বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য উপভোগ করতে বছরজুড়েই পর্যটকদের আসা-যাওয়া থাকে। তবে, শীতের মরশুমে পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় ডেস্টিনেশন হয়ে ওঠে সুন্দরবন। আমরা এখানে বলছি এর উন্তরগত দুটি দ্বীপের কথা।
সুন্দরী, হেতাল, গরান, কেওড়া, গর্জন, বাইন আরও কত নাম না-জানা গাছে ঘেরা জঙ্গল। অরণ্যের জমাটবাঁধা অন্ধকারে কোথাও লুকিয়ে আছে হিংস্র শ্বাপদ, রয্যাল বেঙ্গল টাইগার। জঙ্গুলে পরিবেশে রাত কাটানোর এ-এক আদর্শ সময়। রোমাঞ্চ যাদের পছন্দ তারা বেছে নিতে পারেন কলস দ্বীপকে। পৃথিবীর বৃহত্তম নদী ব-দ্বীপ সুন্দরবনে, রয়েছে ছোটো বড়ো মিলিয়ে প্রায় ১০২টি দ্বীপ। তার মধ্যে একটা এই কলস দ্বীপ অন্যটির নাম পাখিরালয়।। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মধ্যে সরু সরু খাঁড়িপথের রসহ্যজনক বিস্তার। ভযংকর সুন্দর বোধহয় একেই বলে। আর সেই জন্য পৃথিবীর কাছে সুন্দরবন আজও এক বিস্ময়কর ভ্রমণের নাম।
কলস দ্বীপ : ক্ষীণকায়া, স্ফীতধারা বহু নদীর সমাহার সুন্দরবনে। যেমন ঠাকুরান নদী। এই নদী পেরিয়ে রামগঙ্গা হয়ে যাওয়া যায় স্বনচি বিটের খুলিভাসনি। এই ব্লকেরই অন্তর্গত কলস দ্বীপ।
কোর জঙ্গলের মধ্যে পড়ে দ্বীপটি, তাই একই সঙ্গে ভযংকর এবং আকষর্ণীয়। চারপাশে নিঝুম জঙ্গল। পাখপাখালির শব্দে ভোর হয়। খাঁড়ির পাশের কাদামাটিতে দেখতে পারেন দক্ষিণরায়ের টাটকা পায়ে ছাপ। বোটে চেপে জঙ্গল ঘুরতে ঘুরতে, ছোটো সমুদ্রতটেও যেতে পারেন। আর কোথাও না গেলেও কটেজের হাতায় বসেই কাটিয়ে দিতে পারেন দুটো দিন।
কীভাবে যাবেন : ধর্মতলা থেকে বাসে রামগঙ্গা পৌঁছোন। ওখান থেকে লঞ্চ বা নৌকায় পেঁছোনো যায় কলসদ্বীপে।
কোথায় থাকবেন : বনবিভাগের ক্যাম্প-এ থাকতে পারেন। বুকিংয়ে জন্য যোগাযোগ– ডিএফও, দঃ ২৪ পরগণা বনবিভাগ, নব-প্রশাসনিক ভবন, বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য সরণি, আলিপুর, কলকাতা-২৭। ফোন ০৩৩-২৪৭৯৯৩২।
পাখিরালয় : সুন্দরবনের সবুজ রহস্য আর দ্বীপের মধ্যে থাকার রোমাঞ্চ যদি অনুভব করতে চান, তাহলে আপনার গন্তব্য হোক পাখিরালয়। সুন্দরবনের গোসাবার অন্তর্গত এই দ্বীপের কোনও তুলনা নেই। একসময় ঘন জঙ্গলের ভয়ে মানুষ পা রাখতে দ্বিধা করত। সময়ে সঙ্গে সঙ্গে গাছ কেটে বসতি গড়ে উঠেছে। কিন্তু চারপাশে গা ছমছমে সুন্দরবনের পরিবেশ এখনও বেশ রোমাঞ্চ জাগায়। ক্কচিত্ দক্ষিণরায় সাঁতরে চলে আসে এই দ্বীপে গরু-বাছুর শিকার করতে।
সুন্দরবনের অসংখ্য নদী-নালার মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্য হল গোমর নদী। পাখিরালয়ে থাকা মানে এই নদী আপনার সর্বক্ষণের সঙ্গী। নদীর ওপারে সজনেখালি। ওয়াচটাওয়ারে বসে জন্তুজানোয়ার চোখে পড়তে পারে। হরিণ, বন্য শুয়োর, বাঁদর বা সাপ প্রায়ই বেরিয়ে আসে জঙ্গলের সবুজ ভেদ করে। কপাল খুব ভালো হলে বাঘেরও দেখা মিলতে পারে।
সজনেখালিতে রয়েছে একটি প্রদর্শনীকেন্দ্র। সুন্দরবন সম্পর্কিত বহু তথ্য সমৃদ্ধ এই প্রদর্শনী দেখে নিতে পারেন। গোসাবা দ্বীপে রয়েে হ্যামিলটন সাহেবের বাংলো। তাঁকেই এই অঞ্চলের উন্নয়নের পুরোধা বলা হয়। বাংলোটিতে একসময় পা দিয়েিলেন স্বযং রবীন্দ্রনাথও। একটা সপ্তাহান্তের ছুটি কাটানোর জন্য শীতকালই আদর্শ সময়।
কীভাবে যাবেন : ট্রেনে বা গাড়িতে ক্যানিং। মাতলা নদী পেরিয়ে বাসন্তীর ডকঘাট। মাতলা নদীর উপরে সেতু দিয়ে পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায়। ওপারে গেলে গদখালি যাওয়ার যানবাহন পাবেন। ধর্মতলা থেকে বাসেও গদখালি যাওয়া যায়। তারপর নদী পেরোলেই গোসাবা বাজার।
কোথায় থাকবেন : জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে। ২৪৭৯ ৮৯৯৮ এই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে বুকিং করতে পারেন।