আমি ৩০ বছর বয়সি অবিবাহিতা। আমি ছাড়াও বাড়িতে আমার তিন দাদা রয়েছে। আমিই ওদের একমাত্র বোন। স্বাভাবিক ভাবে ওদের আদরের বোন হওয়া উচিত ছিল কিন্তু ওরা কোনওদিন আমার সঙ্গে ভালো ভাবে কথা পর্যন্ত বলেনি, আদর করা তো দূরের কথা! মা প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন তাই বাড়ির কাজকর্ম, পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে আমিই সামলাতাম। তা সত্ত্বেও আমার মেজদা আমাকে কিছুতেই সহ্য করতে পারত না। ঝগড়া করার সঙ্গে সঙ্গে গায়েও হাত তুলত। একবার গলা টিপে প্রায় মেরেই ফেলেছিল, মা এসে সেদিন আমায় প্রাণে বাঁচিয়েছিল।
মেজদা চাকরি পায়নি বলে সবসময় ডিপ্রেসড্ থাকত। কারও ওপর নিজের হুকুম চালাতে পারত না বলে আমাকেই যখন তখন মারধর করত। একদিন হঠাৎ-ই ও আত্মহত্যা করে। মেজদার মৃত্যুর পর মা-র শরীর আরও খারাপ হয়ে পড়ে এবং মায়েরও মৃত্যু হয়।
এরপর আমার বড়ো দাদা বিয়ে করে। আমি মনে মনে ভাবি, বউদি আসায় হয়তো বাড়িতে একটু প্রাণ আসবে। আমিও বাড়ির কাজে সাহায্য পাব। একাকিত্বও কাটবে। কিন্তু উলটে বাড়ির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল। বউদি বাড়ির কোনও কাজ করত না। আমার কাজ আরও বেড়ে গেল, তার উপর পেট ভরে খেতে দিত না। বউদি বাড়িতে আসতেই আমাকে বিয়ে করে নেওয়ার জন্য তাড়া দিতে আরম্ভ করে। মায়ের মৃত্যুর পরেই আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যেহেতু পড়াশোনার শখ ছিল তাই প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে আমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি।
আমি বিয়ে করতে চাই না, চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই কিন্তু আমার দুই দাদা কিছুতেই এতে রাজি নয়। আমার ছোড়দা বিয়ের জন্য খুবই চাপ দিচ্ছে আর বলছে বিয়ে না করলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। ওই বাড়ির ওপর আমার নাকি কোনও অধিকার নেই, ওটা খালি ওদের দু'জনেরই।
কখনও কখনও মনে হয় আত্মহত্যা করি। ছোটো থেকেই আমার জীবন দুঃখের মধ্যেই কেটেছে। কখনও কেউ আমার সঙ্গে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলেনি। আমার জন্মের কয়েকদিন পরেই বাবা মারা যান। মা আমাকে অপয়া বলতেন। ভাইয়েরা মারত, বকাবকি করত। বউদি এসেও আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা আরম্ভ করল। এদিকে সারাদিন বাড়িতে আমি হাড়ভাঙা পরিশ্রম করি।