২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি যে-সব ভালো ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছেন, তারমধ্যে অন্যতম ‘হাওয়া’। বাংলাদেশের এই ছবিটি গতকাল সন্ধ্যা ৭ টায় নন্দন ওয়ান-এ প্রদর্শিত হয়।
‘হাওয়া’ যে একটি ভালো ছবি, এই খবর আগেই পৌঁছে গিয়েছিল সিনেমাপ্রেমীদের কানে। ছবিটি দেখার জন্য তাই নন্দন ওয়ান প্রেক্ষাগৃহের দর্শক আসন ছিল কানায়-কানায় পূর্ণ। বলা যায়, শীতের সন্ধ্যায়ও কলকাতার হাওয়া গরম করে তুলেছিল বাংলাদেশের ‘হাওয়া’। আর অবশ্যই ছবিটি দেখার পর উচ্ছ্বসিত দর্শককূল।
‘হাওয়া’ মৎস্যজীবিদের জীবন-বৃত্তান্ত। না, শুধু এটুকু জানালে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে অনেককিছুই। মাছ ধরার জন্য যে-সব জেলে-নৌকো গভীর সমুদ্রে যায়, সেইসব নৌকোগুলির মধ্যে দু’-একটা নৌকো অনেক সময় আর ফেরে না। কিন্তু কেন ফেরে না? ঝড়ে ডুবে যায় নাকি ফেরে না অন্য কোনও কারণে? ‘হাওয়া’ দেখার পর এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন দর্শকরা। তবে এই ছবিটি সম্পর্কে আরও কিছু কথা না জানালেই নয়। ‘হাওয়া’ তৈরি হয়েছে টানটান চিত্রনাট্যে। আনন্দ, উচ্ছ্বাস, রাগ-অনুরাগ, কাম, ক্রোধ, ভয়, সন্দেহ, হিংসা-প্রতিহিংসা, বীভৎসতা প্রভৃতিতে ভরপুর এ ছবি এককথায় রুদ্ধশ্বাস।
মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত এই ছবিতে নজরকাড়া অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরি। চরিত্রের উপযোগী করে তুলতে তিনি নিজেকে ভেঙেচুরে একাকার করেছেন। তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছেন টলিউড পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তাই সাংবাদিক সম্মেলনে, চঞ্চল চৌধুরি-কে নিয়ে ছবি করার ইচ্ছেপ্রকাশও করেছেন সৃজিত। অবশ্য শুধু চঞ্চলই নন, শরীফুল ইসলাম রাজ এবং নাজিফা তুষির অভিনয়ও মন ছুঁয়ে যায়। মুগ্ধ করে কামরুল হাসান খোসরুর সিনেম্যাটোগ্রাফি, সজল আলোকের সম্পাদনা এবং ইমন চৌধুরি ও রসিদ শরিফ শোয়েব-এর সংগীত পরিচালনা। দু’ঘন্টা ষোলো মিনিটের এই ছবিটি প্রযোজনা করেছেন অঞ্জন চৌধুরি পিন্টু।
‘হাওয়া’ ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে এবং টরেন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিলম ফেস্টিভ্যাল-এ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তরুণ পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন এর আগে ছোটোপর্দার জন্য ছবি তৈরি করলেও, ‘হাওয়া’ তাঁর প্রথম পূর্ণদৈঘ্যের ছবি। এই ছবি নন্দন ওয়ান-এ প্রদর্শিত হওয়ার আগে, নন্দন ফোর-এ আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে পরিচালক সুমন জানান, ‘হাওয়া’ ছবিটির চিত্রনাট্য লিখতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। ফারুখ জহিন আমিন, সুকর্ণ সাহেদ ধীমান এবং পরিচালক স্বয়ং মিলিতভাবে লিখেছেন এ ছবির চিত্রনাট্য। ছবির মুখ্য অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরি জানিয়েছেন, অনেকদিন মহড়ার পর তাঁরা সবাই অভিনয়ে অংশ নিয়েছেন বলেই হয়তো ছবিটির সাফল্য নিশ্চিত হয়েছে। প্রায় ৪৫ দিন মাঝ সমুদ্রে জেলে নৌকোয় থেকে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা তাঁদের দীর্ঘদিন স্মরণে থাকবে বলেও জানিয়েছেন চঞ্চল। শুধু তাই নয়, এই প্রথমবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদবোধনী অনুষ্ঠানে অমিতাভ বচ্চন, শত্রুঘ্ন সিনহা, শাহ রুখ খানের মতো মহা-তারকাদের সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করতে পেরে চঞ্চল যে অত্যন্ত খুশি, তাও সাংবাদিক সম্মেলনে প্রসঙ্গত জানিয়েছেন তিনি।