মানুষের জীবনে চারটি অধ্যায় রয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। Childhood, কৈশোর, প্রৌঢ়াবস্থা এবং বৃদ্ধাবস্থা। এই পুরো সময়কালে মানুষের জীবন, সুখ-দুঃখের টক-ঝাল-মিষ্টি অনেক ধরনের অনুভূতির সম্মুখীন হয়। শৈশব অর্থাৎ ছোটোবেলার স্মৃতি মানুষের এমন একটা অমূল্য সম্পদ- যেটা শেষ নিঃশ্বাস ফেলা পর্যন্ত স্মৃতিপটে থেকে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড়ো হয়ে ওঠাটা অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তির শৈশবের পরিস্থিতির উপর।
Childhood অবস্থায় আমরা শিশুকে ঈশ্বর জ্ঞান করি। সেই সময় তারা মিথ্যা কথা বলা, ছলচাতুরী, লুকোবার স্বভাব ইত্যাদি বদগুণগুলির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে। কোনওরকম চিন্তাও তাদের স্পর্শ করতে পারে না। খালি খেলাধুলো নিয়েই সময় কাটায় তারা। একটু বড়ো হলে যোগ হয় স্কুল এবং পড়াশোনা। মাঠে ময়দানে খেলতে গিয়ে প্রজাপতির পিছনে ছোটা, রাস্তায় জল জমলে কাগজের নৌকো বানিয়ে ভাসানো, পুতুলের বিয়ে দেওয়া ইত্যাদি৷ ছোটোবেলার স্মৃতি বয়সকালেও মন আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
অমূল্য শৈশব
একান্তে চোখ বুঁজে যদি শৈশবে ফিরে যাওয়া যায় তাহলে ক্ষণিকের জন্য হলেও জীবনের ওঠা-পড়া টেনশনকে খানিকটা দূরে সরিয়ে রাখা যায়। শৈশবের মধুর স্মৃতিগুলো মনের অবসাদ মুহূর্তে মুছে ফেলে। এই টেনশন, ঘাতপ্রতিঘাতের যুগের আবহে বড়ো হয়ে ওঠা বাচ্চারাও কি আমাদের মতো সুরক্ষিত জীবন, মা-বাবা এবং পাড়া-প্রতিবেশীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাচ্ছে? সদ্যজাত শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। ৮০শতাংশ শিশুরাই শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে জন্মাচ্ছে।
সামান্য বড়ো হতে শুরু করলে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিযুক্ত খাবারের বদলে সহজলভ্য, চটজলদি খাবারের বদঅভ্যাস বাচ্চাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অভিভাবকদের সময়ের অভাব এবং ভালোবাসার আতিশয্য এই অভ্যাসের জন্য মূলত দায়ী। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েন তাদের সন্তানদের জীবনকেও প্রভাবিত করে। আজকের অভিভাবকেরা ব্যস্ততা এবং টেনশন ভরা জীবনযাপনেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চারাও নিজেদের একাকী বোধ করে। চাহিদামতো মা-বাবার সঙ্গ তারা পায় না। এর ফলে আশেপাশে সমস্ত ব্যাপারে বাচ্চারা উদাসীন হয়ে পড়ছে এবং ছোটো বয়স থেকেই খিটখিটে, জেদি, বদমেজাজি হয়ে উঠছে।
খাওয়াদাওয়ার উপরেও এই বয়স থেকেই খারাপ প্রভাব পড়ছে এবং এর ফলে স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটছে। শিশুসুলভ চঞ্চলতা, দুষ্টুমি বাচ্চাদের জীবন থেকে কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে টিভি, কম্পিউটার গেমস খেলতে খেলতেই তার শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার অন্ধকারে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে সিলেবাসের অত্যধিক চাপ, অনলাইন ক্লাসের বোঝা এবং সাফল্যের জন্য ইঁদুর দৌড়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
মা-বাবার কর্তব্য
সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা মা-বাবার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ছোটো থাকতেই সন্তানকে সঠিক পথের দিশা দেখাবার জন্য মা-বাবার কর্তব্য পরিবারের এবং বাইরের আশেপাশের সব অশান্তি দূরে সরিয়ে রেখে, সন্তানের সঠিক বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করা। মা-বাবার নিজেদের ঝগড়া-অশান্তির জেরে বেশিরভাগ পরিবারের বাচ্চারা প্রয়োজনীয় পরিবেশ, প্রেম-ভালোবাসা পায় না। এমনকী সময়ের অভাবে অভিভাবকেরা সন্তানদের সঙ্গ পর্যন্ত দিতে পারেন না।
এখনকার নতুন প্রজন্মের অভিভাবকেরা ব্যস্ত কর্মজীবন এবং সোশাল লাইফে বেশি আকর্ষণ অনুভব করছেন। মা-বাবার অনুপস্থিতিতে বাচ্চারা তাদের শৈশব হারিয়ে ফেলছে। অবসাদগ্রস্ত, উদাসীন এবং জেদি হয়ে উঠছে আজকের প্রজন্মের বাচ্চারা।
যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জীবনশৈলীর পরিবর্তনও বাচ্চার শৈশব এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। বাইরের খেলাধুলো কমে গিয়ে এখন বাড়িতেই নানা মডার্ন গ্যাজেটস্-এর উপর বাচ্চাদের আকর্ষণ বাড়ছে। ভিডিও গেমস, কম্পিউটার ইত্যাদি নিয়ে সময় কাটানোতে বাচ্চারা অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। মা-বাবারাই বাচ্চাদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছেন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। বড়োদের উচিত বাচ্চাকে, ঠিক এবং ভুলের পার্থক্য বোঝানো, ভালো সংস্কার দেওয়া যাতে ভবিষ্যতে গিয়ে তারা মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে নিজেদের ব্যক্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। মা-বাবার ভালোবাসার সুরক্ষাকবচ বাচ্চার শৈশবের একাকিত্ব দূর করে ভবিষ্যতের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে, কারণ যে-কোনও ব্যক্তির জীবনের ভালোমন্দ নির্ভর করে তার শৈশব কেমন বা কীভাবে কেটেছে, তার উপর।
সন্তান পরিবারের একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ অংশ তাই ভালোবাসার সিঞ্চনে বেড়ে ওঠা বাচ্চার দৃষ্টিভঙ্গী এবং স্বভাবের বৈশিষ্ট্য একটা পরিবারকে সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করে। মা-বাবার ভুললে চলবে না তাদের দেওয়া পুরো সময়টা বাচ্চার কাছে কতটা অমূল্য, বিশেষ করে তাদের শৈশব গঠনে। বড়োদের কাছে ভালোবাসা পাওয়াটা বাচ্চাদের অধিকার। তাই Childhood-এর সেই অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে তাদের শৈশবকে পঙ্গু হয়ে যেতে দেবেন না