পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হল একটি শারীরিক অসুখ, যাতে একজন মহিলার ঋতুচক্র, গর্ভধারণ ক্ষমতা, হরমোন এবং তাঁর বাহ্যিক সৌন্দর্যের উপর প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার করে। এর দরুন পরবর্তীকালে আরও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশিষ্ট স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইন্দ্রাণী লোধ এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়েছেন সম্প্রতি।
পলিসিস্টিক ওভারি কী?
পলিসিস্টিক ওভারি সাধারণ ওভারি অর্থাৎ ডিম্বাশয়ের থেকে আকারে সামান্য বড়ো হয় এবং এর মধ্যে ফলিকল্ বা ছোটো সিস্ট সংখ্যায় দ্বিগুন থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর লক্ষণ কী কী?
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর লক্ষণগুলি হলঃ
- অনিয়মিত ঋতুচক্র বা ঋতু একেবারেই না হওয়া
- গর্ভধারণে সমস্যা (গর্ভধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া)
- মুখে বা শরীরে সাধারণের তুলনায় বেশি রোম দেখা দেওয়া
- মাথার চুল পড়ে যাওয়া
- দ্রুতহারে অত্যধিক ওজন বেড়ে যাওয়া এবং ওজন সহজে না কমা
- ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া ও অ্যাকনের সমস্যা দেখা দেওয়া
- ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপ ও ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন অনুভব করা
প্রত্যেক মহিলার ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি একইরকম ভাবে প্রকাশ পায় না। কারও ক্ষেত্রে কম আবার কারও ক্ষেত্রে খুব বেশি দেখা দেয়।
মহিলাদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের একটি বড়ো কারণ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম। ঋতু না হলেও সন্তানধারণ করা সম্ভব। যদি সন্তানধারণে বিলম্ব দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হয় কেন?
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কেন হয় এর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। যদি পরিবারে আগেও অন্য কারও (মা, দিদি বা মাসি) এই রোগ হয়ে থাকে, তাহলে এর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর লক্ষণগুলি হরমোনের মাত্রায় অস্বাভাবিকতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। হরমোন শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ওভারি থেকে টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন নির্গত হয়। যে সমস্ত মহিলার পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম-এর সমস্যা থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই হরমোনটির মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দেখা যায় এবং এই রোগটির বেশিরভাগ লক্ষণই এই হরমোনটির কারণে হয়ে থাকে।
ইনসুলিন নামক হরমোনটি রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে এই ইনসুলিনের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। এই অবস্থাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। এক্ষেত্রে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। বর্ধিত গ্লুকোজের মোকাবিলা করার জন্য আরও বেশি করে ইনসুলিন নির্গত হয়। আর ইনসুলিনের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়া, অনিয়মিত ঋতুচক্র, বন্ধ্যাত্ব এবং টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রায় বৃদ্ধি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।