কথায় বলে, বিচক্ষণ-বিবেচক লোকের সমস্যা কম। অর্থাৎ, যে-ব্যক্তি ভবিষ্যতের কথা ভেবে আগাম পরিকল্পনামাফিক কাজ করে রাখেন, তিনি অনেকটাই সমস্যামুক্ত থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই যে, সুবিবেচক মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
উত্তরাধিকারীদের জন্য গৃহকর্তা কিংবা গৃহকর্ত্রী যদি তাঁর জীবিতাবস্থায় বিষয়সম্পত্তি কিংবা টাকাপয়সার প্রয়োজনীয় আইনি কাগজপত্র তৈরি না করে রাখেন, তাহলে সমস্যা জট পাকাবেই। আর যদি সম্পত্তি এবং অর্থের একাধিক দাবিদার থাকে, তাহলে সমস্যা ঝগড়া-মারামারি থেকে খুনোখুনি পর্যন্ত যে গড়াতে পারে, এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে অসংখ্য। প্রায় প্রতিদিনই এরকম ঘটনার খবর আমরা পাই টেলিভিশনের নিউজ চ্যানেল কিংবা খবরের কাগজের মাধ্যমে। আর যদি সমস্যা মারামারি কিংবা খুনোখুনি পর্যন্ত না-ও গড়ায়, তাহলেও আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতির শিকার হতে পারেন উত্তরাধিকারীরা।
এ প্রসঙ্গে দুটো ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। জীবিতাবস্থায় কাউকে কানাকড়িও দেবেন না, এমনই জেদ ধরেছিলেন এক ব্যক্তি। তাই তাঁর উত্তরাধিকারীরাও ওই বৃদ্ধের দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে চাননি। একসময় ওই বৃদ্ধ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া সত্ত্বেও, আত্মীয়স্বজনরা কেউ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি। শেষ পর্যন্ত পাড়ার ছেলেরা নিয়ে গিয়ে ওই বৃদ্ধের ইচ্ছেমতো বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু বৃদ্ধ আর বেঁচে ফেরেননি এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে অনেক টাকার বিল তুলে মারা যান। এরপর আত্মীয়স্বজনরা কেউই প্রথমে হাসপাতালের বিল মিটিয়ে মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেননি। পরে ওই মৃত বৃদ্ধের স্ত্রী আশ্বাস দেন যে, উত্তরাধিকীরা যাতে বিষয়সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হন, তারজন্য তিনি সবরকম আইনি সহায়তা করবেন। এরপরই বৃদ্ধের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে শ্মশানে নিয়ে যান উত্তরাধিকারীরা।
দ্বিতীয় ঘটনাটি আরও ভয়াবহ। এক ব্যক্তির ব্যাংকে অনেক টাকা ছিল কিন্তু কোনও নমিনি কিংবা জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট না করেই হঠাৎ একদিন নিখোঁজ হয়ে যান। আত্মীয়স্বজনরা প্রশাসনিক সাহায্য নিয়ে ওই ব্যক্তির কোনও খোঁজ পাননি। সময় এগিয়ে চলে। কেটে যায় পাঁচটা বছর। এখনও অসহায় উত্তরাধিকারীরা। এখন প্রশ্ন, যদি এরকম ঘটনা ঘটে, তাহলে কি চুপ করে বসে থাকতে হবে, নাকি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব? কী করতে হবে এর জন্য?