একটু ভালো ভাবে নজর রাখলে প্রমাণ পাবেন, মাথার চুল পড়ে যাওয়া এবং ত্বকের জৌলুস হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল পেটের অসুখ। তবে শুধু চুল পড়া কিংবা ত্বকের সমস্যাই নয়, পেপটিক আলসার কিংবা লিভার ক্যানসারের মতো বড়ো অসুখগুলির সূত্রপাতও কিন্তু নিয়মিত হজমের গোলমাল কিংবা অ্যাসিডিটি থেকে হয়। অতএব পেটের সুস্থতা জরুরি। কিন্তু কীভাবে পেট ভালো রাখবেন, সেই বিষয়ে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন কলকাতার এএমআরআই হাসপাতালের কনসালট্যান্ট গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সার্জন (অ্যাডভান্সড ল্যাপারোস্কোপি এবং জিআই অংকোসার্জারিতে বিশেষজ্ঞ) ডা. সঞ্জয় মণ্ডল।
এখন ফ্রিজে রাখা খাবার খাওয়ার অভ্যেস হয়ে গেছে সবার। এর ফলে পেটের সমস্যা বাড়ছে। মনে রাখতে হবে, যে- কোনও বয়স এবং লিঙ্গের জনসংখ্যার একটি বড়ো শতাংশকে প্রভাবিত করে পেটের সমস্যা। কোনও কারণে যদি শারীরিক মুভমেন্ট কমে যায়, তাহলে ভারী খাবার হজম হয় না ঠিক ভাবে। আর যারা মাংস বেশি খান, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেশি হয়। এর ফলে পাইলস এবং ফিসারও হতে পারে। তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত খাবারও নানারকম সমস্যায় ফেলতে পারে।
অপর একটি গুরুতর সমস্যা যা খাদ্য গ্রহণের ফলে ঘটতে পারে, তা হল— অস্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করা খাবার অর্থাৎ যা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। এর ফলে টাইফয়েড এবং ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। যে- পরিমাণ ক্যালোরি আমরা শরীরকে দিচ্ছি, তা যদি সঠিক পরিমাণে ক্ষয় না হয় পরিশ্রমের অভাবে, তাহলে ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত ওজন শরীরের পক্ষে মোটেই যে ভালো নয়, তা আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি।
আরেকটি পানীয় যা কিছু লোক ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেশি পান করার প্রবণতা রাখেন, তা হল অ্যালকোহল। এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদে নয়, দীর্ঘমেয়াদেও ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত অ্যালকোহল স্বল্পমেয়াদে রিফ্লাক্স এসোফ্যাগাইটিস এবং গ্যাস্ট্রাইটিস এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভারের সিরোসিস, হৃদরোগ, প্যানক্রিয়াটাইটিস এবং স্থূলতার দিকে নিয়ে যায়। শীতের ঋতুতে আমাদের তরল বিশেষত জল কম পান করার প্রবণতা থাকে এবং এর ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে, তাদের আরও বেশি সাবধান হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, ডিহাইড্রেশনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা এবং পাইলস ও ফিসারের সমস্যাও বেড়ে যায়। তাছাড়া, শীতকালও এমন একটি সময় যখন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই, আমাদের সঠিক যত্ন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।