শারীরিক, মানসিক চাহিদা এবং সামাজিক রীতি অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ধারা প্রচলিত। জীবনের প্রায় চারভাগের তিনভাগ সময় কেটে যায় বৈবাহিক সম্পর্কে। কিন্তু এই বৈবাহিক সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে একটা সরু সুতোর ওপর। ভারসাম্য রাখতে পারলে সম্পর্ক টিকে থাকবে, না রাখতে পারলে পতন অনিবার্য। আর এই পতনের সূত্রপাত হয় ছোটো ছোটো অশান্তি Marital unrest  দিয়ে। তাই এড়িয়ে চলা উচিত দাম্পত্য অশান্তি। কিন্তু কীভাবে?

Relationship article
Model: Shubhajit Adgiri & Gargi Kundu

মনে রাখতে হবে, দাম্পত্য সম্পর্কের মূল ভিত্তিটাই হল বিশ্বাসের। কিন্তু কিছুকিছু সময় পরস্পরের মন জোগানোও প্রয়োজন। আসলে জীবন এক রঙ্গমঞ্চ। সংসারী মানুষ সেই রঙ্গমঞ্চের কুশীলব। জীবন-নাটকে সাফল্য পেতে হলে ভালো অভিনয় করতে হবে। যিনি যত ভালো অভিনেতা, সংসারজীবনে তিনি ততই সফল। আর ভালো অভিনয়ের জন্য কিছু আদবকৌশলও রপ্ত করতে হয়। জেনে-শুনে, দেখে-বুঝে আগে থেকেই সংলাপ তৈরি করে রাখতে হয়। কোথায়, কখন, কতটা বলবেন, কী বলবেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, সংসারের সুখশান্তি বজায় রাখার জন্য অভিনয় করা কোনও খারাপ কাজ কিংবা দোষের নয়। তাই ভাব-ভালোবাসা, স্নেহ-আদরের পাশাপাশি, আবেগ-অনুভূতিকে মাধ্যম করে প্রিয়জনের মন ছুঁতে হবে। আর পালন করতে হবে কিছু লৌকিকতা।

জীবনসঙ্গীকে সুখী রাখার উপায়

  • দেখাতে হবে সম্মান, সৌজন্য। প্রকাশ করতে হবে ভালোবাসা। আপনার সঙ্গীর থেকে আপনি ঠিক যা যা চান (সম্মান, সহানুভূতি, সেক্স প্রভৃতি) কিংবা আশা করেন, সঙ্গীকে ঠিক তাই দেওয়ার চেষ্টা করুন।
  • সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আবেগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আবেগ ধরে রাখুন এবং কাজে লাগান।
  • ভুল বোঝাবুঝি হলে নরমপন্থী আচরণ বজায় রাখুন, সুফল পাবেন।
  • সঙ্গীর ভালো কাজের প্রশংসা করুন, প্রেরণা পাবে এবং আরও ভালো কাজ করে দেখাবে।
  • ভুল করলে চোটপাট না করে ভালোভাবে বুঝিয়ে ভুল শুধরে দিন।
  • বাইরের লোকের সামনে সঙ্গীর সমালোচনা করবেন না। প্রাইভেসি বজায় রাখুন।
  • মনে রাখবেন, ‘নোবডি ইজ পারফেক্ট’। সুতরাং, ভুল-ত্রুটি হবেই। আর যদি সত্যিই গুরুতর কোনও ভুল হয়ও কারও, তাহলে অপরজনকে ধৈর্য ধরে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
  • অন্যের সঙ্গে নিজের পার্টনার-এর তুলনা টেনে ছোটো করবেন না।
  • একে অপরকে স্পেস দিন। যাতে সে বাবা-মা কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিজের খুশি মতো সময় কাটাতে পারে।
  • সঙ্গীর সব কথায় আপনার এক মত না-ও থাকতে পারে কিন্তু নিজের মত সঙ্গীর উপর জোর করে চাপাতে যাবেন না, হিতে বিপরীত হতে পারে। শুধু কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা কিংবা পরামর্শ দিতে পারেন।
  • কোনও কারণ ছাড়াই মাঝেমধ্যে উপহারসামগ্রী তুলে দিন আপনার সঙ্গীর হাতে। এতে সঙ্গী খুশি হবে এবং সম্পর্কের বুনিয়াদ আরও শক্ত হবে।
  • পুরোনো সমস্যার কথা তুলে তিক্ততা বাড়াবেন না। আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য গঠনমূলক কথা বলুন।
  •  সমস্যা যতই গভীর হোক, ভেঙে পড়ার মনোভাব প্রকাশ করবেন না। বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারবেন এমন আশ্বাস দিন।
  • শাসন এবং সোহাগের মধ্যে যেন ভারসাম্য থাকে। বলপূর্বক কোনও কিছু চাপিয়ে দেবেন না এবং দমনপীড়ন নীতি পরিত্যাগ করুন।
  • রাগ, জেদ পরিত্যাগ করুন। সহনশীল এবং নমনীয় হওয়ার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, সঙ্গীর কাছে নতিস্বীকার করলে আপনি ছোটো হয়ে যাবেন না, বরং নিজের উদার মানসিকতার পরিচয় প্রকাশিত হবে।
  • জ্ঞানে-গুণে আপনি বড়ো হলেও, তা সঙ্গীর কাছে জাহির করবেন ন। আত্ম-অহংকার ছেড়ে আপনি স্বাভাবিক আচরণ করলেই বরং বেশি সম্মান এবং প্রশংসা পাবেন সঙ্গীর থেকে।
  • ঘরে-বাইরের কাজ ভাগ করে নিন। যার যতটা ক্ষমতা, সেই অনুযায়ী কাজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে খুশি থাকুন।
  • ‘আমি’ বা ‘আমার’ শব্দ প্রয়োগ না করে, ‘আমাদের’ বললে বেশি খুশি হবেন জীবনসঙ্গী।
  • দাম্পত্য জীবনে সেক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরস্পরকে সেক্সুয়ালি তৃপ্ত করার চেষ্টা করুন। কোনওরকম হঠকারিতা নয়, আলাচনার মাধ্যমে জীবনসঙ্গীর পছন্দ-অপছন্দের কথা জেনে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স করুন।
  • সংসারের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য মাঝেমধ্যে বেড়াতে যাওয়া খুবই প্রয়োজন। মাসে অন্তত একটি দিন বাড়ির বাইরে রেস্তোরাঁয় খান, ঘুরুন, সিনেমা-নাটক দেখুন। আর বছরে অন্তত এক-দু’বার দূরে কোথাও বেড়াতে যান। সম্পর্কের বাঁধন মজবুত করার জন্য নির্জনে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানো ভীষণ প্রয়োজন।
  • টাকা-পয়সা যেহেতু জীবনের অনেক সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে, তাই অর্থসঞ্চয় জরুরি। তবে সবসময় ‘টাকা টাকা’ করা যেমন ঠিক নয়, তেমনই, নিজের পকেটের ওজন না বুঝে ব্যয় করে সমস্যা তৈরি করাও ঠিক নয়। অর্থাৎ, গগনচুম্বী চাহিদার কুঅভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
  • মনে রাখবেন, দাম্পত্য সম্পর্ক টিকে থাকে বিশ্বাসের উপর। তাই বিশ্বাস রাখবেন, অহেতুক সন্দেহ করবেন না সঙ্গীকে। অন্যের কথা শুনে যাচাই না করে, দোষারোপ করা ঠিক নয়।
  • ধূমপান এবং মদ্যপানের কুঅভ্যাস ত্যাগ করুন। কারণ, নেশা যেমন মানসিক বিপর্যয় ঘটায়, তেমনই শারীরিক ভাবেও ধীরে-ধীরে অক্ষম করে তোলে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়়, দাম্পত্য অশান্তির Marital unrest মূলে রয়েছে নেশা। তাই, নেশা ছাড়ুন।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...