যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে আপনিও নখকে রাঙিয়ে তুলতে চান বিভিন্ন ডিজাইনের মাধ্যমে। অথচ নখের ভঙ্গুরতার (একটু বাড়লেই ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা) কারণে বা নখ যথাযথ ভাবে না বাড়ার কারণে আপনি শখপূরণ করতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে নখ বড়ো রাখার জন্য নেল এক্সটেনশনই হতে পারে একমাত্র উপায়। তবে নেল এক্সটেনশন করার আগে এ-সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়াটা জরুরি। সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে নেল এক্সটেনশন করানো হয়ে থাকে। নীচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হল–
জেল নেল এক্সটেনশন –
এই পদ্ধতিতে জেল জাতীয় একরকম পদার্থ দিয়ে নেল এক্সটেনশন করা হয়ে থাকে। সবার প্রথমে নখ কেটে ভালোভাবে ফাইলিং করে নিতে হয়। এরপর নখের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ঢাকার জন্য ব্লক বাফার অর্থাৎ একটা ফ্ল্যাট নেল কালার দিয়ে নখের উপরে বাফ করে নেওয়া হয়। তারপর নখের কিউটিকল্স গুলিতে সামান্য পুশ করার পর প্রাইমার লাগানো হয়। এটি প্রোডাক্টে থাকা ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থেকে নখকে সুরক্ষিত রাখে, পাশাপাশি প্রোডাক্ট-টি নখের উপর ফিক্স হতেও সহায়তা করে। এই জেল নেল ব্রাশের সাহায্যে নেল বিড থেকে নেল টিপ পর্যন্ত লাগানো হয়।
নখের মাঝের অংশে যাতে জেলের পরিমাণ বেশি মাত্রায় দেওয়া হয় সেবিষয়ে নজর রাখা উচিত। কারণ এটিই নখের উপর বাম্প ক্রিয়েট করতে সাহায্য করবে। আর একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে জেলের লেয়ার না মোটা হবে, না পাতলা। এরপর জেল শোকানোর জন্য ৩ মিনিট ইউভি ল্যাম্পের নীচে নখ রাখুন। ৩ মিনিটের বেশি কখনওই ইউভি ল্যাম্পের নীচে নখ রাখবেন না। শেষে নখকে শেপ দিয়ে তার উপর কিউটিকল্ অয়েল দিয়ে হালকা হাতে কিছুক্ষণ মাসাজ করতে হবে। এই স্টেপগুলির পরে নখের উপর পেইন্ট অথবা নেল আর্ট করতে পারেন।
অ্যাক্রিলিক এক্সটেনশন –
অ্যাক্রিলিক এক্সটেনশন, জেল নেল এক্সটেনশনের তুলনায় খানিকটা আলাদা। যদিও নেল এক্সটেনশনের এই পদ্ধতিতে জেল নেল এক্সটেনশনের মতোই প্রথমে নখগুলিকে কেটে সঠিক উপায়ে ফাইলিং করা হয়। পরে একই পদ্ধতিতে নখের ঔজ্জ্বল্য ঢাকার জন্য বাফারিং দিয়ে বাফ করতে হয়। তারপর কিউটিকল্সগুলিকে সামান্য পুশ করার পর প্রাইমার লাগাতে হয়। কিন্তু এর পরের ধাপগুলি কার্যত আলাদা কারণ এতে জেলের সাথে সাথে পাউডারও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে নেল ব্রাশ দিয়ে নখের উপর জেল লাগানো হয়, তারপর তার উপর অ্যাক্রিলিক পাউডারের একটা পরত দিতে হয়। জেল আর পাউডারের পরত দেওয়ার সময় একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে নখের শেপ দেওয়ার সময়ে হালকা চাপ দেওয়া জরুরি। অ্যাক্রিলিক এক্সটেনশন সামান্য হলেও হার্ড, তবে এর জন্য নখের কোনও ক্ষতি হয় না।
এর বিশেষত্ব হল এটি শুকোনোর জন্য ইউভি ল্যাম্পেরও প্রয়োজন পড়ে না, নিজে থেকেই শুকিয়ে যায়। ড্রাই হওয়ার পর এটিকে বাফ করা হয়। তারপর শেপ দেওয়া হয়। শেপ দেওয়ার পরে নখের উপর নেল পেইন্ট-এর নর্মাল কোট লাগাতে পারেন। প্রতি তিনদিন অন্তর অন্তর টপ কোট বদলে ফেলুন। আর সময় পেলেই কিউটিকল্ অয়েল দিয়ে নখ হালকা ভাবে মাসাজ করুন।
অ্যাক্রি জেল –
এই নেল এক্সটেনশনের ডিমান্ড সবথেকে বেশি। প্রাইমার লাগানো পর্যন্ত, জেল নেল এক্সটেনশন আর অ্যাক্রিলিক এক্সটেনশনের নিয়ম বিধি একই। পরের পদক্ষেপেই অ্যাক্রিলিক পাউডারের সাথে অ্যাক্রিলিক জেলের ব্যবহার করা হয়। এই নেল এক্সটেনশন পদ্ধতিতে নেল আর্টের সাথে নেল পিয়ারসিং-ও করা হয়ে থাকে। এটির আর একটি বিশেষত্ব হল এতে পার্মানেন্ট নেল আর্টও করা সম্ভব। তার জন্য টপ কোট লাগানোর আগে নেল আর্ট বানিয়ে নিতে হবে, তারপরে টপ কোট লাগাতে হবে। এতে নেল আর্ট ততক্ষণ অক্ষত অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ না আপনি টপ কোট পরিবর্তন করছেন।
কীভাবে যত্ন করবেন
নেল এক্সটেনশন করা যতটা সহজ, এর কেয়ার নেওয়া ঠিক ততটাই কঠিন। এর যত্নের জন্য কতকগুলি টিপস দেওয়া হল–
১) নেল এক্সটেনশনগুলিকে পরিষ্কার রাখাটা সবথেকে বেশি জরুরি। কারণ দাগ লাগলে এটি হলুদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সর্বদা নেলব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন
২) নেল এক্সটেনশন করা থাকলে নিজে থেকে কখনও সেটিকে রিমুভ করতে যাবেন না, এতে আপনার অরিজিনাল নখের ক্ষতি হতে পারে, এক্সপার্টের কাছে যান
৩) নেল এক্সটেনশন করা থাকলে দীর্ঘক্ষণ জলের মধ্যে হাত রাখবেন না। কাচা, ধোয়া, বাসন মাজা থেকে দূরে থাকুন
৪) যতদিন নেল এক্সটেনশন রাখবেন, ততদিন সুইমিং না করলেই ভালো হয়
৫) গরম জিনিস থেকে হাত দূরে রাখুন।