দেশে বাড়ছে বেকারত্ব। একদিকে কর্মহীন হয়ে পড়া অজস্র মানুষ, অন্য দিকে চাকরি পেতে অপারগ যুবসমাজ। এই যখন পরিস্থিতি, তখন মেয়েদের অবস্থা আরও-ই করুণ। কিছুকাল আগে পর্যন্ত অনেক সংস্কারের বাঁধ ভেঙে, মা-বাবারা সম্মত হয়েছিলেন মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য শহরে পড়তে পাঠাতে। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মেয়েরাও কেরিযার তৈরিতে ব্রতী হয়েছিল। কোনও না কোনও ভদ্রস্থ চাকরিতে বহাল না হয়ে বিয়ে করার হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকছিল মেয়েরা। এতে পরবর্তী সময়ে সংসারে আয় বাড়ছিল তাদের। সামগ্রিক ভাবে সমাজের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছিল।
এখন করোনা পরবর্তী পরিস্থতিতে অর্থনীতির এই বেহাল অবস্থায়, পুরুষরাই একটা সম্মানজনক কাজ জোটাতে পারছে না, তো মেয়েরা। পরিবারের মধ্যেও এই বৈষম্য তো বরাবরই ছিল যে, মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের কাজ পাওয়াটা বেশি আবশ্যক। ফলে এখন পরিস্থিতি যা দাঁড়াল, তাতে আবার মেয়েদের সেই আগের মতোই উচ্চশিক্ষার খোয়াব দেখা ছেড়ে, হাতা-খুন্তিকেই জীবনের অঙ্গ করতে হবে। বাবা-মা-রাও তাদের বোঝাচ্ছেন, সংসারধর্মই মেয়েদের জীবনের সার। ফলে গৃহকোণটিকেই তাদের বেছে নিতে হবে জীবনধারণের একমাত্র পথ হিসেবে।
এদিকে বিয়ের বাজারে মুনাফা হচ্ছে ঘটক আর পুরোহিতদের। জন্মকুণ্ডলী মিলিয়ে চার হাত এক করেই যাদের রোজগার। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়টি হল, এই সব মেয়েদের বর জুটছে অর্ধশিক্ষিত ও পণলোভীদের মধ্যে থেকে। মেয়েরা নিজেরা যদি শিক্ষিত না হয়, তাহলে তাদের অভিজাত পরিবারের পাত্র মেলা মুশকিল। শিক্ষিত ছেলেরা ভালো চাকরি পেলে বেছে নিচ্ছে বিদুষী সুশিক্ষিত কর্মরতাদের। শিক্ষার দিক থেকে ভারতীয়রা পিছিয়ে পড়া মেয়েদেরকে বেছে নিতে হচ্ছে অন্ধ চোরাকুঠুরির জীবন, যেখানে তাকে পূজাপাঠ আর সংসারের মঙ্গলকামনায় ব্রত উপবাস করেই কাটিয়ে দিতে হয় দিন।
আমাদের সরকারও হয়তো চান এমনই অনুন্নত সমাজ যাতে তাদের নিয়মনীতি নিয়ে প্রশ্ন করার কেউ না থাকে। ধর্মের নেশায় যদি সংসারের চালিকা শক্তিকেই অচল করে দেওয়া যায়, তাহলে তাদের রাজনৈতিক মুনাফা। যে নেতৃত্ব, বেহাল পরিস্থিতিকে অ্যাক্ট অফ গড হিসেবে বর্ণনা করেন, সেই দেশের আর্থিক মন্দা সহজে ঘোচার নয়। ভাগ্যের হাতে নিজেদের ভবিষ্যত্ সঁপে দেওয়া ছাড়া এরপর আর গতি কী।