হোয়াট্সঅ্যাপ, টুইটার এবং ফেসবুকের মাধ্যমে এখন আবিশ্বের সরকার এবং সমাজের ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য যখন থেকে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা-কে বিক্রি করে দেওয়ার খবর সামনে এসেছে, তখন থেকে ডিজিটাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল খবর প্রশ্নের মুখে। ‘গুগল-এর সুন্দর পিচাই আমেরিকান সংসদকে জানিয়েছিলেন, জি-মেল অ্যাকাউন্ট-এ পাঠানো সমস্ত তথ্য চাইলে পড়তে পারে ‘গুগল’।
আসলে, ডিজিটাল নির্ভরতা সারা পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ডিজিটাল দুনিয়া আজ প্রায় পরমাণু বোমার মতোই বিস্ফোরক। পরমাণু বোমা নিষ্ক্রিয় করার যত-না উদাহরণ সামনে এসেছে, এই বোমা পরীক্ষার ফলে নির্গত রেডিয়েশন-এর কুপ্রভাব বেশি ছড়িয়েছে। ডিজিটাল দুনিয়ার বিষয়টি অবশ্য একটু অন্যরকম। প্রথমে এর লাভজনক দিকটি সামনে এলেও, পরে এর ক্ষতিকারক দিকটিই প্রকট হয়েছে। বন্ধু কিংবা প্রিয়জনকে যেমন দ্রুত তথ্য সরবরাহ করা যায় সহজে– ঠিক তেমনই এই ডিজিটাল মাধ্যমে খারাপ কিংবা ভুল কিছুও ছড়িয়ে দেওয়া যায় মুহূর্তের মধ্যে।
তাই সর্বত্র ফেক মেসেজ-এর ছড়াছড়ি। স্ক্রীন-এর পিছনে কে লুকিয়ে রয়েছে, এ আজ বুঝে ওঠা দুরূহ। আর ঠিক এই কারণে, কোটি কোটি মানুষকে যেমন বোকা বানানো হচ্ছে, ঠিক তেমনই, লক্ষ লক্ষ মানুষকে লোটার পথও সহজ হয়েছে। সত্যতা যাচাই না করেই এখন অনেকে ফেসবুক কিংবা হোয়াট্সঅ্যাপকে মাধ্যম করে প্রেম করছে। যে-বিষয়টি প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা ছিল, না-জানি সেই একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়টি এখন কতটা ছড়িয়ে পড়ছে! অবশ্য এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আজ সরকারের জন্য অনেকটাই ফায়দা লুঠছে। বিরাধীদের মেল, মেসেজ, কথাবার্তা সবকিছুই চাইলে জেনে নিতে পারছে সহজেই।
মোবাইল ফোন-এ কথা বলাটাও এখন সুরক্ষিত নয়। কারণ, কথোপকথন রেকর্ড করা হতে পারে। শুধু কে কাকে ফোন করল তা-ই নয়, কতক্ষণ, কী বললেন, তার পুরোটাই অন্যত্র সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বিরোধীদের সমস্ত গতিবিধি, সরকার চাইলে জেনে নিতে পারছে। তাই, ব্যক্তি-স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে আজকের ডিজিটাল দুনিয়ার মাধ্যমে। যতই আপনি গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা করুন না কেন, আপনি সরকারি নজরদারির আওতাতেই আছেন সর্বদা।