শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্কের  Relation তিক্ততা নিয়ে বড়ো পর্দায়  বহুদিন ধরেই গল্পের গরুকে গাছে তোলা হচ্ছে। এখন তো টেলিভিশনের সিরিয়ালেও এটা একটা আমোদের ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এই সম্পর্কের অম্লমধুর স্বাদ এমনই যে, দর্শকরা এর আকর্ষণে হাজির হয় পর্দার সামনে।

কখনও আবার  টিভি ধারাবাহিকে শাশুড়ি-বউমার সম্পর্ককে Relation তিক্ততার মোড়ক লাগিয়ে দর্শকদের সামনে পেশ করা হয় মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে। বাস্তবে সেইরকমই কিছু যে ঘটবেই, তা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যায় না। শাশুড়ি-বউয়ের মতান্তর থাকলেও যে মাধুর্যের অভাব ঘটবে, এমনটা কখনওই সত্যি নয়।

শাশুড়ি, মায়ের সমতুল্য। বিয়ের পরে মেয়েরা মায়ের স্নেহের কোল ত্যাগ করে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক পরিবেশে এসে পড়ে। সেখানে একমাত্র শাশুড়িই পারেন নতুন বউকে মাতৃস্নেহে আপন করে, সংসারের একজন করে নিতে। কিন্তু শুধু আদর নয়, শাসনও প্রয়োজন আছে বই-কি। সংসারের হাল ধরতেও নতুন বউয়েরও উচিত শাশুড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেকে শাশুড়ির পছন্দে গড়ে নেওয়া।

আমাদের সমাজের চিত্রটাই এমন যে ‘শাশুড়ি’ নামটাই ভীতির সঞ্চার করে। শাশুড়ি মানেই কুটিল, ঝগড়াটে, হীন মনোবৃত্তির মানুষ, এমনই একটা মনগড়া ধারণা জন্মে গেছে। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে ঘর করতে হবে, বিয়ের আগে থেকে এটা ভেবেই মেয়েরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। আধুনিকাদের মনে এটাই বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, শাশুড়ির সঙ্গে একত্রে সংসার করা এমনকী থাকাটাও অসম্ভব।

বহুক্ষেত্রেই দেখা গেছে, মেয়েদের মনে শাশুড়ির প্রতি ভ্রান্ত ধারণা আরোপ করতে, মেয়েদের মায়েরাও এক বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকেন। বাপের বাড়িতে কোনও কাজ শেখাতে গিয়ে মায়েরা প্রায়শই বলে বসেন, ‘এটা-ওটা ভালো করে শিখে নে, নয়তো শ্বশুরবাড়িতে গেলে শাশুড়ি কথা শোনাবেন।’ বিয়ের আগে থেকেই মেয়েরা ধরে নেয় তার করা কোনও কাজই শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে প্রশংসিত হবে না। অথচ এই মায়েরাই ভাবেন না যে, তারাও একদিন ছেলের বিয়ে দিয়ে শাশুড়ি হবেন এবং সেক্ষেত্রে ছোটো পর্দার কুটিল শাশুড়ির থেকে কোনও অংশে তারাও কম যাবেন না। মায়েদের উচিত মেয়েকে শেখানো যাতে শ্বশুরবাড়িতে এসে শাশুড়িকে যোগ্য সম্মান দেয় এবং শাশুড়ির কথা মতো সংসারে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে।

যুগ বদলাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শাশুড়ি-বউমার সম্পর্কেও সমাজের পরিবর্তনের চিত্রটা ছাপ ফেলছে। আজ ঘরে ঘরে শাশুড়িরা শিক্ষিত এবং বহুক্ষেত্রে বাইরের জগতের সঙ্গে যুক্ত। বউমারা অধিকাংশই চাকুরিরতা। জানা-বোঝার পরিধি-টা তাদের আজ অনেক বড়ো। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, আত্মীয়তা বজায় রাখাটা এখন অনেক স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

আদর্শ শাশুড়ি হবেন কী করে?

অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের কারণেই হোক অথবা কেরিয়ার তৈরি করতেই হোক, বউমাকে চাকরি করতে বেরোতে হচ্ছে। সে সংসারে সময় দিচ্ছে কম।

  • রেগে যাবেন না। নেগেটিভ ভেবে বসবেন না যে বাড়িতে কাজের ভয়ে চাকরির জগৎটা সে বেছে নিয়েছে। অকারণে সেখানে সে সময়ের অপচয় করছে।
  • সময়ের প্রয়োজনে তাকে বাইরের কাজের জগতে পা-রাখতে হয়েছে। সুতরাং চেষ্টা করুন চাকুরিরতা বউমাকে কীভাবে কিছুটা রিলিফ দেওয়া যায়।
  • তার কাজের দায়িত্ব লাঘব করতে অন্তত বাড়ির কাজে তাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করুন।
  • ভুলভ্রান্তিতে তাকে অযথা বকবকি করবেন না।
  • নাতি-নাতনির দেখাশোনার দায়িত্ব যতটা সম্ভব নিজেদের উপর নিন।
  • রান্নাঘরেও রান্নার সুবিধার্থে বউমার সঙ্গে কাজে হাত লাগান।
  • অফিসে বেরোবার আগে ও পরে বউমার খাওয়াদাওয়ার উপরও দৃষ্টি রাখুন যাতে বাইরের কাজের প্রেশারে তার শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে না-পড়ে।
  • বাড়ির যে-কোনও ভালো-মন্দে সিদ্ধান্ত নিতে হলে বউমাকেও বাড়ির সদস্য হিসেবে তার মতামতও গ্রহণ করুন, এতে দুপক্ষেই একটা নির্ভরতা আর ভরসার জায়গা তৈরি হবে।
  • এই সম্পর্ক আরও মধুর হবে যদি আপনি জেনারেশন গ্যাপের কথাটা মাথায় রাখেন।

বউমাকে খুশি করতে

শাশুড়ি হয়ে বউমাকে খুশি রাখা অথবা তার মন ভালো রাখা দোষের মনে করবেন না।এও ভাববেন না যে এতে আপনার সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সুতরাং আপনার সহমর্মিতা এবং বউমার জন্য দুশ্চিন্তা আপনার বউমাকে আনন্দে রাখবে এবং আপনার প্রতি সম্মান বাড়াতেও সাহায্য করবে। বউমাকে বলুন—

  • বউমা অফিস যাচ্ছ, বেশি রোদ্দুর হলে মাথায় ছাতা দিও।
  • সকালে উঠে তাড়াহুড়ো করে রান্না করতে হবে না। পরে আমি ধীরেসুস্থে করে নেবখন।তুমি অফিসের জন্য তৈরি হও।
  • আজ বউমা, তুমি খেতে বসো আমি গরম গরম পরোটা ভেজে দিচ্ছি। রোজ তুমি আমাদের গরম ভেজে খেতে দাও, আজ তুমি আগে বসো।
  • আজ অফিসের পরে শপিং-এ যাবে বলছিলে, তুমি ঘুরে এসো আমি বাচ্চাকে (নাতি অথবা নাতনি) সামলে নেব, তুমি ওকে নিয়ে চিন্তা কোরো না।
  • আমার যে-শাড়িটা তোমার পছন্দ, আজ রাত্তিরের পার্টিতে সেটা পরে যেও।
  • অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে এসেছ। তুমি বসো, আমি চা করে দিচ্ছি।
  • ভালো করে সেজেগুজে থাকবে। এখনই তো তোমার সাজাগোজার বয়স।
  • তোমার বাপের বাড়ির সকলে আসবেন, ওনাদের পছন্দের রান্না করো।
  • তোমার মাথা ধরেছে, একটু বিশ্রাম করো। আমি এদিকটা সামলে নিচ্ছি।

মনোবিদদের মতে

শাশুডি-বউমার সুসম্পর্কের Good relation সম্ভবত সেরা নজিরটি তৈরি করেছে আপর্ণা সেনের  ছবি, ‘পারমিতার একদিন’। সময়ের সঙ্গে তাল রেখে শাশুড়ি-বউমাকে সম্পর্কের বুনিয়াদটা তৈরি করে নিতে হবে। বউ-মেয়ের মধ্যে যেমন পার্থক্য করা উচিত হবে না, সেরকমই মায়ের মতো করে শাশুড়িকেও ভালোবাসতে হবে। বউকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত এবং ভুল করলে স্নেহ দিয়ে তাকে বোঝানো উচিত। বউমাকেও সেবার মনোভাব রেখে শাশুড়ির সঙ্গে মেলামেশা করতে হবে। সময়-সময়ে উভয়ের সমস্যা উভয়ে যদি শেয়ার করেন, তাহলে শাশুড়ি-বউমার সম্পর্ক এক আলাদা মাত্রা পাবে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...