শিল্প-সংস্কৃতি এবং সভ্যতার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য ভারত বিশেষ ভাবে পরিচিত সারা বিশ্বে। প্রত্যেক ভারতবাসী এর জন্য গর্ব অনুভব করেন। আর এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য বেশিরভাগ কৃতিত্বের দাবিদার ভারতীয় নারীরা। কারণ, ‘ভারতীয় নারী' এই শব্দ দুটি শুনলেই প্রেম, করুণা, দয়া, ত্যাগ, সেবা প্রভৃতি ভাবমূর্তি ফুটে ওঠে চোখের সামনে। আসলে, ভারতীয় নারী মানেই সৌন্দর্য এবং কোমলতা-র মিশ্রণ। এইসব গুণ নারীরা পেয়েছেন প্রকৃতিগত ভাবেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই যে, এত গুণ থাকতেও নারীর উপর অত্যাচার বন্ধ হয়নি। তাহলে উপায়?
কন্যাভ্রূণ হত্যা
লিঙ্গ নির্ধারণ দণ্ডনীয় অপরাধ, তবু আজও কি তা বন্ধ হয়েছে পুরোপুরি? প্রশ্ন থেকে যায়। বিস্ময় জাগে মনে, আজও কেন বন্ধ হয়নি কন্যাভ্রূণ হত্যা! নারীর আত্ম-নির্ভরতা তো অনেক দূরের বিষয়, কন্যা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখারও সুযোগ দেয় না কিছু মানুষ। অথচ নারী-পুরুষ নিয়েই সমাজ, সংসার, একে অন্যের পরিপূরক। আনুপাতিক হারে নারী-পুরুষ সমান না হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
মহিলারা এখানে অনেক স্বপ্নের জাল বোনেন কিন্তু সেই স্বপ্ন মরীচিকা-র মতো অধরাই থেকে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবে কঠিন পরিশ্রমও বৃথা যায় সামাজিক জাঁতাকলে।
মাতৃত্ব এবং আত্মনির্ভরতার সঙ্গে যুক্ত প্রশ্ন, নারীর বিপক্ষে যাওয়া আইন— সবই নারীর শরীর-মনকে আলোড়িত করে। অনেক ক্ষেত্রে নারীর আত্মনির্ভরতা তো অনেক দূরের বস্তু, নারী তার বেঁচে থাকার অর্থই খুঁজে পায় না। নানা ভাবে পরিবারে জড়িয়ে থাকে নারী। নিজের জন্য নয়, সারা জীবন অন্যের জন্য প্রাণপাত করে চলে তারা।
নিজের সর্বসুখ বিসর্জন দিয়ে পরিবারের সবার জন্য কাজ করেন মহিলারা। মা-ঠাকুমাদের জীবন যন্ত্রণার বাস্তবচিত্র দেখে বহু মেয়েই আজকাল বিবাহে অসম্মত থাকে। নিজের মতো করে একক জীবন কাটাতে চায়।
সভ্যতার একদম শুরুতে কিন্তু নারী-পুরুষের মধ্যে খুব একটা ভেদাভেদ ছিল না। সবাই তখন বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করতেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কিন্তু এই ছবিটা বদলে গেল মধ্যযুগে। শত্রুর আক্রমণের হাত থেকে নারীকে বাঁচাতে তাদের ঘরবন্দি রাখার সিদ্ধান্ত নিল পুরুষ সমাজ। নারী তখন শুধু মন দিল রান্না এবং ঘরের কাজে। এইভাবে দীর্ঘদিন বাইরের কাজ থেকে বঞ্চিত থাকতে থাকতে নারী তার স্বাধীন অস্তিত্বের কথা ভুলে যেতে শুরু করল। কিন্তু কোণঠাসা হতে হতে একসময় নারীর জীবনধারণের সংজ্ঞা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করল। তবে সর্বত্র নয়, কিছু অংশে।