আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে মধুর আওয়াজ। বাংলায় আবার একটি নতুন বছর। আর এই নববর্ষে টেক্বা দিতে ফ্যাশনেও মনোযোগ দেওয়া শুরু করেছেন বঙ্গ ললনারা। কী মেক-আপ বাছবেন আর পার্লারে চুলটা কীভাবে নতুন শেপ দিলে মনের মানুষের আরও কাছে পৌঁছোবেন, তারই জল্পনা তুঙ্গে এখন। সঙ্গে আড্ডা আছে, ঘোরাঘুরি এবং খাওয়াদাওয়ার পেল্লাই আয়োজন রয়েছে। আর এই সবকিছুর জন্যই নিজেকে ফ্যাশনদুরস্ত করবার দরকার। মেক-আপ আর চুলের স্টাইল ছাড়া যেটা প্রায় অসম্ভব।
ঘরে-বাইরে সব ক্ষেত্রেই মেক-আপটা সানশাইন মেক-আপ হলে ভালো হয়। এই মেক-আপ শিমারি লুকের সঙ্গে গরমে কুল থাকতেও সাহায্য করবে।
শুরু করা যাক বেস দিয়ে। গরম এবং ঘাম এড়ানো মুশকিল, সুতরাং পাউডার বেস ব্যবহার করুন। এতে ঘাম কম হবে আর মেক-আপও অনেকটা সময় ধরে টিকে থাকবে। বেস-এর জন্য গোল্ডেন টিন্ট-যুক্ত শিমারি প্যান কেক ব্যবহার করলে সবথেকে ভালো হয়।
আই মেক-আপের জন্য ইয়েলো কালারের শাইনি আইশ্যাডো চোখের ভিতরের কোণটাতে লাগান এবং মধ্যেখানটা ও বাইরের কোণে গ্লসি অরেঞ্জ শেড বুলিয়ে নিন। আই মেক-আপ-এ লংলাস্টিং এফেক্ট দেওয়ার জন্য আইশ্যাডো লাগাবার আগে চোখে আই প্রাইমার লাগিয়ে নিতে পারেন।
চোখের মেক-আপের ফিনিশিং টাচ পারফেক্ট করার জন্য আইলিডের উপর পাতলা লাইনার লাগান এবং চোখের পাতার মাস্কারার কোটিং-এর সঙ্গে ভালো ভাবে মার্জ করিয়ে দিন। ঠোঁটেও সানশাইন এফেক্ট দেওয়ার জন্য অরেঞ্জ, পিংক-এর লিপশেডস বাছুন। গরমে ঘাম হয় বলে মেক-আপের জন্য ওয়াটার প্রুফ এবং ওয়াটার রেজিস্টেন্ট প্রোডাক্টই বেছে নেওয়া দরকার।
যারা বেশি ঘামেন, তাদের টাচআপের জন্য রুমাল, টিস্যু পেপারের সঙ্গে টু ওয়ে কেক নিজের কাছে রাখাটা খুব জরুরি। মার্কেটে আজকাল অনেক রকমের রিফ্রেশিং স্প্রে পাওয়া যায় যেগুলি মুখের ক্লান্তি দূর করে রিফ্রেশ লুক রাখতে সাহায্য করে। ১০টি মেক-আপ প্রোডাক্টস যেগুলি সকলের কাছেই থাকা বাঞ্ছনীয় যেমন লিপস্টিক, আইল্যাশ কালার, আইমাস্কারা, ওয়াটারপ্রুফ কনসিলার, ডার্ক স্মোকি আইলাইনার, ব্লাশ, বোল্ড ব্রো এনহ্যান্সার, ফাউন্ডেশন, ব্রোঞ্জার এবং আইশ্যাডো অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের কিনুন।।
বিশেষ মেক-আপ টিপ্স
হোয়াইট ইন ব্ল্যাক আউটলাইনারঃ হোয়াইট লাইনারের ট্রেন্ড এখন খুব চলছে। হোয়াইট লাইনার চোখের নীচের লিডে লাগাতে পারেন একটু মোটা করে।
গ্লসি লিড্সঃ মুখের গ্ল্যামারের জন্য গ্লিটার এবং হাইলাইটার না থাকলেও গ্লসি আইলিডস ট্রাই করে দেখতেই পারেন। আইশ্যাডো লাগাবার পর নিজের পছন্দের লিপ-গ্লস তার উপরে লাগিয়ে নিলে পছন্দের লুক পেয়ে যাবেন।
বোল্ড ব্লাশঃ ব্লাশ বেশিমাত্রায় ব্যবহার করার দরকার নেই। হালকা বোল্ড করে লাগালেই যথেষ্ট, যাতে আপনার লুক সহজে চোখে পড়ে।
মেটালিক ফিভারঃ মেটালিক ট্রেন্ড এখন ফ্যাশনে ইন। বোল্ড এবং সেক্সি লুকের জন্য চিক বোন্স-এ গোল্ডেন হাইলাইটার লাগান। লাগানোর সময় খেয়াল রাখবেন, খুব বেশি যেন না হয়ে যায় আবার কম হলেও পারফেক্ট লুক পাবেন না।
রেড লিপস্টিকঃ রেড কালার সব কিছুর সঙ্গে ম্যাচ করে বিশেষ করে উৎসব, অনুষ্ঠানে তো বটেই। হালকা আই-মেক আপের সঙ্গে রেড লিপস্টিক খুব ভালো ভাবে ব্লেন্ড করবেন।
গ্লিটার ইন ট্রেন্ডঃ এখন গ্লিটার লাগানোর স্টাইল তুঙ্গে। রাতের প্যান্ডেল হপিং অথবা রেস্তোরাঁর ঠান্ডা ঘরে বসে খাওয়াদাওয়া। গ্লিটার অ্যাপ্লিকেটর দিয়ে, আইলিডস-এ গ্লিটার লাগিয়ে নিন। আপনার চোখ হাইলাইট করতে সাহায্য করবে। আপনার পোশাক এবং সাজ-সজ্জার সঙ্গে আপনার লুক-কে কমপ্লিমেন্ট করবে।
হেয়ার কেয়ার টিপ্স
- ধুলো, ধোঁয়া, ঘাম, দৈনন্দিন দৌড়ঝাঁপের প্রভাব পড়ে চুলের সৌন্দর্যের উপর। যদি চুল সুস্বাস্থ্যে ভরপুর করে তুলতে চান তাহলে নিয়মিত অয়েল মাসাজ, পুষ্টিকর খাবার, চুল পরিষ্কার রাখা এবং সামান্য যত্নের প্রয়োজন
- চুলে টক দই লাগিয়ে ভালো করে গোড়া মালিশ করুন এবং ২০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন
- ঈষদুষ্ণ অলিভ অয়েল দিয়ে চুল মাসাজ করুন। গরমজলে তোয়ালে ভিজিয়ে জল নিঙড়ে নিয়ে তাই দিয়ে চুল জড়িয়ে রাখুন। এরপর দুটো ডিমের কুসুম ফেটিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুলে গ্লো আসবে
- সপ্তাহে অন্তত ১ বার চুলে অয়েল মাসাজ করুন। এরপরে দুই চা চামচ শিকাকাই পাউডার, অর্ধেক চা-চামচ রিঠে পাউডার এবং অর্ধেক চা চামচ আমলকী পাউডার জলে ভিজিয়ে রেখে, সেই জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন
- টাটকা দুধ চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন
- টক দই বা ছাস দিয়ে চুল ধুলে চুল সুন্দর এবং উজ্জ্বল হবে
- ২০ মিলিলিটার গরম জল, ২০ মিলিলিটার ব্র্যান্ডি, ১টি ডিমের কুসুম একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে মাসাজ করুন এবং ১৫ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন
- একটা ডিমের সঙ্গে অর্ধেক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগান। ১৫ মিনিট পর হালকা গরম জলে চুল ধুয়ে ফেলুন। আর চুল যদি খুব ড্রাই হয়,তাহলে গরম জলের বদলে ঠান্ডা জল ব্যবহার করবেন
- ভিটামিন ‘ই’-যুক্ত তেল চুলে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন এবং পরে চুল ধুয়ে ফেলুন
- টাটকা নারকেল পিষে দুধ বার করে নিন। একটা পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে এই দুধ চুলে লাগান এবং ১০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন
নিয়মিত এর কোনও একটি যদি মেনে চলতে পারেন তাহলে বিশেষ যত্নের জন্য স্পেশালিস্ট-এর কাছে যাওয়ার দরকার পড়বে না যদি না চুলে আগে থেকেই কোনও কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা হয়ে না থাকে। এর পর চুল সেট করাতে অথবা হেয়ার স্টাইলিং-এর জন্য পার্লার অবশ্যই যেতে হবে কারণ প্রফেশনাল এক্সপার্ট-ই একমাত্র আপনার চেহারার সঙ্গে মানানসই হেয়ার স্টাইলিং-এর আইডিয়া দিতে পারবেন। হেয়ারস্টাইলের কথা মাথায় রেখে লুক অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন এর কোনও একটি।
- পিক্সি উইথ শর্ট সাইড্সঃ এই ট্রেন্ডি স্টাইলে একদিকে শর্ট বব কাট থাকে অন্যদিকটায় চুল ক্রপ করে কেটে দেওয়া হয়
- বব কাটঃ মুখ লম্বাটে হলে এবং ইয়ং লুকের জন্য এই স্টাইল বাছতে পারেন
- লেয়ারড কাট উইথ সাইড ব্যাংগসঃ মুখের কনট্যুরগুলিকে হাইলাইট করতে সাহায্য করবে
- অ্যাসিমিট্রিক বব কাটঃ এই স্টাইলে পিছনের চুল ছোটো এবং আগের চুল লম্বা রাখা হয়। বিশেষ করে এখন বাঁদিকের তুলনায় ডানদিকে লম্বা চুল রাখার ট্রেন্ড চলছে
- বব ওয়েভসঃ শর্ট হেয়ারের মধ্যে এটাও লেটেস্ট ফ্যাশন। চুলে ওয়েভ যেমন রোম্যান্টিক লুক ক্রিয়েট করে তেমনি বব চুলের কুল ফিলিং-এর রেশও থেকে যায় শরীরে
- সাইড লেয়ার কাটঃ লম্বা চুলে সাইড লেয়ারিং স্টাইল, আপনাকে মডার্ন এবং ইয়ং লুক দিতে পারে
- লব কাটঃ এই স্টাইলে চুল না তো খুব লম্বা রাখা হয় আর না খুব ছোটো করে ফেলা হয়। যারা গরমে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে কমফর্টেবল থাকতে চান অথচ চুল খুব ছোটো করে ফেলতেও চান না তাদের জন্য লব কাট একেবারে আইডিয়াল
এছাড়াও লম্বা চুলের ফ্যাশন তো আছেই। চুল খোলা রাখতে চাইলে বা হালকা হাত খোঁপা সব সময়েই স্টাইল স্টেটমেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়।