এই আধুনিক যুগ থেকে কয়েক দশক পিছনে তাকালেই, সদ্য মা হওয়া মহিলাদের জীবনযাপনের এক ‘অন্যরকম’ ছবি দেখতে পাবাে। তখন সিংহভাগই নর্মাল ডেলিভারি হতো।। বাচ্চার জন্ম দেওয়ার পর চল্লিশদিন আঁতুরঘরে অর্থাৎ আলাদা থাকতে হতো মাকে। সেই আঁতুর ঘরে স্বামীর প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। আসলে, এই সংস্কারের পিছনে যে উদ্দেশ্য ছিল তা হল— ওই সময়ের মধ্যে (৪০ দিন) স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন না করতে দেওয়া। কারণ, সদ্য মায়ের সঙ্গে স্বামীর শারীরিক মিলন ঘটলে, মায়ের নানারকম শারীরিক সমস্যা এবং জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন নর্মাল ডেলিভারির পরিবর্তে সিজারিয়ান ডেলিভারিরই সংখ্যাধিক্য। কাজেই, সদ্য মা হওয়া মহিলাদের নতুন ভাবে সেক্সলাইফ শুরু করার রীতিনীতিও বদলেছে।।
একটা সময় ছিল যখন ভিন্ন সামাজিক আবহে সদ্য মা হওয়া যুবতিরা তাদের মনের গােপন ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারতেন না। কিন্তু এখন পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতি এবং উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার সুবাদে, বদলে গেছে নারীদের সেক্সলাইফ। এখন মা হওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই আবার নতুন করে সেক্সলাইফ শুরু করা যায় অনায়াসেই। তবে, এই সেক্সলাইফ শুরু করার আগে, কিছু শরীরবিজ্ঞান, সতর্কতা এবং রীতিপদ্ধতির বিষয়ে জ্ঞান অর্জন আবশ্যক।
ডেলিভারি সিস্টেম এবং সেক্স
নর্মাল এবং সিজার এই দু’রকম ডেলিভারি পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম হচ্ছে সারা পৃথিবীতে। দুটো পদ্ধতির-ই সুবিধে-অসুবিধে দুই-ই আছে। সৌন্দর্য সচেতন সেলিব্রিটি কিংবা সাধারণ নারীরা অনেকেই নর্মাল ডেলিভারির পথ ধরেন। কারণ, সিজার করলে পেটে যেহেতু স্টিচের দাগ থেকে যায়, তাই কেউ কেউ নর্মাল ডেলিভারি চান। তবে বেশিরভাগ মহিলা এখন নর্মাল ডেলিভারির পথ ছেড়ে সিজার-এর দিকেই ঝুঁকছেন। আর এই ঝোঁকের পিছনে দুটো গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। প্রথমত, সিজার করলে কষ্ট কম, ঝুঁকি কম। দ্বিতীয়ত, নর্মাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে যােনিপথ অনেকটা প্রশস্ত বা আলগা হয়ে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাওয়া যায় না। তাই, সিজার-এর পথ বেছে নেন আধুনিক মহিলারা। তাছাড়া, সিজার করলে যেহেতু ভ্যাজাইনা স্বাভাবিক থাকে, তাই বাচ্চা প্রসবের পরে দ্রুত নতুন ভাবে যৌনজীবন শুরু করা যায়।
ব্রেস্টফিডিং অ্যান্ড সেক্স
বক্ষসৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে এমন নানারকম ভুল ধারণার শিকার হয়ে, অনেক মহিলাই ব্রেস্টফিডিং করাতে চান না। কিন্তু এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো যে, বাচ্চার জন্ম দেওয়ার পরই, মায়ের শরীরে অক্সিটোসিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এই অক্সিটোসিন হরমোন বুকে দুধ সরবরাহ করতে যেমন সাহায্য করে, তেমনই পরোক্ষ ভাবে সেক্সলাইফকেও কন্ট্রোল করে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে— কীভাবে? আসলে, বাচ্চা যত মাতৃদুগ্ধ পান করবে, মায়ের শরীরে অক্সিটোসিন হরমোনের মাত্রা ততই বাড়বে এবং মায়ের শরীরে ধীরে-ধীরে যৌন উত্তেজনা তৈরি করবে। যারা এই বিষয়টি জানেন, সেইসব দম্পতি এই পদ্ধতির সুবিধে নিয়ে নতুন ভাবে আনন্দদায়ক সেক্সলাইফ শুরু করেন।
বিশ্রাম এবং সেক্স
মা হওয়ার পর কে কতদিন পর আবার সেক্সলাইফ শুরু করতে পারবেন, তা অনেকটাই নির্ভর করে বিশ্রামের উপর। আর সব মায়েরা যেহেতু সমান বিশ্রাম পান না, তাই প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ভিন্ন সেক্স সিচুয়েশন তৈরি হয়। অতএব, বাচ্চার জন্মদানের পর মাকে যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিতে হবে। বাচ্চার ন্যাপি বদলানাে, খাওয়ানাে, সেবাযত্ন করা প্রভৃতি কাজগুলি পার্টনার-এর সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে। সময়সুযােগ করে ঘুমোতেও হবে পর্যাপ্ত। তবেই মা হওয়ার পর দ্রুত নতুন করে স্বাভাবিক যৌনজীবন শুরু করা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য এবং সেক্স
বাচ্চার জন্ম দেওয়ার পর, মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন ঘটে মায়ের। এইসময় মায়ের শরীরে যেমন নানারকম ভিটামিনের ঘাটতি এবং রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে, তেমনই তিনি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ এবং স্পর্শকাতরও হয়ে উঠতে পারেন। আর এই সময়ের ওইরকম মানসিক এবং শারীরিক পরিস্থিতি নতুন ভাবে সেক্সলাইফ শুরু করার ক্ষেত্রে পরিপন্থী হয়ে উঠতে পারে। তাই, বাচ্চার জন্মদানের পর মায়ের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা ও ঘাটতি দূর করার জন্য উপযুক্ত ওষুধ-পথ্য, চিকিৎসা এবং মানসিক সহযােগিতা-সহানুভূতির প্রয়োজন। অতএব এইসময় স্বামীকে আন্তরিক সহযােগিতা করতে হবে মানবিক কারণে এবং নতুন ভাবে যৌনজীবন শুরু করার জন্য।
স্লো বাট স্টেডি ফরম্যাট
মা হওয়ার সপ্তাহ তিনেক পর যদি সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার মতো শারীরিক পরিস্থিতি তৈরি হয় বা যদি কমফর্ট ফিল করেন তাহলে সেক্সলাইফ স্বাভাবিক করতে পারেন, তবে স্লো বাট স্টেডি ফরম্যাট-এ। কারণ, ওইসময় ভ্যাজাইনাল ট্রাক ড্রাই থাকে, তাই প্রথম কয়েকদিন পুরোপুরি যৌনসঙ্গমে লিপ্ত না হওয়াই উচিত। ভ্যাজাইনাল ট্র্যাককে আর্দ্র, অর্থাৎ সঙ্গমের অনুকূল করে তোলার জন্য পার্টনার-এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেক্স শুরু করুন ধীরে-ধীরে। এরজন্য প্রথমে অন্তত দু’দিন ওরাল সেক্স বা মিউচুয়াল মাস্টারবেশন করুন এবং তারপর থেকে পূর্ণ যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হন।
টিপস
- রাতে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে সেক্স শুরু করুন নিশ্চিন্তে।
- পার্টনারকে আপনার মনের ইচ্ছে-অনিচ্ছের কথা জানিয়ে সেইমতো নতুন ভাবে সেক্সলাইফ স্টার্ট করুন।
- নিজের শরীর বুঝে সেক্স করুন। কমফর্ট ফিল না করলে, অর্থাৎ মা হওয়ার পর নিজের শরীর সেক্স-এর জন্য প্রস্তুত মনে না হলে, সেক্স এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
- মা হওয়ার পর দীর্ঘদিন যদি ভ্যাজাইনাল ট্র্যাক শুষ্ক থাকে তাহলে ভালো গাইনিকোলজিস্টকে জানিয়ে ওষুধ খেয়ে সমস্যামুক্ত হন।
- এইসময় সঙ্গমকালে ক্ষিপ্রতা একেবারেই বারণ। কারণ, মা হওয়ার পর ভ্যাজাইনা স্বাভাবিক হতে সময় লাগে।
মা হওয়ার পর সেক্স-এর সময়ে হাইজিন অবলম্বন করুন। কারণ, ওইসময় ইনফেকশন-এর সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।