সনাতন সমাদ্দার। চন্দনপুর গ্রামের নামী মানুষ। ধানকলের ব্যাবসা তাঁর। বেশ রমরমা ব্যাবসা। বেশ দু'পয়সা করেছেন। গ্রামে প্রথম পাকাবাড়িখানা তাঁরই। ‘সনাতন নিবাস’।
সনাতন দাওয়ায় বসে হুঁকোয় টান দিচ্ছেন আর তাঁর ইয়ার দোস্তদের নিয়ে জমিয়ে আড্ডা চালাচ্ছেন পড়ন্ত বিকেলে। এখন বড়ো ছেলে সমর ব্যাবসার হাল ধরেছেন। ছোটো ছেলে শ্যামল নেহাতই ছোটো। মেয়ে ইন্দু অবশ্য ডাগরটি হয়েছে। তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে।
সনাতন এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত। ব্যাবসা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে একটু আয়েশ করে সময় কাটাতে চান। তাছাড়া বড়ো ছেলে সমর লায়েক হয়ে গেছে। সমরই সামলে নিতে পারবে সব— এ বিশ্বাস তার আছে।
বেশ কাটছিল দিন আরামে। সেবার স্ত্রী অন্নপূর্ণাকে ডেকে রাতে শোওয়ার আগে তীর্থে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন সনাতন। গিন্নি খুব খুশি, কারণ ব্যাবসা দেখতে গিয়ে বিয়ের পর খুব একটা ঘোরা হয়ে ওঠেনি।
না, তীর্থে যাবার ইচ্ছেটা আর পূরণ হল না। পরদিন সকাল থেকে তুমুল জ্বর সনাতনকে কাহিল করে দিল। দু'দিন পর সনাতনের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বাধ্য হয়ে সমর বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিল। কিন্তু চিকিৎসায় সাড়া মিলল না। জ্বরের ঘোরেই সনাতন সমাদ্দার দেহ রাখলেন। চোখে অন্ধকার দেখল সমর।
বাবা মারা যাওয়ার পর সমরের কাঁধে সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ল। ভাই-বোনের পড়াশোনা, সংসার চালানো। এমনকী বোনের বিয়ে। সব সমরের ঘাড়ে। হিমসিম খাচ্ছে সে। তখন কতই বা বয়স তার।
বোনের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল ঠিকই, কিন্তু তা ভেঙে গেল সনাতনবাবুর মৃত্যুর পর। ব্যাবসায় ক্রমশ মন্দা হতে লাগল। বাজারে প্রচুর দেনা করে ফেলেছিলেন সনাতনবাবু, তা কেউই জানতেন না। শেষমেশ ধানকল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হলেন সমরবাবু। সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ল। সমরবাবু চাকরির চেষ্টা করতে লাগলেন। কলকাতায় একটা চাকরি পেলেন ঠিকই, তবে মাইনে বেশ কম। কোনওরকমে খুব কষ্ট করেই সংসার চালাতে লাগলেন সমরবাবু।