১৯৮৪ সালের এই ডিসেম্বর মাসের গোড়ার দিকেই ঘটেছিল ভয়াবহ সেই ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা৷ কীটনাশক কারখানায় বিস্ফোরণের জেরে কয়েক সেকেন্ড –এ প্রায় ১৪০০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়ে ছিলেন৷ ক্রমশ মৃতের তালিকা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৫০০–এ৷আরও কয়েক বছরে সেটা হয় ১৬০০০৷ এই ঘটনার করাল গ্রাস থেকে আজও সম্পূর্ণ মুক্ত নয়, কারখানার নিকটবর্তী গ্রামগুলির মানুষ৷ বিকলাঙ্গ শিশু আজও জন্মায় সেখানে বিষাক্ত গ্যাসের পার্শ্বপ্রতিক্রয়া হিসাবে৷ সেদিনের দুর্ঘটনার ভয়াবহতার ছবি, বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরেছিলেন বহু সমাদৃত আলোকচিত্রী রঘু রাই৷ আজ তাঁর ৭৮ তম জম্মদিনে গৃহশোভার আর্কাইভ থেকে প্রকাশ করা হল একটি সাক্ষাৎকার৷
প্রায় ছ’ফুট লম্বা, এখনও এতটুকু ঝুঁকে পড়েন না কথা বলার সময়ে, কথা বলেন সোজা চোখের দিকে তাকিয়ে। বেশি প্রশ্ন করা চলবে না, এই শর্তে রাজি হলেন দু-এক কথা বলতে। কলকাতায় এসেছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ফোটোগ্রাফি ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করতে। ভারতীয় জাদুঘরের একটি গ্যালারিতে ভিড়ে ঠাসা গুণমুগ্ধদের সামনে যখন ফোটোগ্রাফি নিয়ে কথা বলছিলেন, মনে হচ্ছিল তাঁর কথা শোনা যায় আরও অনন্ত সময়। ইনিই সেই মানুষ যিনি একদা দেখতে শিখিয়েছিলেন এক অন্য ভারতবর্ষকে। ছিন্নমূল মানুষের মিছিলের সেই কষ্টক্লিন্ন চেহারা থেকে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির সেই মৃতশিশুর মুখ– চূড়ান্ত বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল আপামর পৃথিবীকে।
খালি চোখে দেখা আর ক্যামেরার চোখ দিয়ে দেখার মধ্যে কী তফাত অনুভব করেন?
খালি চোখে দেখা মানে ইউ সি দ্য ফিজিক্যাল সিচুয়েশন। আর আমি যখন ক্যামেরার চোখ দিয়ে দেখি আমি আমার ভেতরের ইমোশন, এনার্জি নিয়ে দেখি। সেটাকে বলা যায় আ ভিশন ইন টোট্যালিটি। এটা একটা ইন্টার্যাকশন, যেটা অনুভব করি ভেতর থেকে।
আসলে ফোটোগ্রাফি এক ধরনের মেডিটেশনের মতো। ইউ কানেক্ট উইথ থিংস অ্যারাউন্ড টেকিং পিকচারস, অ্যান্ড দেন দ্য মেডিটেটিভ মোমেন্ট হ্যাপেন্স। খুব সহজে একটা ছবি হয় না। তার জন্য নিজেকে মেন্টালি, ফিজিকালি, স্পিরিচুয়ালি প্রিপেয়ার করতে হয়।
ফোটো জার্নালিজমের সঙ্গে ক্রিয়েটিভিটির যোগ কতখানি?
আমি যখন স্টেটস্ম্যানে সবে কাজ শুরু করেছি, তখন আমার মনে হতো, এত নাটকীয়তা, এমন চূড়ান্ত ড্রামাটিক অ্যাম্বিয়েন্স মানুয়ের দৈনন্দিনে ছড়িয়ে আছে, এটাই ফ্রেমে ধরা দরকার। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার মতো। এই ছোটো ছোটো বাস্তব দৃশ্য একের পর এক সাজিয়ে তৈরি হয়েছিল তাঁর ছবি। সেগুলো সত্যের থেকে আলাদা নয়। বাস্তবধর্মী। সেন্সিটিভ। সেন্সিটিভিটি থাকলে, ক্রিয়েটিভিটির ছায়া পড়ে ফোটো জার্নালিজম-এর ক্ষেত্রেও।
এই যে এখন ডিজিটাল ক্যামেরা হাতে হাতে ঘুরছে, এতে কি সত্যি ফোটোগ্রাফির ক্ষেত্রটা ঋদ্ধ হচ্ছে?
এটাই খুব দুঃখজনক মনে হয় যে, ক্যামেরা যতটা সুলভ হয়েছে, সেই মানের ছবি কিন্তু আমরা পাচ্ছি না। সবই যেন ওপর ওপর দেখা। ইন ডেপথ্ ভিশনটা মিসিং।
কনসেপ্ট ফোটোগ্রাফির ব্যাপারে কী বলবেন?
জানি না, আমরা তো ঘন্টার পর ঘন্টা ক্যামেরা তাক করে বসে থাকতাম, ফর দ্যাট ডিভাইন মোমেন্ট টু হ্যাপেন। দেখুন প্রকৃতিতে যা আছে তা এমনিতেই সুন্দর। তাতে আপনার কন্ট্রিবিউশন কী? কনসেপ্ট ভেবে আপনি হয়তো ছবিতে একটা ড্রামা তৈরি করতে পারেন, কিন্তু এতে স্পনটেনিটি কোথায়!
নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
এই প্রজন্ম এখন ইন্টারনেটের সুবাদে প্রচুর ছবি দেখতে পায়। দেশবিদেশের নানা ফোটোগ্রাফারের তোলা ছবি। সে সব ছবি দেখার সুফল যেমন আছে, কুফলও আছে। আর কুফল হল সেগুলো মাথার হার্ড ডিস্ক-এ থেকে যায়। ফলে ছবি তোলার সময় তারা কনশিয়াসলি বা আনকনশিয়াসলি সেগুলো রিপিট করতে থাকে। তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলব, যে আপনার মাথার মধ্যে জায়গা এইটুকু, কিন্তু প্রকৃতি অনন্ত। সীমাহীন। তাই নিজেকে শুধু ওইটুকুতে সীমাবদ্ধ রাখবেন না যা আপনার ব্রেন-এ স্টোরড হয়ে আছে। চারিয়ে দিন। দৃষ্টি প্রসারিত করুন। ছবি আপনিই হবে।