একথা সবাই মানবেন যে, জীবনে যতরকমের সম্পর্ক আমাদের বজায় রাখতে হয় তার মধ্যে দাম্পত্য সবচেয়ে জটিল। দুজন মানুষ একরাশ আশাপ্রত্যাশা আর স্বপ্ন নিয়ে একত্র হয় পরবর্তী জীবনটা সুখে কাটাতে। বিয়ের পরেই একে অপরের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তারপর একদিন পরিস্থিতি পালটায়। সম্পর্কের ওঠা-পড়াগুলো কেউ কেউ বুঝতে সফল হয়, কেউ পারে না। যারা পারে না তাদের কাছে পারিবারিক দায়দায়িত্ব পালন, অভিভাবকত্ব, কাজকর্ম, দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর না হয়ে বোঝা হয়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় দুজনের মধ্যে যথেষ্ট ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও, তারা সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না।

আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে সব কিছু এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে, দুজনে প্রায় ভুলেই যায় যে তারা একে অপরকে একদিন ভালোবাসত। এভাবে সঠিক জীবনযাপন করতে না পারার জন্য শুধু তারা নিজেরা নয়, তাদের পরিবার এবং বিশেষ করে তাদের সন্তানদের ভুগতে হয়। বাড়িতে একটা স্বাভাবিক মধুর পরিবেশ না থাকলে, যে-কোনও ব্যক্তির জীবনের সব দিকগুলোই অশান্ত হয়ে ওঠে এবং তিনি অনুভব করতে পারেন যে তার ব্যক্তিগত, পেশাগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

সুতরাং দম্পতিদের সুখী বৈবাহিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হওয়া খুবই জরুরি। যারা সদ্য বিবাহিত তাদের উচিত সঠিক ভাবে সম্পর্ক বজায় রাখা। আর যারা ইতিমধ্যেই সম্পর্কটা নষ্ট করে ফেলেছেন, তারা থামুন, ফিরে তাকান এবং মেরামত করুন। মনে রাখবেন সম্পর্ক বজায় রাখা, মেরামত করা– এই দুই পদ্ধতি হয়তো খুব কঠিন। তবে বদলের চেয়ে সবসময়েই তা শ্রেয়। প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্ক একে অন্যটির থেকে আলাদা, তাই একটি সম্পর্ক কী করে মেরামত করে ঠিক করা যায়, তার নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো বলা খুব কঠিন। তবে কতগুলো জেনারেল টিপ্স দিচ্ছি আমরা যা অনেকটাই সাহায্য করতে পারে।

গবেষণায়  দেখা গেছে যে সুখী বিবাহিত জীবনের ৬টি আঙ্গিক থাকে

  • প্রশংসা ও ভালোবাসা
  • দায়বদ্ধতা
  • পজিটিভ কমিউনিকেশন (সদর্থক কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা)
  • একত্রে সময় কাটানো
  • ভালো থাকার ইচ্ছাশক্তি
  • মানসিক চাপ ও বিপদের সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা

মেরামত নাকি পরিবর্তন?

অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে অসম্মান ও অবিশ্বাস দানা বাঁধেনি, তবুও দুজনে ভাবেন যে সব কিছু শেষ করে দেওয়ার সময় উপস্থিত। এই সময়ে ভাবতে হবে মেরামত করব না বদল করব? দম্পতি যদি বিচ্ছেদের কথা ভাবেন তাহলে বুঝতে হবে নিশ্চিত কিছু একটা খামতি হচ্ছে, কিছু একটা হারিয়ে গেছে। কিছু একটা সারানো, বদলানো এবং তারপর এগিয়ে যাওয়ার দরকার। এবার দুপক্ষকেই কতগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সম্পর্কের মেরামতি বেশ কষ্টদায়ক হতে পারে। বেশ কিছু সত্যের মুখোমুখি হলেও হতে পারেন যা নিজের এবং তার সঙ্গীর পক্ষে মধুর হবে না। সম্পর্কটিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য সময়, এনার্জি এবং সহানুভূতি বাড়াতে হবে। হয়তো বেশ কয়েক সপ্তাহ বা মাস বা এমনকী কয়েক বছরও লাগতে পারে। কিন্তু দুজনই এই কষ্টটা স্বীকার করে নিতে পারলে তা সম্পর্ক নষ্ট হবার আগের পর্যায়টার থেকেও মধুর হয়ে উঠবে।

সম্পর্ক বদল মানে তা শেষ করে দেওয়া। তার মানে আর একজন মানানসই সঙ্গী খোঁজার পুরো পদ্ধতিটা আবার ফলো করতে হবে। এর জন্যও প্রচুর সময় লাগতে পারে এবং তা ভালো হবে এরকম কোনও গ্যারান্টি নেই।

মেরামত না বদল, সম্পর্কের বিষয়ে যে- সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, তা যেন পদ্ধতিগত পদক্ষেপগুলোর পাশে নিজেকে রেখে, দেখেশুনে বাস্তবসম্মত ভাবে নেওয়া হয়। দুটি বিষয়কে তুলনামূলক ভাবে বিচার করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

মনে রাখুন

সাধারণ ভাবে দম্পতিরা কয়েকটা বিষয় মনে রাখলে মানসিক শান্তি পাবেন৷

  • সততা থেকেই অন্তরঙ্গতা আসে
  • দুজনের জন্য একান্ত সময় বার করতে হবে
  • আস্থা তৈরি করতে হবে
  • অন্তরঙ্গতা স্থাপন করতে হবে
  • একে অপরের কাছে আসার প্রত্যাশা করতে হবে
  • একে অপরের জন্য কিছু কাজ করতে হবে
  • একে অপরকে আঘাত করা এড়িয়ে চলতে হবে
  • একে অপরের প্রতি সৎ থাকতে হবে
  • নিজে যতটা সম্ভব ভালো আচরণ করতে হবে, যাতে সঙ্গী কাছে আসতে চায়। বিয়ে ভাঙার কথা মুখে আনা যাবে না (অবশ্যই সঙ্গী দুর্ব্যহার বা আঘাত না করলে)
  • পজিটিভ বা সদর্থক হতে হবে
  • সঙ্গীর প্রশংসা করুন
  • রসিকতা করা বা উপভোগ করার মানসিকতা রাখতে হবে৷রসিকতা যেন আঘাতের পর্যায়ে না যায়
  • একে অপরের দোষ বা অক্ষমতা ক্ষমা করতে হবে
  • বুঝতে হবে বিবাহিত জীবনে ভালো-মন্দ, ওঠা-পড়া থাকেই

এই তালিকাটি নিয়মিতভাবে পড়ে সবগুলো কীভাবে রূপায়িত হবে তার পরিকল্পনা করে নিন৷ এগুলো করার ফলে অবস্থার উন্নতি হল কিনা খেয়াল রাখুন৷আমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস ফল পাবেন৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...