দরজাটা বন্ধ করে দাও রাজু...। অঙ্কিতা অফিস বেরোল। সিল্কির সঙ্গে পাজল গেম খেলছিল রাজু বারান্দায় বসে। শুনল কি শুনল না, রাতে রান্না বসাতে গিয়ে চোখ কপালে উঠল অনুর--–কুকারটা গেল কোথায়! দরজার পাশে এঁটো বাসনের সঙ্গে ছিল যে!
টুলুর মেজে ধুয়ে রেখে যাওয়া বাসনের বাস্কেট, আরও যথা যথাস্থানে হাতড়ে না পেয়ে হতাশ অনু রাজুর সামনে চড়াও হল, দরজাটা তখন বন্ধ করেছিলে রাজু?
দিনভর বন্দিদশা কাটিয়ে গায়ে শার্ট চড়াচ্ছে রাজু। বেরোবে। কুকারের কথায় ভ্রূ কুঁচকে তাকাল,
–মানে... তখন সিল্কি এমন...।
– বাহ্। অনু স্পষ্টত বিরক্ত।
– তাই বলে দরজা বন্ধ হবে না! নতুন জায়গা অচেনা পাড়া, পাশের ফাঁকা মাঠ দিয়ে ময়লা কুড়োতে এসে উঁকিঝুঁকি মারে। একদিন তো ঢুকেই পড়েছিল, এসব তো জানোই...।
রাজু একটু ইতস্তত করে বলল,
– কিন্তু চোর কি শুধু কুকারটাই নেবে! খুঁজলে সব?
অনুর মুখ গনগনে। মিল্কি তার মা আসামাত্র গা লেপ্টেছে। রাজু নিজেও খুঁজতে শুরু করে। বিরক্ত অনু থামা দেয়-– হয়েছে। আর খুঁজে কী হবে! দরজার পাশেই ছিল, খোলা পেয়ে সহজেই নিয়ে সটকান মেরেছে।
ফলত এক অপরাধবোধ এখন। মোড়ের গুমটি থেকে সিগারেট কিনে খাওয়া, কি পাড়ার ছোট্ট ক্লাবঘরে এক চক্বর দিয়ে আসবে, সেই ফুরসতও তার নিজস্ব নয়। কখন কোন দিক থেকে হুকুম আসবে। কোনটা জরুরি হয়ে উঠবে তার ঠিক নেই। আপাতত মশার ধূপ জ্বেলে দিল রাজু। ঘরে পাখা চলছিল। অফ করল। সামান্য একটু অপেক্ষা করল কোনও ফরমায়েশের। পরে বাজারের থলিটা টেনে নিয়ে হাতে মুড়ল। চাল কেনার বাকি টাকাটা সকালে ফেরত
– যায় নি, যাহোক বাজার আনবে ওই থেকে।
নজর করে অনু বলল, ড্যাডিকে চা খেয়ে যেতে বলো মিল্কি।
চটি পরা স্থগিত থাকল। এমনটাই যেন চাইছিল রাজু। এইভাবে ডেকে চা বা আড়াইশো গ্রাম পেঁয়াজ এনো, বলার ভেতর দিয়ে অনুরও যেন কোথাও খানিক মেরামতির ছুতো থেকে যায়।