বহু সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে, একজনের অভ্যাস Lies কথা বলা– যা অসুস্থতার সামিল। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মিথ্যাচারের সঙ্গে তার উদ্দেশ্যের কোনও সামঞ্জস্য দৃশ্যত নেই। হয়তো তা খুবই গভীর ও জটিল। এর প্রকাশ হয়তো বেশ কয়েক বছর ধরে চলে বা এমনকী হয়তো সারা জীবনভর। ব্যক্তিটি হয়তো জানেনই তিনি মিথ্যাচার করছেন বা হয়তো বিশ্বাস করেন যে, তিনি সত্যি কথা বলছেন৷ কিন্তু একথা তারা বোঝেন না যে তারা বস্তুত এক অলীক জগতে বাস করছেন।

এই রোগের শুরুর গড় বয়স ষোলো বছর এবং রোগীর বুদ্ধিমত্তা, গড়পরতা বা তার চেয়ে উঁচুতে। এরা সাধারণত ভালো কথা বলতে পারেন। সাধারণত এদের বাড়ির পরিবেশ খুব গোলমেলে, হয়তো বাবা বা মা বা পরিবারের কোনও ব্যক্তির মানসিক গোলোযোগ আছে। পুরুষ-নারী সমান ভাবে এই রোগের শিকার। এই ধরনের মানুষের সঙ্গে সাধারণত এডিএইচডি, মৃগী ও সিএনএস ইনফেকশন জড়িয়ে থাকে।

একজন কম্পালসিভ মিথ্যাবাদীকে কীভাবে চিনবেন?

এই ধরনের মানুষেরা সাধারণত বাস্তবের জমিতে সম্পূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন না। তারা তাদের Lies বিশ্বাস করেন এবং বেশির ভাগ সময় তা নিজের সেলফ-এস্টিম মেরামত করার প্রচেষ্টায়। প্যাথোলজিকাল মিথ্যাবাদীরা তাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়ে মিথ্যাচারণ করেন। গত রাতের ডিনারে কত খরচ হয়েছে থেকে শুরু করে গতবারে তার কুকুর কেনার বিষয়েও মিথ্যা জড়িয়ে থাকে৷ তারা মনে করেন প্রতিটি কথার পেছনে তাদের লাভের পরিকল্পনা কাজ করে। নিজেকে অসম্মানের হাত থেকে বাঁচাতে এদের চিনে রাখা খুবই প্রয়োজন।

কয়েকটি  স্টেপ যা আপনাকে সিদ্ধান্তে আসতে সাহায্য করবে

স্টেপ – রোগী অভ্যাসবশত, বহু দিন যাবৎ বাধ্যতামূলক ভাবে মিথ্যা কথা বলেন। এই অভ্যাসের শুরু ছোটোবেলা থেকে।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির বা স্কুলের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার স্বার্থে। মিথ্যা বলার ফলে হয়তো সমস্যার সমাধান সহজ হতো। এটা একটা খারাপ স্বভাব কিন্তু কাউকে ঠকিয়ে সুবিধা আদায়ের স্বার্থে নয়। এর থেকেই একজন কম্পালসিভ মিথ্যাবাদীর সঙ্গে একজন সোশিওপ্যাথের পার্থক্য বোঝা যায়।

স্টেপ ২– প্রতিবার একই গল্প করার সময়ে ডিটেলসগুলো এক থাকে না পালটে যায় দেখুন।একটা সহজ গল্প হল,ধরুন গতকাল রাতে উনি কী খেয়েছেন? হয়তো একবার বললেন ভাত আর চিকেন তারপর হয়তো আর একসময়ে বললেন মাছও ছিল। এদের কাছে বিবরণগুলো প্রতিনিয়ত পালটে যায়, নতুন নতুন তৈরি হয়।

স্টেপ ৩– আপনার ও সন্দেহভাজন মানুষটির উভয়ের কমন বন্ধুদের কাছে তার বলা কোনও ঘটনা মিলিয়ে দেখুন যে,গল্পটা কি পালটে গেছে বা কিছু নতুন চরিত্র ঢোকানোর জন্য পরিবর্তিত হয়েছে?

স্টেপ ৪– দেখুন মানুষটি কি অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য মিথ্যা বলছেন? কারণ এই মানুষগুলির প্রত্যেকের মনোযোগের মধ্যমণি হওয়ার প্রবল বাসনা থাকে, তার জন্য যতটা সাধ্য চেষ্টা করেন। এই সেন্টার অফ অ্যাটেনশন হতে চাওয়া, কখনও সমবেদনা আদায় করতে, কখনও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতে পারার জন্য, কখনও একঘেয়েমির হাত থেকে নিস্তার পেতে, আবার কখনও ইনসিকিওরিটির হাত থেকে বাঁচতে।

স্টেপ ৫– খোঁজ করে দেখুন মানুষটির কোনও নেশা বা গোপন ক্ষতিকারক অভ্যাস আছে কিনা। হয়তো মদ বা ড্রাগের নেশা বা জুয়া, বুলিমিয়া বা অ্যানোরেক্সিয়া গোপন রাখতে গিয়ে এই অসুস্থতা।

স্টেপ৬– মিথ্যাচারণ ধরা পড়ে গেলে মানুষটির প্রতিক্রিয়াগুলি লক্ষ্য করুন। তখন এরা প্রচণ্ড রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েন। আগের মিথ্যাকে ঢাকা দিতে গিয়ে আর একটি মিথ্যা চট করে বুনে ফেলেন অথবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পড়েন, প্রতিশোধ নেবার রাস্তা খোঁজেন।

স্টেপ ৭– সেই মানুষটি বাস্তব জগতে বাস করেন কিনা দেখুন। প্যাথোলজিকাল মিথ্যাবাদীরা বাস্তবের জগতে বাস করেন না এবং জীবনে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন না। তারা চাকরি ধরেন চাকরি ছাড়েন, পাকাপোক্ত সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন না। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এই মিথ্যা বলার জন্য।

চিকিৎসা কী?

কম্পালসিভ Lies চিকিৎসার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সাইকোথেরাপি আছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এই জীবন বিনষ্ট করা বদভ্যাস ছাড়াটা একান্তভাবে নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। এই বদভ্যাসে ভোগা আপনার বন্ধুদের উদ্বুদ্ধ করুন চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে উঠতে। নিজেকে এবং অন্যদের আরও ভালো ভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...