সৌন্দর্য, ভেষজ ওষুধ ও সুগন্ধি--- এই তিনটি কার্যকারিতায় ল্যাভেন্ডারের জুড়ি নেই। যা আজ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেইসব সামগ্রীতে, বিভিন্ন ধরনের সাবানে, তেল থেকে শুরু করে নানা খাদ্যবস্তুতে, এমনকী রোগের উপশম করতেও ল্যাভেন্ডারের অবদান অতুলনীয়।
তবে ল্যাভেন্ডারের ইতিহাস আড়াই হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। প্রাচীনকাল থেকে মিশর ও আরব দেশের মানুষ Lavender ব্যবহার করে আসছে। মিশরীয়রা এটিকে মমি সংরক্ষণ ও সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার করত। গ্রিক ও রোমানরা ল্যাভেন্ডার মিশ্রিত জলে স্নান করত। ল্যাটিন শব্দ ‘ল্যাভো’ অথবা ‘ল্যাভেন্ডার’-এর অর্থ ‘পরিষ্কার করা’। তার থেকেই বহু সমাদৃত এই ভেষজটির নামকরণ হয়েছে ল্যাভেন্ডার।
Lavender আবিষ্কারের পথিকৃত আরবরা। ব্যবহারিকভাবে ল্যাভেন্ডারের চাষ প্রথম শুরু হয় আরবে। তারপর তা ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের দেশ গ্রিসে। গ্রিকরা প্রাচীনকালে ব্যাপক আকারে ল্যাভেন্ডার ব্যবহার করত। ইতিহাস বলছে, জুলিয়াস সিজার-ক্লিওপেট্রার রোমান্সের একটা অঙ্গ ছিল ল্যাভেন্ডার। ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুইয়ের স্নানের জলে এই সুগন্ধি ভেষজের উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের মধ্যে ল্যাভেন্ডার ছিল অত্যন্ত আদরনীয়। কুইন এলিজাবেথ ল্যাভেন্ডারের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তাঁর আমলে রয়্যাল টেবিলে সুগন্ধি এই ভেষজের থাকাটা বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছিল। মাইগ্রেন থেকে রেহাই পেতে ‘ল্যাভেন্ডার-টি’ খেতেন এলিজাবেথ। কুইন ভিক্টোরিয়ার আমলে ইংল্যান্ডে, এর ব্যবহার সব থেকে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। ভিক্টোরিয়া তাঁর হাউসকিপারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজপ্রাসাদ পরিষ্কার করার কাজে ল্যাভেন্ডার ব্যবহার করতে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈনিকদের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতেও এর প্রয়োগ করা হতো। এখনও ফরাসিরা ল্যাভেন্ডারের খেতে ভেড়া চরাতে পাঠান, তাতে নাকি ভেড়ার মাংস নরম ও সুস্বাদু হয়। বাকি বিশ্বের কাছেও ল্যাভেন্ডার সমান সমাদৃত। ১৯৯৯ সালে বর্ষসেরা ভেষজ হিসাবে ল্যাভেন্ডারকে বেছে নেয় ইন্টারন্যাশনাল হার্ব অ্যাসোসিয়েশন।
ল্যাভেন্ডার, মিন্ট শ্রেণিভুক্ত ভেষজ। প্রচুর শাখা-প্রশাখা এবং বেশ ঝাঁক আকারে হয়, যার উচ্চতা প্রায় ফুট দুয়েক। গ্রীষ্মের শুরু থেকে শরৎকালের প্রথম দিকে ল্যাভেন্ডার গুল্মে ফুল আসে। পুষ্পমুকুল থেকে প্যাঁচালো আকারে ছোটো ছোটো গোলাপি এবং বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুল হয়।