সম্প্রতি এক বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলার শুনানিতে রায় দেওয়া হয়েছে যে, যদি কোনও স্ত্রী তার স্বামীকে ইচ্ছাকৃত ভাবে যৌনসুখ দিতে অস্বীকার করেন, তাহলে ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইন মোতাবেক, দোষী সাব্যস্ত হবেন ওই স্ত্রী। আদালত এও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক টিকে থাকার অন্যতম উপায়ের মধ্যে আছে শারীরিক সুখভোগ। আসলে এই রায় সত্যিই অভিনব, কারণ বাস্তবে স্ত্রী যদি যৌনসুখ না পান স্বামীর দ্বারা, তাহলে তিনি অভিযোগের আঙুল তোলেন স্বামীর দিকে। কিন্তু এক্ষেত্রে অসুখী স্বামীর পক্ষে প্রথম রায় দিয়েছে আদালত।
এখন প্রশ্ন, নারী-পুরুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় কি শুধু শারীরিক সুখলাভ আর বাচ্চার জন্ম দেওয়ার জন্য? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো ‘না’ হবে। কারণ, দাম্পত্য সম্পর্কের আরও অনেকগুলি স্তর আছে। ধর্মমত যাইহোক না কেন, বিবাহ মানে নারী শুধু বাচ্চার জন্ম দেবে আর স্বামীকে যৌনসুখ দিয়ে খুশি রাখবে, আজকের নারী সমাজ আর তা মেনে নিতে নারাজ। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে যৌনসুখ দেবেন এবং সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবেন, এই দুটি বিষয় অবশ্যই বিয়ের অলিখিত চুক্তি কিংবা প্রতিশ্রুতি। তবে এটাই যে বিবাহের একমাত্র উদ্দেশ্য, তা কিন্তু নয় নিশ্চয়ই।
বিবাহের পর আইনি বন্ধন এক বিষয় আর দাম্পত্যে ভালোবাসা, সম্মান প্রদর্শন কিংবা সংবেদনশীলতা অন্য এক বিষয়। আসলে আইনের বাইরে আছে অন্য এক মানবিক দিক। তাই দাম্পত্যে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু তার পরিবর্তে যদি কেউ একজন অতিরিক্ত অধিকার ফলান, অসম্মান কিংবা ইমোশনাল অত্যাচার করেন, তাহলে তা আদালতের বিচারে যে রায়-ই ঘোষিত হোক-না কেন, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এক্ষেত্রে ক্ষতির শিকার হবেন, এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
দাম্পত্যে যৌনসুখ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তা একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না। সুখ-দুঃখে পরস্পরের সঙ্গে থাকা এবং শারীরিক- মানসিক অসুবিধা কিংবা যন্ত্রণায় সহানুভূতিশীল হওয়া অবশ্যই কর্তব্য। সঙ্গীর মৃত্যুর পর তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যেমন আইন মাফিক ভোগ করার অধিকার পেয়ে যান জীবিত ব্যক্তিটি, ঠিক তেমনই, এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে সঙ্গীর জীবদ্দশায় তার প্রতি যতটা সম্ভব মানবিক হওয়া উচিত।