যে-ভাবে কোভিড পরিস্থিতিতে বেহাল হয়েছিল দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, এটাকে আগামী দিনে একটা দৃষ্টান্ত মনে করা উচিত সরকারের৷ এই বিপর্যয়ের দায় যতটা প্রধানমন্ত্রীর, তার চেয়ে কম নয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক বিপদকালে মধুসূদন হতে পারেনি।
মন্ত্রকের অনেক আগেই মেনে নেওয়া উচিত ছিল যে, আযুর্বেদে করোনা রোধের প্রচার সম্পূর্ণ ভাবে ভুল ছিল। হর্ষবর্ধন নিজে অ্যালোপ্যাথির চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও মহামারি ঠেকাতে সঠিক দিশা তিনি দেখাননি। যে-কারণে সাধারণ মানুষের আস্থা চলে গেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের উপর থেকে। সাধারণ মানুষকে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল কখনও রেমডেসিভির, কখনও ডক্সির খোঁজে। হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছিল হাসপাতালে আইসিইউ বেডের জন্য। অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে অক্সিমিটারের জন্য হাহাকার পড়েছিল। শ্মশানে পড়েছিল লাইন। এর দায় কি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপর বর্তায় না?
টুইটারে জনরোষের শিকার হয়েছিল মন্ত্রক। সকলেই দাবি তুলছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অপসারণের। প্রথম লকডাউন-এ হর্ষবর্ধন জরুরি অবস্থার আশঙ্কা করে প্রস্তুতি না নিয়ে খোসমেজাজে দিনযাপন করেছিলেন। পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে গেল তখন ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির ব্যর্থতাকেই বেশি করে হাইলাইট করলেন। কিন্তু এই অথরিটির চেয়ারম্যান তো স্বযং মোদি! তাহলে দোষারোপ কে কাকে করবে? ইএনটি ডাক্তার হর্ষবর্ধন তাই এই পরিস্থিতিতে কান বন্ধ করে চোখে ঠুলি বেঁধে বসে রইলেন আর মৃত্যু মিছিল উত্তরোত্তর বেড়ে চলল। ব্লেম গেম- এর বলি হল সাধারণ মানুষ৷
দেশের মানুষকে বহুদিন ধরেই ভাগ্যের উপর নিজেদের জীবনধারণের ভার ন্যস্ত করতে হয়েছে। ঈশ্বরই ভরসা ছিল ওই মহামারিতেও। কারণ চিকিৎসা পরিষেবা থেকে তারা বঞ্চিত। দেশের মানুষের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাঠে নামার বদলে হর্ষবর্ধন রাজনীতির খেলায় বেশি মজেছিলেন। বিপক্ষের রাজনীতিকদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে তাদের ফাঁকা উপদেশ দিয়ে কালাতিপাত করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইতালির দৃষ্টান্ত চোখের সামনে থাকা সত্ত্বেও তিনি আন্দাজ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে, এই অতিমারি কী ভযংকর রূপ ধারণ করতে পারে।