শরীরের এক অতি মূল্যবান ইন্দ্রিয় চোখ। যার দ্বারা আমরা দৃষ্টিসুখ উপভোগ করতে পারি। দৃষ্টিহীনদের কাছে যা স্বপ্ন! কিন্তু, এই দৃষ্টিসুখ উপভোগ করতে হলে চোখ ভালো রাখতে হবে, রোগমুক্ত থাকারও চেষ্টা করতে হবে। আর যদি চোখের কোনও সমস্যা বা অসুখ হয়, তাহলে দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান করে কী ভাবে রোগমুক্ত থাকতে হবে চিকিৎসকের সাহায্যে, সেই বিষয়ে কিছু জ্ঞান এবং সতর্কতা জরুরি। জানা দরকার– চোখের কী কী সমস্যা হয় কিংবা হতে পারে, কী ভাবে স্বাভাবিক দৃষ্টি ধরে রাখতে হবে, দৃষ্টিহীনদের কী ভাবে দৃষ্টিদান করা যেতে পারে ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে ডা. বাণী বিশ্বাস জানিয়েছেন, চোখের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ‘কর্নিয়া’। আর এই কর্নিয়াকে কীভাবে সুস্থ রাখা যায় এবং কর্নিয়া দান করে কী ভাবে দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টিদান করা যায়, সেই প্রসঙ্গে নানা কৌতূহল মেটালেন ডা. বিশ্বাস।
- কর্নিয়া কী?
- চোখের সামনের দিকের স্বচ্ছ অংশ। এটি ঢেকে রাখে আইরিস এবং পিউপিলকে। পিউপিল হল আইরিসের মাঝের ছিদ্র, যা ছানিমুক্ত চোখে কালচে দেখায় এবং ছানিযুক্ত চোখে ছানির পরিপক্বতার মাত্রা অনুসারে ধূসর কিংবা সাদা দেখায়।
- স্বাভাবিক দৃষ্টিলাভের জন্য কর্নিয়া কেমন হওয়া উচিত?
- স্বাভাবিক দৃষ্টির জন্য কর্নিয়া স্বচ্ছ থাকা আবশ্যক। কর্নিয়াতে কোনও রক্তনালি না থাকাটা এর স্বচ্ছ হওয়ার অন্যতম কারণ। স্বচ্ছতার কারণে এর ভেতর দিয়ে আলো চোখের ভেতরে প্রবেশ করে এবং পেছনের রেটিনার ওপর পড়তে পারে। ওই সময় আমরা কোনও বস্তুকে দেখতে পাই। কর্নিয়া আলোকরশ্মি প্রবেশে সাহায্য করে। মানুষের চোখে কর্নিয়ার প্রতিসরণ ক্ষমতা প্রায় ৪৩ ডায়াপ্টার। কর্নিয়ার প্রধাণত পাঁচটি স্তর থাকে। এগুলি হল– কর্নিয়াল এপিথেলিয়াম, বোম্যান’স লেয়ার, কর্নিয়াল স্ট্রমা, ডেসসিমেটস মেমব্রেন এবং কর্নিয়াল এন্ডোথেলিয়াম। তবে ২০০৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহাম-এর চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হারমিন্দর সিং দুয়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছেন, কর্নিয়ার তৃতীয় এবং চতুর্থ স্তরের মাঝে আরও একটি স্তর উপস্থিত। এই স্তরটির নামকরণ হয়েছে প্রি-ডেসসিমেটস লেয়ার বা দুয়া’জ লেয়ার। অবশ্য এই সংক্রান্ত তথ্য অ্যানাটমি কিংবা চক্ষুবিজ্ঞানের কোনও বইতে এখনও সংযোজন করা হয়নি।
- কী কী কারণে কর্নিয়ার সমস্যা হয় এবং এর প্রতিকার কী?
- আঘাত লেগে কিংবা জীবাণুর সংক্রমণে কর্নিয়াতে আলসার হতে পারে। দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা না হলে, স্থায়ী ভাবে কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়ে যেতে পারে। তখন দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ওষুধের দ্বারা এর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তখন একমাত্র চিকিৎসা হল, কর্নিয়া প্রতিস্থাপন।