প্রকৃতির এক নিজস্ব গন্ধ আছে। বৃষ্টি ভেজা সোঁদা মাটির গন্ধ, ফুল, ফল, গাছ- প্রতিটি প্রাণীরই নিজস্ব গন্ধ, তার পরিচয় বহন করে। যে-গন্ধ মানুষের শরীরে মনে আরাম-আনন্দ আনে তাই-ই পারফিউম। প্রত্যেক মানুষের রুচি আলাদা, তাই পছন্দও আলাদা, কেউ ভালোবাসে চন্দনের গন্ধ কেউ বা তুলসী, কেউ-বা মিন্ট। সেই প্রাচীন যুগ থেকে পারফিউম বা সুগন্ধীর ব্যবহারের প্রচলন। খ্রিস্ট জন্মের হাজার বছর আগে থেকেই Perfume-এর ব্যবহার রমরমিয়ে চলছে। প্রাকৃতিকভাবেই ব্যবহার করা হতো সুগন্ধীর। গাছের পাতা, ফল, আঠা, তেল, ফুল, গাছের ছাল থেকেই মূলত সুগন্ধ বের হয়। এইগুলোকে বিভিন্নভাবে জারিত করে তৈরি হয় পারফিউম।
ভারতীয় প্রাচীন গ্রন্থেও সুগন্ধীর উল্লেখ আছে। অগ্নিপুরাণে প্রায় ১৫০-এর বেশি ধরনের সুগন্ধীর দৈনন্দিন ব্যবহারের উল্লেখ আছে। পুজো, স্নান, রকমারি পদ তৈরি, রূপচর্চা, ঔষধি তৈরি ইত্যাদি। রামায়ণ-মহাভারত মহাকাব্যেও সুগন্ধীর কথা বহুবার এসে পড়েছে। সন ৮৪০-তে বৈজ্ঞানিক উপায়ে আতর ব্যবহারের কথা জানা যায়। ভারতীয় আতর সুদূর মিশর, আরব, ইরান, পারস্য, আফগানিস্তান প্রমুখ দেশেও ব্যাবসা সূত্রে যেত। যদিও বৈদিক যুগ থেকে আতরের ব্যবহার মিশর দেশে প্রচলিত ছিল। মুঘল বাদশাহরাও ছিলেন সুগন্ধের পূজারি। নূরজাহান নিজেই নিজের পছন্দের আতর তৈরি করে নিতেন। সুগন্ধীর ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই শৌখিন। প্রায় তিরিশ রকমের গোলাপের আরকের মধ্যে চন্দন তেল মিশিয়ে পাঁচ সের আতর তৈরি হতো। এত আতর কিন্তু বেশিদিন লাগত না ফুরিয়ে যেতে।
শুধুমাত্র নিজের ব্যবহারের জন্যই নয়, আত্মীয়স্বজনকে উপহারও পাঠানো হতো। এইভাবে রাজস্থানের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছিল নূরজাহানের বিশেষ Perfume। ক্রমশ রাজস্থানে আতরের রমরমা ব্যাবসা শুরু হয়। এখনও রাজস্থানের কোনও কোনও স্থানে গোলাপের চাষ হয় শুধুমাত্র আতর তৈরির জন্য। এই মরুভূমির মাটিতে চাষ করা বেশ কষ্টসাধ্য, তবু খসের চাষ এখানে যথেষ্ট ভালো হয়। এর সুগন্ধই তাকে ঠাঁই দিয়েছে আতরদানিতে। রাজস্থান থেকেই আতরের ব্যাবসা ছড়িয়ে পড়েছিল আফগানিস্তান, ইরাক, ইরানে তথা বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের সহায়তায় সুদূর চিন দেশে। যখন এই আতর পারস্যে পৌঁছায় সেখানে চন্দন তেলের পরিবর্তে অ্যালকোহল দিয়ে দ্রাবক অর্থাৎ গোলাপ-পাপড়ি কিংবা খসকে জারিত করে, যে-তরলটি পাওয়া গেল, তা হল আজকের ‘সেন্ট’ বা সুগন্ধী।