আমি ২৮ বছর বয়সি টিভি সিরিয়ালের প্রোডিউসার। চার বছর আগে আমার থেকে দুই বছরের ছোটো একটি ছেলেকে ভালোবেসে ফেলি এবং শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু সেই সময় আমার প্রেমিকের উপর অনেকরকম দায়িত্ব ছিল ফলে আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ও আমাকে বলেছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ও দায়িত্বগুলো মিটিয়ে আমাকে বিয়ে করবে। আমি ওর কথা বিশ্বাস করেছিলাম এবং আমরা স্বামী-স্ত্রীর মতো একসাথে লিভ ইন শুরু করি এই শহরে যেখানে আমরা কাজের সূত্রে থাকি, এখানে আমাদের দু’জনেরই পরিবারের কেউ থাকে না। সুতরাং আমাদের এই সম্পর্কের কথা বাড়িতে কেউই জানত না। আমরা বন্ধুবান্ধব এমনকী সহকর্মীদেরও এ ব্যাপারে কিছু জানাইনি কারণ আমরা ধুমধাম করে যখন বিয়ে করব তখনই সকলকে জানাব ঠিক করেছিলাম।
আমরা চার বছর এই সম্পর্ক মেনটেন করেছিলাম। ওকে বিয়ের জন্য আমি কোনও দিনই জোর দিইনি কারণ অমি জানতাম ও কেরিয়ার নিয়ে খুব টেনশনে আছে। ও যতটা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আশা করেছিল ততটা সফল হতে পারেনি। এদিকে আমার পেশায় আমি এতটাই সাফল্য পেয়েছিলাম যে আর্থিক সমস্যা আমাদের একেবারেই ছিল না।
এই চার বছরে আমি তিনবার প্রেগন্যান্ট হই এবং আমাকে অ্যাবর্শান করাতে হয়। আমার ডাক্তার আমাকে সাবধান করেন যে আবার এই ভুল করলে আমি আর কোনও দিন আমার শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারব না।
দু’সপ্তাহ আগে আমার বয়ফ্রেন্ড হঠাৎ-ই জানায় ও আমাকে ছেড়ে, এই ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যাচ্ছে বাড়িতে, কারণ ওর বাবা তাঁর কোনও বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক করেছে। ওর পক্ষে মা-বাবার অবাধ্য হওয়া নাকি সম্ভব নয়। আমি ওর কথায় এতটাই অবাক এবং শক্ড হয়েছি যে ও জিনিসপত্র গুছিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমি একটা শব্দও মুখ থেকে বার করতে পারিনি। বাড়ির ভাড়া, পেনডিং সমস্ত বিল আমার ঘাড়ে চাপিয়ে ও পালিয়ে গেছে।
সেইদিন আমার বাবাও হঠাৎই আমার ফ্ল্যাটে এসে উপস্থিত হন এবং সত্যিটা জেনে ফেলেন। আমিও দু-তিনজন ভালো বন্ধুর কাছে ভেঙে পড়ি এবং চার বছরে কী কী ঘটেছে সব খুলে বলি। ওরা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেছে যে এতদিন ধরে এই ব্যাপারাটা কীভাবে আমি কারও কাছে প্রকাশ হতে দিইনি। ওরা পরামর্শ দিচ্ছে যে কোর্টে গিয়ে ছেলেটির বিরুদ্ধে কেস ফাইল করতে তাহলে ছেলেটি বাধ্য হবে আমাকে বিয়ে করতে। আমার কি এটাই করা উচিত?
আপনি অবশ্যই আদালতের সাহায্য নিতে পারেন। একজন ভালো আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন যিনি আগেও এই ধরনের কেস হ্যান্ডল করেছেন। উনিই আপনাকে বলে দেবেন কেস করার ভালো এবং খারাপ দিকগুলো।
লিগাল দিক ছাড়াও আরও কয়েকটা বিষয়ে আপনার ভাবা উচিত যে আইনের সাহায্য নিলে কতটা এফেক্ট আপনার উপর পড়তে পারে। আপনার বাবা পুরো ব্যাপারটা জেনে ফেলেছেন এবং সম্ভবত আপনার মা-কেও জানিয়ে থাকবেন। আপনার পুরো পরিবারে ব্যাপারটা রাষ্ট্র হয়ে গেলে আপনার সম্মান তো ক্ষুণ্ণ হবেই এরপর কেসটা আদালত অবধি পৌঁছোলে আপনার দিকে আঙুল উঠতে দেরি লাগবে না।
কেস আদালতে পৌঁছোলে আপনার ‘এক্স’-এর প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটাও ভাবার বিষয়। এমনিতে আপনাকে ছেড়ে যেতে ছেলেটি এক মুহূর্তও ভাবেনি। কিন্তু কেস শুরু হলে ওর ফ্যামিলি এবং বন্ধুদের সামনে ওর মুখোশ খসে পড়বে এবং বিয়ের সম্বন্ধটাও ভেঙে যাওয়ারও চান্স রয়েছে। এতে ছেলেটি রেগে গিয়ে আপনার আরও ক্ষতি করার চেষ্টা করবে এমনকী আপনার কর্মক্ষেত্রের সুনাম কলঙ্কিত করতেও পিছু হটবে না। আপনার সব কথার বিরোধিতা করবে, কোর্টে দাঁড়িয়ে আপনার বলা সত্যগুলো, মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। আপনাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করে দিতে পারে। সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে পারে যে ও আপনার কাছে কোনও প্রমিস করেছিল বলে অথবা এমনও বলতে পারে যে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আগেই ও আপনাকে সাবধান করে দিয়েছিল যে এইটা একটা ক্যাজুয়াল রিলেশনশিপ। এই ক্ষেত্রে কোর্ট এবং ফ্যামিলির সামনে আপনাকে হিউমিলিয়েট্ হতে হবে। ফেলে আসা চারটে বছর আপনি কিছুতেই ফিরে পেতে পারবেন না। ম্যাক্সিমাম কোর্ট ছেলেটিকে আদেশ দিতে পারে, কমপেনসেশন হিসেবে কিছু টাকা আপনাকে দিয়ে দিতে। সত্যি করে কি এইরকম একটা মেরুদণ্ডহীন ছেলেকে আপনি বিয়ে করতে আগ্রহী? বিয়ে হলেও সারজীবন আপনি ওকে কীভাবে বিশ্বাস করবেন! অপরদিকে কেস করলে প্রতারক ছেলেটিকে একটা শিক্ষা দেওয়া হবে, এটাই একমাত্র আপনার সান্ত্বনা।
সুতরাং কোনও কিছু করার আগে সব দিকগুলো ভালো করে ভেবে দেখবেন এবং তারপরই ডিসিশন নেবেন।