অনন্যার দুটি সন্তান। দুই মেয়ে। রিয়ার যখন ১১ বছর বয়স তখন রিমার জন্ম। এত বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হওয়াতে অনন্যা একটু অসুবিধার মুখেই পড়ে। তবুও স্কুলের চাকরি বলে সামান্য স্বস্তি ছিল অনন্যার। মেয়ের ২ বছর মতো বয়স হওয়ার পর অনন্যা নিজের কিছুটা সুবিধা হবে বলে রিয়াকেও রিমার কিছুটা দায়িত্ব দেবে বলে মনে করেছিল।
বিশেষ কিছুই নয়, মাঝেমধ্যে দোকানবাজার করে বাড়ি ফিরতে অনন্যার অল্পস্বল্প দেরি হয়ে যেত। বাচ্চার দেখাশোনার জন্য যে হেল্পিং হ্যান্ড ছিল সে সন্ধে ছটার পর কিছুতেই থাকতে রাজি হচ্ছিল না। অনন্যা চাইছিল, রিয়া যেহেতু একটু বড়ো হয়ে গেছে, আধঘণ্টা মতো যদি ও ছোটো বোনকে একটু সঙ্গ দিতে পারে তাহলে অনন্যাকে তাড়াহুড়ো করে বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় না। ওর হাতেও একটু সময় থাকে।
এই কথা রিয়াকে বলতে প্রথমে ও কিছুতেই রাজি হয় না বোনকে দেখতে। পড়াশোনার ক্ষতি হবে এই আছিলায় দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায়। শেষে অনেক বোঝাবার পর অনন্যা রিয়াকে রাজি করাতে পারে। তাও এই দায়িত্ব নেওয়ার বদলে অনন্যাকেও প্রমিস করতে হয় রিয়ার পছন্দের জিনিস কিনে এনে দেবে।
তিন-চার দিন ঠিকঠাক চলার পর একদিন বাড়ি এসে অনন্যা দেখে রিমা একা একা ঘরে বসে খেলা করছে। বাইরের দরজা ভেজানো, রিয়া আশেপাশে কোথাও নেই। প্রায় পঁচিশ মিনিট পর রিয়া বাড়ি ঢুকতে অনন্যা জানতে পারে, ওদের বাড়ির পর ছটা বাড়ি ছেড়ে স্কুলের বন্ধুর বাড়ি থেকে দুটো গল্পের বই কালেক্ট করার জন্য রিয়া বোনকে একা বাড়িতে রেখে চলে গিয়েছিল। পরে কেন যাওয়া গেল না এই প্রশ্নের উত্তরে রিয়া পরিষ্কার মা-কে জানিয়ে দিল ওর পর গেলে বন্ধুকে বাড়িতে পেত না আর বইটা ওর তক্ষুনি দরকার ছিল। এরপর অনন্যা আর, রিয়ার উপর ভরসা করার সাহস করতে পারেনি।