মা-বাবা মাত্রেই স্বপ্ন দেখেন, সন্তানকে সুশিক্ষা এবং অনুশাসন দিয়ে মানুষ করবেন। আর সেটা করতে গিয়ে অনেক সময় নিজেদের অজান্তেই কিছু ভুল করে বসেন, যার কুপ্রভাব বাচ্চাদের উপরে গিয়ে পড়ে। যার ফলে বাচ্চা মানসিক ভাবে অভিভাবকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই নির্ভরশীলতাই হল কো-ডিপেনডেন্ট পেরেন্টিং।
হেলিকপ্টার পেরেন্টিং-এর মতোই কো-ডিপেনডেন্ট পেরেন্টিং-এর ক্ষতিকারক এফেক্ট রয়েছে। এই ধরনের সম্পর্কে মা-বাবা এবং বাচ্চার মধ্যে নির্ভরতা, অস্বাস্থ্যকর আকর্ষণ, নেশার অভ্যাস গড়ে ওঠে যা কিনা মা-বাবা এবং বাচ্চা, উভয়েরই সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে।
অনেক সময় কোনও ব্যক্তি অভিভাবক হয়ে যাওয়ার পর, নিজের সন্তানের সঙ্গে এমন সম্পর্ক তৈরি করেন, যেরকম সম্পর্ক তার নিজের মা-বাবার সঙ্গে ছিল অথবা নিজের মা-বাবার কাছেই শিখেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সেই ব্যক্তি শিশু বয়স থেকে যখনই নিজস্ব কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পা বাড়িয়েছেন, তাঁর অভিভাবকেরা সবসময় তাতে হস্তক্ষেপ করেছেন। যার ফলে অভিভাবকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমশ দুর্বল হয়েছে এবং সম্পর্কে দূরত্ব বেড়েছে।
বাচ্চার উপর প্রভাব
আপনার কাছে কো-ডিপেনডেন্সির সম্পর্ক হয়তো খুবই পছন্দের, ভালোলাগার কিন্তু আপনার সন্তানের জন্য কতটা ক্ষতিকারক সেটা কি আপনি বুঝতে পারছেন? আসলে এই ধরনের সম্পর্কে বাচ্চা নিজের ভাবনাচিন্তা বা সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিতে পারে না। সব সময় চেষ্টা করে মা-বাবার ইচ্ছের সঙ্গে নিজের ভাবনাচিন্তাকে জুড়ে রাখতে। সেই কারণেই তারা নিজের খুশি, নিজের লক্ষ্যের উপর ফোকাস করা ছেড়ে দেয়। পরে এরাই যখন পেরেন্ট হয়ে ওঠে, নিজের সন্তানের কাছেও এই একই প্রত্যাশা থাকে।
সন্তানকে কী করে বুঝবেন?
বাচ্চা হয়তো কোথাও বাইরে বেরোচ্ছে, সেই মুহূর্তে তার মা-বাবা তাকে দেখে তার পোশাক বদলাতে বললেন। কারণ হিসেবে তারা বললেন, পোশাকটি তাকে মানাচ্ছে না। এটি খুবই সাধারণ, স্বাস্থ্যকর কথোপকথন। কিন্তু এটা নিয়ে যদি তারা জোর করতে থাকেন বাচ্চাটিকে পোশাক বদলাবার জন্য এবং শেষমেশ তারা পোশাক বদলাতে বাধ্য করেন, তাহলে বুঝতে হবে এটা কো-ডিপেনডেন্ট টেন্ডেন্সির উদাহরণ।
এক্সপার্টদের মতে কো-ডিপেনডেন্ট অবিভাবকেরা প্রায়শই সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং অনুচিত ভাবে নিজের সন্তানের মাধ্যমে নিজেদের মানসিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনকে চরিতার্থ করার জেদ প্রকাশ করে থাকেন। এর ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমি সঠিক, তুমি নও
বেশির ভাগ অভিভাবকদেরই এটা মনের কথা, যেটা তারা নিজেদের সন্তানদের প্রায়শই বলতে থাকেন। বাচ্চার সিদ্ধান্ত ভুল এবং তারা যেটা বলছেন সেটাই সঠিক, এই মানসিকতা প্রায় সব অভিভাবকদের মধ্যেই কাজ করে। একই সঙ্গে তারা এটাও প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, তারা যা কিছু করছেন সবই সন্তানের ভালোর কথা ভেবে। এই ক্ষেত্রে বাচ্চা যদি অভিভাবকের সঙ্গে সহমত না হয়, তার মানে মা-বাবার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ জানানো। তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা।
ইমোশনাল অত্যাচার
অভিভাবকদের যখনই মনে হয় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে অথবা বাচ্চা বেশি তর্ক করছে, তখনই পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাবার ভয়ে কোনও রকম তর্কের মাঝেই কান্নাকাটি করা শুরু করে দেন অথবা বাচ্চার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে বাচ্চাকে রাজি করাবার জন্য প্রেশার ক্রিয়েট করেন। কো-ডিপেনডেন্সির এটি একটি উদাহরণ মাত্র, যেটার সাহায্য নিয়ে একজন অভিভাবক নিজের সন্তানকে তার মত অনুযায়ী রাজী করাতে চেষ্টা করেন।
ব্ল্যাকমেলিং
কো-ডিপেনডেন্ট রিলেশনশিপে মা-বাবার মুখ্য উদ্দেশ্য হয় বাচ্চাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা। তারা আশা করেন, বাচ্চা তাদের কথা শুনেই চলবে। কোনও ব্যাপারে সন্তানের যদি তাদের সঙ্গে মতের অমিল হয়, তাহলে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতেও তারা দ্বিধা করেন না। প্রথমে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেলিং করা শুরু করেন। তাতেও যদি বাচ্চাকে নিজের মতামত মানতে বাধ্য না করতে পারেন, তাহলে অনেক সময় তাদের ভায়োলেন্ট ব্যবহারের মুখোমুখি হতে হয় বাচ্চাকে।