বেকারত্ব কিংবা কঠিন আর্থিক পরিস্থিতিতে পরিবার কীভাবে বাঁচবে, এই ভাবনায় এখনই দিশাহারা হয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি না হলেও, গোটা দেশ যে গরম লাভার উপর বসে আছে, এ বিষয়ে নিশ্চিত। কারণ, বেকারত্ব দরজায় কড়া নাড়ছে। এর মূলে কিন্তু রয়েছে করোনা নামক ওই মারণ ভাইরাস এবং লকডাউনের কারণে আয় কমে যাওয়া। তাই বলা যায়, এই মারণ ভাইরাস-এর বিরুদ্ধে বাঁচার লড়াই চালিয়ে গেলেও, বেঁচে থাকার সংঘর্ষ কিন্তু এখনই কাটছে না-- এখন সে লুকিয়ে আছে কার্পেটের নীচে।
হাজার-হাজার পরিবারে হয়তো উপার্জনের লোক একজন। সেই তাদেরই যদি ভবিষ্যত টালমাটাল হয়, চাকরি থাকবে কিনা কিংবা ব্যবসা চলবে কিনা তার নিশ্চয়তা না থাকে, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতির ভয়াবহতার বিষয়টি। চিন থেকে আসা করোনা ভাইরাসের উপর রাগ না দেখিয়ে পরিবারের সদ্য বেকার হওয়া মানুষটির উপর হয়তো রাগ দেখাবেন পরিবারের বাকি সদস্যরা।
স্বামী-স্ত্রী এক ছাদের নীচে থাকুন কিংবা দুজায়গায়, দুঃশ্চিন্তায় আছেন প্রত্যেকেই। কারণ, সেই একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকা, বাইরে বেরোতে না পারা, সীমিত খাবার খাওয়া, কাল কী হবে সেই দুঃশ্চিন্তা বহন করা, প্রভৃতির সময়টা কেটে গেলেও, কেউ শান্তিতে নেই এখন। শুধু গ্রাম থেকে শহরে কাজ করতে আসা গরিব মানুষই নন, মোটা মাইনে পাওয়া মানুষরাও এখন কেউ শান্তিতে নেই উপার্জন কমে যাওয়ার ফলে।অনেকে আবার কাজের সন্ধানে পরিবারকে ছেড়ে ভিন্ন শহরে পাড়ি দিয়েছেন৷ গোটা পরিবারের খরচ টানা অসম্ভব ভেবে নতুন শহরে কর্মসংস্থান করতে গিয়ে, পরিবারকে নিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হচ্ছে না৷
মনোবিদ ডা. ডোনা ব্যাপটিস্ট, যিনি নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি-তে ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক, তাঁর মতে, নিকটজনের থেকে দূরে থাকা এবং ভবিষ্যত যদি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তাহলে মানসিক রোগের শিকার হতে পারে মানুষ। বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রী যদি দীর্ঘদিন আলাদা থাকেন, তাহলে অবিশ্বাসের জন্ম হয়, ভালোবাসা কমে যায় এবং শারীরিক মিলনের অভাবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, রাগ হিংসা বেড়ে যায়। যদিও এর দায় সরকারের নয়, কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই লকডাউন পরবর্তী সময়েও দীর্ঘ বিচ্ছেদ এবং অনিশ্চয়তার মর্মান্তিক ফল ভুগতে হতে পারে জনগণকে। বিশেষ করে তরুণ দম্পতির মধ্যে এই ধরনের সমস্যার ফলে, মামলা বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে পারে।