ব্যস্ত জীবনশৈলীর কারণে এখন কেউ আর নিজের পুরোপুরি খেয়াল রাখতে পারেন না। ক্লান্ত শরীর মনকে চাঙ্গা করতে তাই প্রয়োজন সঠিক মাসাজের। মাসাজ করলে শুধু যে রক্ত সঞ্চালনই বাড়বে তা নয়, ক্লান্তি এবং অবসাদও দূর হবে। আজকাল ‘মি টাইম’-এর দরকার সকলেরই এবং এখন সকলেই এব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। মানুষের এই সচেতনতার কথা মাথায় রেখেই এখন মাসাজ পার্লারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং বাড়ির আশেপাশে অথবা কর্মক্ষেত্রের চৌহদ্দির মধ্যেও এখন মাসাজ পার্লার খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। পরিচিত কোনও এক্সপার্ট-কে দিয়ে বাড়িতেও ব্যবস্থা করতে পারেন মাসাজের। মাসাজ নানা ধরনের হয়, সুতরাং কখন কোনটার প্রয়োজন তাই নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
অয়েল মাসাজের কথা আমরা দিদা, ঠাকুমাদের মুখেও শুনেছি। প্রচণ্ড পরিশ্রমের পর অয়েল মাসাজ করালে স্টিফ হয়ে থাকা পেশি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং শরীরের ক্লান্তি, অবসাদ দূর হয়। অয়েল মাসাজের চাহিদা আজও অব্যাহত সঙ্গে হেড এবং বডি মাসাজও সকলে পছন্দ করছেন। ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক রাখতে এবং মাথাব্যথা, অবসাদ, পরিশ্রমের ক্লান্তি দূর করতে মাসাজ খুবই জরুরি।
মাসাজ আসলে এক ধরনের বডি পলিশিং করানো। মাধ্যম হল তেল। গরমে শরীর মন যখন ক্লান্তিতে ঝিমিয়ে পড়ার অবস্থা হয়, তখন একটা মাসাজ করিয়ে নিলে শরীর, মনও চনমনে হয়ে ওঠে পাশাপাশি ত্বকের শিথিলতাও রোধ করা যায়।
মাসাজ পার্লারগুলিতে নানা ধরনের মাসাজের ব্যবস্থা রয়েছে। স্ট্রেস কাটিয়ে শরীরকে রিল্যাক্সড রাখার জন্য সুইডিশ মাসাজ খুব কার্যকরী। হট্ স্টোন মাসাজে পেশির টেনস ভাব দূর হয়ে পেশিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। চেয়ার মাসাজে ঘাড়, কাঁধ, মেরুদণ্ডের আরাম হয়। এতে তেলের প্রয়োজন হয় না এবং পোশাক ছাড়ারও প্রয়োজন হয় না।
এগুলি ছাড়াও ব্যথার উপশমের জন্য এবং শরীরের বিশেষ প্রয়োজনের জন্যও আলাদা আলাদা মাসাজের ব্যবস্থা আছে। ডিপ টিস্যু মাসাজ রয়েছে স্টিফ হয়ে যাওয়া কাঁধ এবং ঘাড়ের যন্ত্রণাদায়ক বিশেষ বিশেষ জায়গাগুলির জন্য। ট্রিগার পয়েন্ট মাসাজের ক্ষেত্রেও, পেশির বিশেষ বিশেষ জায়গায় অসুবিধা বোধ করলে, থেরাপিস্ট মাসাজের মাধ্যমে ওই স্পেসিফিক জায়গাটাকে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করেন। এছাড়াও আছে নিউরো-মাসকুলার থেরাপি। হাইলি ট্রেনড থেরাপিস্টের এই ক্ষেত্রে কাজ হল পেশিতে ক্র্যাম্প বা স্প্যাজম হলে শরীরের ব্যথার উপশম ঘটানো (এই ক্ষেত্রে নড়াচড়া দূরের কথা, স্পর্শ করলেও ব্যক্তির উক্ত স্থানে ব্যথার অনুভূতি হয়)। এই থেরাপিতে প্রথম প্রথম ব্যথা অনুভূত হলেও পরে পেশি ধীরে ধীরে রিল্যাক্স মোডে চলে আসে। এছাড়াও আছে অ্যাকিউপ্রেশার এবং অ্যাবডোমিনাল মাসাজ।
এখন মাসাজ পার্লারগুলিতে থাই মাসাজ, অ্যারোমা থেরাপি এবং আয়ুর্বেদিক মাসাজ সব থেকে বেশি পপুলার হয়ে উঠছে। ব্যাক পেন, কাঁধ এবং ঘাড়ের ব্যথা এবং স্টিফ নেক-এর জন্য থাই মাসাজ খুবই কার্যকরী কারণ গরমে সারাদিনের পরিশ্রমের পর এই মাসাজ খুবই রিল্যাক্সিং।
অ্যারোমা থেরাপির ক্ষেত্রে বিভিন্ন গাছগাছড়া থেকে তেল বার করে সেই সুগন্ধী তেলের সাহায্যে মাসাজ করা হয়। অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি খুবই ফলদায়ী। এতে মন শান্ত হয় এবং চিন্তাও দূর হয়।
আয়ুর্বেদিক মাসাজের ক্ষেত্রে চাল এবং বিভিন্ন শিকড়বাকড় তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ভাপের সাহায্যে সেটাকে সেদ্ধ করা হয়। এই মিশ্রণটি মলমলের কাপড়ে বেঁধে তাই দিয়ে সারা শরীর মাসাজ করা হয়। এতে শরীরের নানা ধরনের ব্যথার উপশম ঘটে।
হেড মাসাজের জন্য তেল হালকা গরম করে চুল ভাগ করে করে তুলোর সাহায্যে স্ক্যাল্পে লাগানো হয়। তারপর আঙুলের ডগার সাহায্যে রগড়ে রগড়ে মাথায় মালিশ করা হয়। এতটাই ধীরে ধীরে করা হয় যে চুলে জট পড়া বা চুল ঝরে পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
কেরলে কলারি মাসাজ অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি মূলত সৈনিক এবং কুস্তিগীরদের জন্য প্রচলিত প্রাচীন ভারতের ব্যথা উপশমের কলাবিদ্যা। শরীরের ব্যথা, অবসাদ দূর করে মন এবং শরীরকে তরতাজা বানাবার জন্য এই মাসাজ প্রয়োগ করা হয়। এই মাসাজের জন্য হার্বাল তেল ব্যবহার করা হয়।
মাসাজ থেরাপিস্টদের মতে সপ্তাহে একবার হেড মাসাজ করানো উচিত। মাসে একবার বডি মাসাজ করাতে পারলে গরমের তাপে ঝিমিয়ে পড়া শরীর এবং মন নতুন করে তরতাজা, চাঙ্গা হয়ে উঠবে। মাসাজের সময় শরীরের প্রয়োজনীয় প্রেসার পয়েন্টগুলিতে চাপ দেওয়া জরুরি। তাই সবসময় এক্সপার্ট-কে দিয়েই মাসাজ করানো উচিত।
হেড এবং বডি মাসাজ কখন করানো উচিত
এক্সপার্টদের মতে, যে-কোনও বয়সেই হেড মাসাজ করানো যায়। কিন্তু বডি মাসাজ করানো উচিত ২৫ বছর বয়সের পরেই।
শুধুমাত্র স্ট্রেস এবং অবসাদ দূর করার জন্যই যে মাসাজের দরকার এমনটা ভাবা ঠিক নয়। অনেক রকম অসুখেও মাসাজে সুফল পাওয়া যায়। ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি কেরলের আয়ুর্বেদিক মাসাজ করানো যায়, তাহলে অনেক ধরনের অসুখই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। স্থূলতা, ত্বকের রোগ এবং প্যারালিটিক রোগীদের জন্য মাসাজে অনেক লাভ পাওয়া যায়। এই ধরনের মাসাজ থেরাপি কেরালার আয়ুর্বেদশাস্ত্রে পিঝিচিল (তৈলধারা), শিরোধারা ইত্যাদি নামে পরিচিত।
বিভিন্ন ধরনের মাসাজের ক্ষেত্রেই তেলের ভূমিকা সব থেকে বেশি। হার্বাল, অ্যারোমেটিক অয়েল, আমন্ড এবং অলিভ অয়েলের ব্যবহারই বেশিমাত্রায় মাসাজে লক্ষ্য করা যায়।
নিয়মিত মাসাজ এবং আয়ুর্বেদিক থেরাপি দুটো আলাদা জিনিস। রেগুলার মাসাজ শরীরের স্ট্রেস দূর করে বডিকে রিল্যাক্স রাখতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদিক থেরাপির নিয়মিত চিকিৎসায় রোগের নিরাময় হয়। অবশ্য এই দুটোর জন্যই দরকার বিশেষজ্ঞের।