আমাদের জীবনচর্যা বদলে দিয়ে গেছে এক মারণ রোগ৷ আজ সরকারের আনন্দের দিন৷ টীকাকরণ প্রক্রিয়ায় একশো কোটি মানুষকে সামিল করা গেছে৷ এটা নিষ্চিতভাবে আমাদের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে একটা বড়োসড়ো সাফল্য৷ কিন্তু এর পাশাপাশি কিছু সমান্তরাল ক্ষতিও আমাদের হয়েছে৷ Post pandemic একটা Social analysis করলে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ছবি পাব৷
Covid 19 কী co-lateral damage বয়ে এনেছে? এই ক্ষতির একটি হল, আত্মীয়-বন্ধুদের ছাড়াই বাঁচতে শিখে ফেলেছি আমরা।মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে৷ কোভিড ১৯ অতিমারি আমাদের প্রথমে ঘরবন্দি করল, তারপর আত্মীয়-পরিজনদের থেকেও দূরে পাঠিয়ে দিল। প্রতি পরিবারকে ২-৩ জন করে নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুশোকেও জর্জরিত হতে হয়েছে। খানিকটা কোভিড-এর কারণে, আর বাকিটা সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের কারণে আত্মীয়-বন্ধুরা বদলে গেছেন। কারও বাড়িতে নিকটজন বিয়োগ হলে তাকে সামলানো বা সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ ছিল না ওই ভয়াবহ দিনগুলোতে। যিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছেন, তাঁর লড়াইটাও ছিল নিদারুণ ভাবে একক লড়াই। হাসপাতাল থেকে শ্মশানে যাওয়ার পথটাও তাঁকে নির্বান্ধব হয়ে একাই পেরোতে হয়েছে।
বিপদের সময়, দুঃখের সময় মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই অতিমারি আমাদের একা হতে শিখিয়েছে। মানুষ আতঙ্কিত বিপদগ্রস্তের এবং রোগগ্রস্তের পাশে দাঁড়াতে, আর্থিক ভাবে বিপন্ন পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আজ আর কেউ প্রস্তুত নয়। সবাই নিজস্ব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অতিমারির পর আর্থিক ক্ষতি সামলাতে গিয়ে এক অনিশ্চয়তার সঙ্গে তাদের দিনযাপন।
সময় থেমে থাকে না৷ কিন্তু ওই দিনগুলোর কথা হয়তো সারা জীবনেও ভুলতে পারবে না মানুষ৷যখন মৃত্যুর পরও কোনও সম্মানজনক সৎকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে তার পরমাত্মীয়। প্লাস্টিকে মোড়া দেহ হয়ে একাধিক বেওয়ারিশ লাশের সঙ্গে একই চুল্লিতে পুড়েছে, নয়তো নদীর চরে বা নদীর জলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা আজীবন এটা শিখেই বড়ো হয়েছি যে, এই পৃথিবীতে এসেছ একলা, যেতেও হবে একলাই। কিন্তু তার এহেন অমানবিক একটা রূপের সাক্ষী করেছে আমাদের অতিমারি।