অভিভাবকের দায়িত্ব অনেক। সন্তানকে সুষ্ঠু ভাবে মানুষ করতে হলে সবথেকে প্রথম নিজের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে। নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে পারলেই আপনি ভালো অভিভাবক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন। কী ভাবে ভালো অভিভাবক হওয়ার দক্ষতা অর্জন করবেন, জেনে নেওয়া যাক।

 

কী কী গুণ থাকতে হবে ভালো অভিভাবক হতে গেলে

  • এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, যেটা কিনা সন্তানের জন্য সব থেকে ভালো
  • নিখুঁত হওয়ার দরকার নেই কারণ কেউই নিখুঁত হয় না
  • সন্তানও পারফেক্ট নয় এটা মাথায় রাখতে হবে। সন্তানের কাছে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করবেন না
  • সাকসেশফুল পেরেন্টিং মানে পরিপূর্ণতা অর্জন করা নয়
  • আবার এটাও ভেবে বসা ঠিক নয় যে, লক্ষ্যে পেঁছোতে কোনও চেষ্টাই করব না
  • নিজের চরিত্রের উচ্চতার মান আগে নির্ধারণ করুন তারপর সন্তানের। সন্তানের কাছে রোল মডেল হয়ে ওঠার চেষ্টা করা উচিত।

 

কীভাবে বাড়াবেন ভালো অভিভাবক হয়ে ওঠার দক্ষতা

ভালো দৃষ্টান্ত হওয়ার চেষ্টা করুন : আপনি সন্তানকে যেভাবে বড়ো করতে চান, নিজের মধ্যে দেখুন সেই গুণ আপনার আছে কিনা। যেমন বাচ্চাকে সম্মান করুন, তাদের সামনে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করুন এবং ব্যবহারেও যেন নেগেটিভিটি প্রকাশ না পায়। বাচ্চার ইমোশনের প্রতি সহানুভতিশীল হন। দেখবেন আপনার সন্তানও আপনার দেখানো পথই বেছে নেবে।

বাচ্চাকে ভালোবাসুন এবং অ্যাকশনের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করুন : ভালোবাসা মানে জিনিসপত্রে ভরিয়ে দেওয়া, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া, প্রত্যাশা কম করা বা অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়া নয়। আসল ভালোবাসার জায়গায় যখন এগুলো বেশি প্রাধান্য পায়, তখনই বাচ্চা জেদি হতে আরম্ভ করে। ভালোবাসার সরল অর্থ হল, বাচ্চাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরুন, তাদের সঙ্গে সময় কাটান, মন দিয়ে তাদের বক্তব্য শুনুন।

এগুলি বাচ্চার মধ্যে ভালো হরমোন যেমন, অক্সিটোসিন বেশি পরিমাণে তৈরি হতে সাহায্য করবে। এতে বাচ্চার মন শান্ত হবে, মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হবে না। ইমোশনাল ওয়ার্মথ বাড়ার ফলে বাচ্চার সঙ্গে বড়োদের সম্পর্ক আরও বেশি মজবুত হবে।

সন্তানের প্রতি সদয় এবং দৃঢ় মানসিকতা রাখুন : ইতিবাচক এবং নেতিবাচক এই দুই ধরনেরই ঘটনাক্রম তুলে ধরুন বাচ্চার কাছে। এই দুটো দিকের সঙ্গেই জীবনে তাদের মুখোমুখি হতে হবে। সুতরাং ভালো আর খারাপ দুটোই প্রথম থেকে শেখানো ও বোঝানো দরকার।

ডিসিপ্লিনের ক্ষেত্রে নিজেকে পজিটিভ রাখাটা একটু শক্ত হয়ে পড়ে ঠিকই। কিন্তু পজিটিভ ডিসিপ্লিন প্র‌্যাকটিস করাটা দরকার। কথায় কথায় বাচ্চাকে শাস্তি দেওয়াটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে পড়ে না। বাচ্চার জন্য লিমিট সেট করে দিন এবং ব্যবহারে সামঞ্জস্যতা রাখুন। নিয়মে বাচ্চাকে বাঁধার সময় অবশ্যই সদয় থাকুন কিন্তু চরিত্রের দৃঢ়তা হারাবেন না।

সবদিক দিয়ে বাচ্চাকে সুরক্ষা দিন : বাচ্চাকে বুঝতে দিন আপনি সর্বদা ওর পাশে আছেন। যেসব বাচ্চার অভিভাবকেরা সবসময় বাচ্চার প্রতি মনোযোগ দেন, তাদের বাচ্চার মধ্যে ইমোশনাল ডেভেলপমেন্ট, সোশ্যাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এবং মানসিক ভারসাম্যতা অনেক বেশি দেখা যায়।

লক্ষ্য স্থির রাখুন

অভিভাবক হিসেবে সকলেরই লক্ষ্য থাকে সন্তান যাতে প্রতিটা ক্ষেত্রে ভালো পারফর্ম করে। স্কুলে ভালো করা, গঠনমূলক কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি, আত্মনির্ভর এবং প্রযোজনে দাযিত্ব নেওয়ার ক্ষমতা থাকা, সবাইকে সম্মান দেওয়ার মানসিকতা, যত্নশীল এবং দয়ার মনোবৃত্তি থাকা জরুরি। সে যেন সুখী, হেলদি থেকে জীবনে সফল এবং পরিপূর্ণ হতে পারে। এই লক্ষ্যে যাতে পেঁছোতে পারেন, তার জন্য সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন।

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...