আমরা মহিলারা মুখের ত্বকের যত্নের ব্যাপারে ভীষণরকম উৎসাহী। মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে তাই বিভিন্ন ধরনের নামিদামি প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। এব্যাপারে বিন্দুমাত্র কম্প্রোমাইজ করা চলে না। অথচ শরীরের অন্যান্য অনাবৃত অংশ, যেমন ঘাড়, হাত, পা, চুলের যত্নের কথা বেমালুম ভুলে যাই। যেটা একেবারেই কাঙ্খিত নয়। শুধুমাত্র মুখ ঝকঝক করবে, অথচ শরীরের অন্যান্য অনাবৃত অংশে অযত্নের স্পষ্ট ছাপ নজরে আসবে, এটা কখনওই সুন্দরের সংজ্ঞা হতে পারে না। তাই আর ভুল না করে নীচে দেওয়া সাতটি স্টেপ্স-এর রূপ-রুটিন মেনে চলুন।

হাতের যত্ন

মুখের ত্বকের থেকে হাতের দেখভাল করা আরও জরুরি। কারণ হাতের উপর চাপ পড়ে অনেক বেশি। সংসারের খুঁটিনাটি কাজ যেমন– হার্ড ডিশ ওয়াশার, ডিটারজেন্টের ব্যবহার হাতের ত্বককে করে তোলে রুক্ষ এবং নিষ্প্রাণ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ত্বকে একটা শ্যামলাভাব চলে আসে। অনেক সময় অতিরিক্ত কাজের কারণে হাতের শিরাগুলো পর্যন্ত নজরে আসে। ফলে খুব সহজেই হাতে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। স্নানের সময় প্রতিদিন সাবান অথবা বডি-ওয়াশ দিয়ে ভালো করে হাত পরিষ্কার করে নিন। তারপর বডি অয়েল অথবা হেভি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না। হাতের ত্বকের উপর জমে থাকা মৃত কোশ সরাতে সপ্তাহে অন্তত দু-দিন স্ক্রাবিং করুন। বাজারে বহু নামি কোম্পানির প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন। সাধ্য অনুযায়ী যে-কোনও একটি কিনে নিন। তবে মাথায় রাখবেন বারবার ব্র্যান্ড বদলাবেন না। মুখের ত্বকের মতো হাতের ত্বক অতিমাত্রায় সংবেদনশীল না হলেও, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘরোয়া সামগ্রীও ব্যবহার করতে পারেন। আর একটা কথা মাথায় রাখবেন রোদে বেরোনোর অন্তত পনের মিনিট আগে সানস্ক্রিন লোশন লাগাতে ভুলবেন না। ত্বকের রং ফেরাতে কাঁচা হলুদ খুব ভালো রূপটান, এটাও ট্রাই করতে পারেন। সপ্তাহে একদিন হ্যান্ডপ্যাকও লাগাতে পারেন। দেখবেন আপনার হাতের ত্বক হয়ে উঠবে মখমলের মতো সফট।

কনুই এবং হাঁটুর দাগছোপ

আর একটি বড়ো ধরনের সমস্যা হল কনুই আর হাঁটুর কালো অংশকে ঘিরে। এমনও দেখা গেছে, অনেক মহিলাই ব্যালেন্স ডায়েট আর নিয়মিত এক্সারসাইজ করে রীতিমতো ঈর্ষণীয় ফিগার গড়ে তুলেছেন। তৎসত্ত্বেও হট প্যান্টস্, মিনি স্কার্ট বা স্লিভলেস জামাকাপড় এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় এই অংশে মৃত কোশ জমতে জমতে একটা কালো মোটা অস্তরণ পড়ে যায়। এবং জায়গাটা অসুন্দর হয়ে পড়ে। এই সামান্য খুঁতই আপনার সৌন্দর্য হ্রাস করতে পারে। এর থেকে বাঁচতে নিয়মিত পাতিলেবুর মধ্যে চিনি দিয়ে কনুই এবং হাঁটুতে মিনিট পাঁচেক ঘষুন। এটা খুব ভালো স্ক্রাবিং-এর কাজ করে এবং কালো দাগও দূর হয়। তারপর ভালোভাবে ধুয়ে কনুই এবং হাঁটুতে ময়েশ্চারাইজার লাগান। সপ্তাহে দু-একদিন টকদই আর মধু মিশিয়েও লাগাতে পারেন। কালো দাগ দূর করার জন্য বাদাম তেলও মাসাজ করতে পারেন। আমাদের একটা বদভ্যাস হল আমরা মাঝে মাঝেই টেবিলের উপর কনুই রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি, কাজ করি, এটা একেবারেই ঠিক নয়। এর কারণেও কনুইতে কড়া পড়ে যেতে পারে। তাই এই বদভ্যাস থাকলে অবিলম্বে তা ত্যাগ করুন।

এজিং ও স্যাগিং নেকলাইন

জানেন কি মুখের তুলনায় গলা বা ঘাড়ের চামড়া পাতলা এবং সংবেদনশীল। শুধু তাই নয় ফ্যাটি টিস্যুর মাত্রা কম থাকায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত জায়গায় ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যায়। ফলে ত্বক কুঁচকে যায় এবং বয়সের আগেই আপনাকে বেশি বয়স্ক মনে হয়।

এই সমস্যার থেকে বাঁচতে নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করুন। হোয়াইটনিং বা অ্যান্টি-এজিং ক্রিম, যাই মুখের জন্য ব্যবহার করুন না কেন, সেটি গলা এবং ঘাড়েও লাগিয়ে নিন। প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না। হালকা হাতে নীচ থেকে উপর দিকে স্ট্রোক দিন। এসব ক্ষেত্রে বাদাম তেল ভীষণ কার্যকরী।

পায়ের যত্ন

পুরো শরীরের ভার বহনকারী পা সবথেকে বেশি অবহেলিত হয়। পা-ফাটার সমস্যা, পায়ের পরতে মৃত কোশ জমে যাওয়া, রুক্ষ কালো ত্বক পায়ের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিতে পারে। মৃত কোশ দূর করতে একদিন অন্তর অন্তর পিউমিস স্টোন ব্যবহার করুন। স্ক্রাব করুন। সি-সল্ট-এর সঙ্গে সামান্য তেল মিশিয়ে বাড়িতেই স্ক্রাবার বানিয়ে নিন। পা ভালো করে ধুয়ে হেভি ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। কোনও ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন থাকলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখান। খালি পায়ে কখনও থাকবেন না। আরামদায়ক ফুটওয়্যার পরুন। বাইরে থেকে এসে ভালো করে পা-ধুয়ে লোশন লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না। পারলে মাঝেমধ্যে একটা করে ফুট-স্পা করিয়ে নিন।

ডার্ক সার্কল্স

আপনি যতই সুন্দর হোন না কেন চোখের নীচে একরাশ কালিই আপনার সৌন্দর্যে ছেদ ঘটাতে পারে। অনিদ্রা, খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম, মানসিক অবসাদই মূলত এর কারণ।

‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর’ ডার্ক সার্কল্স এর ক্ষেত্রে এটা একশো শতাংশ সত্যি। প্রপার ডায়েট আর বিউটি স্লিপ নেওয়ার চেষ্টা করুন। নিয়মিত রেটিনাল-যুক্ত আই ক্রিম লাগিয়ে শুতে যান। দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপ বা মোবাইলে চোখ রাখা বন্ধ করুন। দিনে একবার গোলাপজলে কটন বল ডুবিয়ে, চোখের উপর মিনিট ১০-১৫ রেখে দিন। চোখের আশপাশের চামড়া অতি মাত্রায় পাতলা এবং সংবেদনশীল। সেই কারণে বলিরেখাও পড়ে তাড়াতাড়ি। ডেলি কেয়ার-এর সঙ্গে সঙ্গে চোখের এক্সারসাইজও জরুরি।

ফ্রিজি হেয়ার

অত্যধিক পলিউশনের কারণে চুল ফ্রিজি হতে শুরু করে। এরকম চুল ম্যানেজ করা বেশ কঠিন। এর থেকে বাঁচতে হলে সপ্তাহে একদিন ডিপ কন্ডিশনিং করতে হবে। এছাড়া হেয়ার মাস্ক-এর ব্যবহারও ভালো ফল দেবে। রেডিমেড মাস্কের পরিবর্তে ঘরোয়া মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন। ডিমের কুসুমের সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে ট্রাই করতে পারেন।

হেয়ার ফল

সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি আর পলিউশনের কারণে চুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলস্বরূপ চুল পড়তে শুরু করে। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থেকেও এই সমস্যা হতে পারে। এর থেকে বাঁচতে সপ্তাহে দু’বার স্ক্যাল্পে এবং পুরো চুলে অয়েল মাসাজ করুন। এর জন্য নারকেল তেল ভালো অপশন। তবে ভালো ফল পেতে হলে রাতে নারকেল, বাদাম এবং অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে ঈষদুষ্ণ করে মাথায় লাগান। হালকা হাতে মাসাজ করুন। শাওয়ার ক্যাপ পরে শুতে যান। সকালে শ্যাম্পু করে নিন। চুলে ঘাম বসতে দেবেন না। চুল ওঠার এটাও একটা বড়ো কারণ। রোদে বেরোনোর আগে, মাথায় স্কার্ফ বেঁধে নিন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...