আধুনিক জীবনশৈলীতে ব্যস্ততার কারণে মানুষের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট-এর উপর নির্ভরতা বাড়ছে। পরিবারের ব্যাপ্তি এখন ছোট্ট গন্ডিতে সীমাবদ্ধ। ফলে কাজের চাপ ভাগ করার মতো পরিবারের সদস্য তেমন আর কাউকে পাওয়া যায় না। এর উপর আছে কর্মস্থলের চাপ ও ব্যস্ততা। পরিচারিকার উপস্থিতিও এখন দূরঅস্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মেশিন-ই ভরসা। বাড়িতে অতিথি অভ্যাগতদের অভ্যর্থনা জানাতে হলেও, ছোটোখাটো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করতেই হয়। হই-হুল্লোড়ে সময়টা বেশ কেটে গেলেও আসল কাজ পড়ে থাকে অতিথিরা বিদায় নিলে। শো-কেসে সাজানো বাসনগুলো ব্যবহারের সুযোগ হয়তো এভাবেই আসে। কিন্তু সেগুলো আবার ধুয়ে মুছে তুলে রাখাটাও মস্ত বড়ো দাযিত্ব। আর যেখানে আপনার হাতে হাতে সাহায্য করার কেউ নেই, সেখানে বাসন ধোওয়ার সহজ উপায় হল ডিশওয়াশার-এর ব্যবহার। সুতরাং দেরি কেন? জেনে নেওয়া যাক ডিশওয়াশার সম্পর্কে কিছু জরুরি তথ্য।

কত রকমের হয়

সাধারণত দুই ধরনের ডিশওয়াশার পাওয়া যায়। প্রথমটি ফ্রি স্ট্যান্ডিং অর্থাৎ আলাদা করে কোথাও আপনি লাগাতে পারেন। দ্বিতীয়টি, বিল্ট ইন অর্থাৎ কিচেন কাউন্টারের নীচে স্থায়ী ভাবে লাগাবার ব্যবস্থা করতে পারেন।

সাধারণত ডিশওয়াশার ১২ থেকে ১৬ প্লেস-সেটিং-এর হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বেশি ১২ প্লেস-সেটিং-যুক্ত মেশিন পাওয়া যায়। ১ প্লেস-সেটিং মানে ১-১ ডিনার প্লেট এবং জলখাবারের প্লেট, বাটি, গেলাস, চা কিংবা কফির কাপ-প্লেট, ছুরি, ফর্ক এবং আরও ২টি করে চামচ এবং স্যালাড ফর্ক ওতে লোড করতে পারবেন। এছাড়াও কিছুটা খালি জায়গাও থাকে, যেখানে রান্না করার বাসনও রাখতে পারবেন।

ভারতীয় বাজার ছেয়ে গেছে ডিশওয়াশার-এ। বস, সিমেন্স, হোয়ার্লপুল, আইএফবি এবং এলজি কোম্পানির ডিশওয়াশার ভারতবর্ষে পাওয়া যায়। এগুলোর দাম মোটামুটি ২৬ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে।

ডিশওয়াশার লাগাবার আগে

ডিশওয়াশার লাগাবার আগে অবশ্যই চারটে জিনিসের খেয়াল রাখতে হবে। কোথায় রাখা হবে, সেখানে ইলেকট্রিক কানেকশন আছে কিনা, জলের কানেকশন আছে কিনা এবং জল নিকাশির ব্যবস্থা আছে কিনা। সাধারণত ডিশওয়াশার ২৪ ইঞ্চি / ২৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে এবং এর উচ্চতা হয় ৩৫ ইঞ্চি। এতে অ্যাডজ্যাস্টেবল স্ট্যান্ড দেওয়া থাকে।

মডিউলার কিচেনের সঙ্গে খুব সহজেই বিল্ট ইন ডিশওয়াশার লাগিয়ে নেওয়া যায়। নিজের বাড়ি হলে বিল্ট ইন ডিশওয়াশারই সবথেকে ভালো। যাদের বাড়ি বদল করার দরকার পড়ে, তাদের জন্য ফ্রি স্ট্যান্ডিং মডেল কেনাই যুক্তিসঙ্গত। পুরোনো বাড়ির কিচেনে ডিশওয়াশার লাগাতে হলে কিছুটা রিমডেলিং করার দরকার পড়বে। কিছু ভাঙচুর করে কাউন্টারের নীচে পর্যাপ্ত জায়গা বানিয়ে ওই পর্যন্ত জলের সাপ্লাই এবং জল নিকাশির ব্যবস্থা করতে হবে।

ডিশওয়াশার সম্পর্কে ভুল ধারণা

ডিশওয়াশার সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা এখনও সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। মানুষের ধারণা এতে ইলেকট্রিসিটি এবং জলের খরচ অনেক বেশি হয়। এই ধারণা ভ্রান্ত। ইনস্টলেশন-এর সময় কিছুটা খরচ হয়তো বেশি করতে হতে পারে, তবে এখনকার অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে বেশির ভাগই মডিউলার কিচেন থাকে, যেখানে ডিশওয়াশার বসানো খুব সহজ। এর জন্য আলাদা কোনও প্ল্যানিং করতে হয় না।

সেটিংস : ডিশওয়াশার সাধারণত অটোমেটিক হয়। ওর মধ্যে বাসন সাজিয়ে সাইকেল বেছে অন করে দিন। বাসন পরিষ্কার করে মেশিন নিজেই বন্ধ হয়ে যাবে। সাধারণত এতে ৪ ওয়াশ প্রোগ্রাম করা থাকে। এতে ডিলেড স্টার্ট-এরও সুবিধা দেওয়া থাকে। অর্থাৎ, সুবিধামতো ২-৪ ঘন্টা বা তার পরেও মেশিন চালু করার প্রোগ্রাম বেছে নেওয়া যায়। এতে চাইল্ড সেফটি লক-এরও সুবিধা দেওয়া আছে।

কিছু কিছু মডেলে অ্যাকুয়া এবং লোড সেনসার্স-ও দেওয়া থাকে, যা কিনা জল এবং ইলেকট্রিক সেভ করে। বাসনে নোংরা যদি বেশি লেগে থাকে তাহলে অ্যাকুয়া সেনসর বাসন পরিষ্কার করতে ঠিক যতটা জলের প্রয়োজন, ঠিক ততটাই জল নেবে। লোড সেনসর মেশিনের লোড অনুসারে জলের তাপমাত্রা এবং ওয়াশিং টাইম বেছে নেয়।

সুবিধা

ইউজার ফ্রেন্ডলি : ডিশওয়াশার ব্যবহার করতে পারলে খুবই সুবিধা হয়, সময়ও বাঁচে। বাসন পরিষ্কার করার জন্য সিংক-এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকার দরকার হয় না। কাজের লোকের উপরেও নির্ভর করতে হয় না। রান্নাঘর দেখতেও পরিষ্কার লাগে।

জল ও বিদ্যুৎ : ডিশওয়াশার-এর নতুন মডেলগুলি বিদ্যুৎ এবং জলের খরচের ব্যাপারে খুবই ইকোনমিক্যাল। সাধারণত একটি ইকোনমিক ওয়াশ সাইকেলে প্রায় ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। বাসন যদি হিটার চালিয়ে তাড়াতাড়ি শুকোতে চান, তাহলে প্রতি ওয়াশে ২ ইউনিট মতো কারেন্ট পোড়ে। ৮ থেকে ১০ লিটার জল খরচ হয় প্রতি ওয়াশ সাইকেলে, যা কিনা বাসন হাতে ধোওয়া হলে এর থেকে অনেক বেশি খরচ সাপেক্ষ।

ডিশ ছাড়া অন্যান্য বাসনও ধোয়া যায় : রান্নাঘরের যাবতীয় বাসন ডিশওয়াশার-এ ধুতে পারেন। প্লাস্টিক, কাচের বাসন আর চিনামাটির বাসন ডিশওয়াশার-এ সেফ থাকে। সাধারণত বাসন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলি বাসনের গায়ে একথা লিখে দেন।

লোডিং : ডিশওয়াশার নির্মাতা, মেশিনের সঙ্গে দেওয়া ব্যবহারবিধি বইটিতে ওয়াশার লোড করার সঠিক উপায় ছবি-সহ বুঝিয়ে দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী বাসন লোড করলে সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি লোডিং ও আনলোডিং-এর ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে। ডিশ এবং অন্য বাসন উলটে রাখুন, যাতে জলের তীব্র বেগ প্লেটের নোংরা দিকটার উপর পড়ে এবং বাসন ভালো করে পরিষ্কার হয়।

গরমজলের ব্যবহার : গরমজলের ব্যবহার করে বাসন ধুলে বাসন বেশি পরিষ্কার হবে। ভারতীয় রান্নায় তেল, মশলা একটু বেশি ব্যবহার হয়, তার ফলে গরমজলে বাসন ধোয়াটা অনেক বেশি কার্যকরী।

প্রি-ওয়াশ জরুরি নয় : ডিশওয়াশার নির্মাতারা বাসন প্রি-ওয়াশের পরামর্শ দেন ঠিকই কিন্তু এটা জরুরি নয়। এতে সময়, জল এবং বিদ্যুৎ-এর অপচয় হয়। ওয়াশার লোড করে রিনজ ওনলি অপশন বাছতে পারেন।

পরিষ্কার করা : মাঝেমধ্যেই ডিশওয়াশার পরিষ্কার করা উচিত। উপরের র‌্যাকের মধ্যে কাপে আধকাপ ভিনিগার ঢেলে মেশিন চালালে, মেশিন পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং গন্ধও দূর হবে। এছাড়াও ওয়াশারের ফিলটার পরিষ্কার করা উচিত, যাতে ড্রেন লাইন বন্ধ হয়ে না যায়।

ফুল ইন্টিগ্রেটেড ডিশওয়াশার লাগান : এটি আপনার রান্নাঘরের স্ল্যাবের নীচে একই লেভেলে ফিট হয়ে যাবে। মেশিনের অপারেটিং প্যানেল আপনার সামনে থাকবে। ওয়াশার-এর ড্রেন রান্নাঘরের ড্রেনের সঙ্গে মিশে যাবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...