে পড়েছিল আজ সেটা ওর হাতের নাগালে অথচ ও কেন দৗড়ে সেটা ধরার চেষ্টা করছে না, সেটা কিছুতেই বোধগম্য হয় না দীপিকার।

পরের দিন দীপিকা দু’বার উদয়কে ফোন করল। দ্বিতীয়বার যখন কথা হল, উদয়ের গলায় এমন কিছু ছিল যেটা দীপিকাকে চিন্তিত করে তুলল।

‘জানো শুভ্র, সকালে উদয়ের সঙ্গে যখন কথা বললাম তখন তো নর্মালই লাগল ওর গলা কিন্তু একটু আগে কেমন যেন ওকে চুপচাপ মনে হল। কী হতে পারে বলো তো?’

‘অফিসের কোনও টেনশন হতে পারে। তোমার যদি উদয়কে নিয়ে এত চিন্তা, তাহলে আমার সঙ্গে এসেছ কেন?’ বিদ্বেষ উগরে দেয় শুভ্র। যে উন্মুক্ত ত৫ যৗবনের স্পর্শ পেতে শুভ্র, দীপিকাকে সঙ্গে নিয়ে আসার এতটা সাহস দেখিয়েছিল সেটাই কেমন অপূর্ণ রয়ে গেল। শয্যসঙ্গিনীর শরীরের স্পর্শ অনুভব করতে পারলেও শুভ্র খুশি হতে পারল না কারণ সঙ্গিনীর শরীরে প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব লক্ষ্য করল শুভ্র। তার ওপর হোটেলের এতগুলো টাকা খরচা। পরের দিনই ওরা ফিরে আসবে ঠিক করে নিল।

‘উদয় জিজ্ঞেস করলে বলে দেব ওর জন্য মনখারাপ হচ্ছিল তাই তাড়াতাড়ি ফিরে আসা’। দীপিকার কথায় শুভ্র ওর চোখের দিকে সরাসরি তাকায়,  ‘এটাই সত্যি নয়তো দীপু?’

দীপিকা উত্তর দেয় না। ওর নত দৃষ্টি-ই ওর উত্তর দিয়ে দেয়। দীপিকাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে শুভ্র নিজের বাড়ি চলে যায়।

সন্ধেবেলায় বাড়ি ফিরে দীপিকাকে দেখে উদয় অবাক হয়ে যায়।

‘সারপ্রাইজ’, বলে উদয়ের গলা জড়িয়ে ধরে দীপিকা।

‘তোমার তো দু’দিন পর আসার কথা ছিল। হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?’ উদয়ের কথায় কোনও আবেগ ছিল না।

‘তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি খুশি হওনি। তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল, তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম’, খাবার টেবিলে দিতে দিতে দীপিকা উত্তর দিল। উদয় টেবিলে খেতে বসতেই দীপিকা বলল, ‘তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে শরীর ঠিক নেই নাকি?’

‘হ্যাঁ, একটু ক্লান্ত লাগছে। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লে হয়তো সকালে ঠিক হয়ে যাবে।’

পরের দিন সকালে উদয় অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে, শুভ্র এসে উপস্থিত হল। উদয় হঠাৎই জিজ্ঞেস করে বসল, ‘কী ব্যাপার শুভ্র, আজ এত তাড়তাড়ি চলে এলে? দীপিকাকে ছেড়ে আর থাকতে পারছ না? কতদিন আর চলবে তোমার এই গানের ক্লাস?’

উদয়ের কথা শুনে শুভ্র আর দীপিকা দু’জনেই মনে মনে শঙ্কিত হয়ে উঠল। বরাবর শুভ্রকে দেখে উদয় খুশিই হতো, গান নিয়ে নানারকম আলোচনা করত। দীপিকাকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য অনুরোধ করত। কিন্তু আজ সেসব কিছু না করেই উদয় অফিস বেরিয়ে গেল।

উদয় চলে যেতেই দীপিকা শুভ্রর দিকে তাকাল, ‘একটা কথা আমি বলতে চাই শুভ্র, আমার জীবনে তুমি আবার হঠাৎই ফিরে এসেছ। আগের মতোই আমাকে আনন্দে রাখবার চেষ্টা করছ যার জন্য হয়তো বিয়ের পরেও আমি প্রতীক্ষা করে থেকেছি। এই আনন্দ পাওয়ার লোভেই হয়তো ছুটে বেড়িয়েছি। এই লোভটাকেই কখনও দমন করার চেষ্টা করিনি। তুমিই আমার সেই শূন্য ঝুলি ভরিয়ে তোলার চেষ্টা করে গেছ। আজ প্রথম আমি বুঝতে পারছি, আমার এই জীবনটা নিয়ে আমি কী করতে চাই। মরীচিকার পিছনে ছুটে না বেড়িয়ে শক্ত মাটিতে পা রেখে সংসারধর্ম পালন করতে চাই আমি।

শুভ্র আমি বিবাহিতা। এই কথাটা আমি বোধহয় ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রেমিকের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে সংসার করার স্বপ্ন দেখছিলাম। তুমি যদি আমাকে আমার এই সংসারটার থেকে দূরে একটা হোটেলের ঘরে না নিয়ে গিয়ে তুলতে, তাহলে আমি কোনওদিনই বুঝতে পারতাম না যে আজ এই সংসারটাই আমার রক্তের মধ্যে, আমার প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে আর আমি টেরও পাইনি। এই বাড়িতে তুমি যখন আসা আরম্ভ করেছিলে তখন এই বাড়িটাকে ছেড়ে যাওয়ার ভয় আমার মনের মধ্যে ঢোকেনি। কিন্তু একবার এই বাড়ির বাইরে পা রাখতেই বুঝেছি, এই বাড়ির পরিচয় ছাড়া আমার আজ আর কোনও অস্তিত্বই নেই।

উদয় কী দোষ করেছে? বিয়ের পর থেকে ভালোবাসায়, যত্নে ও কোনও ত্রুটি রাখেনি। আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে, পরিবারে স্থান করে দিয়েছে। নিজের স্বার্থের জন্য আমি ওর সম্মান, ওর জীবন নষ্ট করতে পারব না। তুমি চলে যাও শুভ্র। আমাদের আর দেখা না হওয়াটাই আমাদের দুজনের জনেই মঙ্গল’, দীপিকা চুপ করে।

‘আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে আমি কখনওই তোমাকে আমার থেকে আলাদা হতে দিতাম না দীপু… কিন্তু আজ আমার জোর করার মতো কিছুই নেই শুধুমাত্র ভালোবাসাটুকু ছাড়া। সুতরাং তোমার ইচ্ছেটাকেই সম্মান জানাতে আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। চেষ্টা করব আর যেন আমাদের কোনওদিন দেখা না হয়…’ বলে শুভ্র বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এল।

সারাটা দিন দীপিকা বাড়ির ভিতর এটা-ওটা করাতে নিজেকে ব্যস্ত রাখল। মনটা অস্থির হয়ে উঠছিল বারবার। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিল না এতবড়ো একটা ভুল ও কী করে করতে পারল। অনেক চিন্তার পর ঠিক করল ও উদয়কে সবকিছু খুলে বলবে কারণ মনের মধ্যে এত বড়ো একটা বোঝা বয়ে বেড়িয়ে পুরো জীবন কাটানো ওর পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়।

সন্ধেবেলায় উদয় বাড়ি ফিরতে উদয়কে জলখাবার দিয়ে দীপিকা সামনে এসে বসল। ধীর শান্তস্বরে সমস্ত কিছু খুলে বলল ওকে। বিয়ের আগে শুভ্রর সঙ্গে পরিচয়, তারপর আবার গান শেখার বাহানায় ওর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা, হোটেলে একসঙ্গে সময় কাটানো কিছুই লুকোনোর চেষ্টা করল না দীপিকা। উদয় একটা কথাও বলল না। ওকে চুপ থাকতে দেখে দীপিকাই আবার বলল, ‘আমাকে ক্ষমা করে দাও উদয়। আমি অন্যায় করে ফেলেছি। কথা দিচ্ছি এবার থেকে তুমি যা বলবে আমি তাই করব।’

উদয় চুপচাপ খানিকক্ষণ বসে থেকে উঠে চলে গেল। রাত্তিরটা বসার ঘরে সোফায় শুয়েই কাটিয়ে দিল। দীপিকা নিজের ঘরে শুতে চলে গেল। উদয়ের চোখের সামনে দু’দিন আগের ঘটনাগুলো ভেসে বেড়াতে লাগল। অফিসের কাজে পাশের শহরে গিয়েছিল। ফেরার পথে দীপিকার জন্য মিষ্টি কিনতে বাজারে গিয়ে দেখে শুভ্রর হাত ধরে দীপিকা একটা দোকানে কোনও জিনিস দেখছে। শুভ্রর গায়ে ওর স্ত্রীরই হাতে বোনা একটি সোয়েটার।

এত বড়ো বিশ্বাসঘাতকতা উদয় মেনে নিতে পারেনি। মনের মধ্যে রাগ আর প্রতিশোধস্পৃহা নিয়ে বাড়ি চলে আসে। তখন থেকেই কীভাবে দীপিকাকে শাস্তি দেওয়া যায় সেই চিন্তাতেই ব্যস্ত হয়ে যায় ওর মন। কিন্তু আজ দীপিকা সব কিছু স্বীকার করে নিতে উদয়ের মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। ও প্রতীক্ষাতেই ছিল যে দীপিকা নিজে থেকে ওই অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলে কিনা। আজ ওর আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে চোখের ভাষায় প্রায়শ্চিত্ত করার সিদ্ধান্ত দেখতে পেয়ে, উদয়ের মন ধীরে ধীরে শান্ত হতে থাকে।

সারাটা রাত দোনামনায় কাটিয়ে দেয় উদয় যে, এই অন্যায়ের জন্য শাস্তি কি প্রাপ্য দীপিকার নাকি প্রায়শ্চিত্তের আগুনে পুড়ে শুদ্ধ হয়ে ওঠা দীপিকা ক্ষমার যোগ্য? কিন্তু এত কিছু হওয়ার পর ও কি সত্যিই পারবে দীপিকাকে নতুন করে আবার বিশ্বাস করতে?

সকালে উঠে রোজকার মতোই দীপিকা বাড়ির কাজে হাত লাগাল। উদয় চা আর খবরের কাগজ নিয়ে বসল। হাত মুছতে মুছতে দীপিকাও এসে পাশে বসল, ‘কিছু ভাবলে? তুমি যা ঠিক করবে সেটাই আমি মাথা পেতে নেব।’

‘দীপিকা এটা আমি আগেই জানতাম। বাপের বাড়ি যাওয়ার নাম করে শুভ্রর সঙ্গে একসঙ্গে থাকাটা। আমি তোমাদের দু’জনকে একসঙ্গে বাজারে দেখে ফেলেছিলাম। এছাড়া তোমার বাপের বাড়িতে ফোন করেও জেনে ফেলেছিলাম তুমি ওখানে যাওনি। আমি শুধু তোমার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষা করছিলাম’, উদয় লক্ষ্য করে দীপিকার চোখ জলে ভরে উঠেছে।

‘তোমাকে যদি আমি ক্ষমা না করতে পারি তাহলে সেই আগুনে আমিও সারাজীবন জ্বলে মরব। কিন্তু ক্ষমা করা এত সহজ নয়। আমি জানি না আদৗ কোনওদিন তোমাকে বিশ্বাস করতে পারব কিনা। কিন্তু নিজের সংসারটা আমি এভাবে ভেঙে দিতে চাই না। সারা রাত ভেবেছি। তোমার চোখে যে প্রায়শ্চিত্তের আগুন দেখতে পাচ্ছি তাতে করে তোমার পাপ অনেকটাই কম হয়ে গেছে সুতরাং তোমাকে আর একটা সুযোগ আমি দিতে চাই। তুমি কীভাবে এটাকে কাজে লাগাবে সেটা সম্পূর্ণই তোমার ব্যাপার’, বলে উদয় থামে।

সত্যিই তো, বর্ষায় কর্দমাক্ত বাড়ির উঠোন কি আমরা ভেঙে ফেলতে উদ্যত হই? না। বরং জায়গাটা পরিষ্কার করে ধুয়েমুছে ঝকঝকে করে তুলি। বর্ষায় কাদা এমনিই হয় সুতরাং এতে বাড়ির উঠোনের দোষ কোথায়? শুধু প্রয়োজন হচ্ছে একটু বেশি খেয়াল রাখা যাতে উঠোনে কাদা জমতে না পারে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...