সৌমিত্র ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে আছেন। তাই পরিচিতিও হয়েছে। এক রবিবার সৌমিত্র-র মোবাইলটা সকাল সকাল বেজে ওঠাতে সে একটু অবাকও হল। এত সকালে কে ফোন করল। কারণ দিল্লিতে রবিবার প্রায় অনেকেই একটু দেরিতে বিছানা ছাড়েন! এমনকী কেউ সকাল এগারোটার আগে কাউকে ফোনও করেন না।
সবাই জানেন, শনিবার হয়তো কোনও না কোনও কাজে লোকেরা শুতে দেরি করেছেন। তাই রবিবার এত সকালে ঘুমের ব্যাঘাত করাটা ঠিক নয়। এই অলিখিত নিয়মটা চলে আসছে অনেকদিন থেকেই। তাই বিরক্তি সহকারে ফোনটা তুলতেই দেখতে পেল তাতে নাম লেখা আসছে বিনোদ আহুজা, রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (আরডব্লিউএ)। ভাবল এত সকাল সকাল কী এমন দরকার পড়ল।
ফোনটা তুলে হ্যালো বলতেই, অন্যদিক থেকে বিনোদ আহুজার কণ্ঠস্বর ভেসে এল— দাদা, একটু তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আমাদের আবাসনের ১০৭ নম্বর ফ্ল্যাটের একজন বাঙালি মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে মনে হচ্ছে। দরজা খুলছেন না। পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রমহিলা জানিয়েছেন। একটু তাড়াতাড়ি আসুন দাদা। দেখুন তো আপনি চিনতে পারেন কিনা। আমি পুলিশে খবর দিয়েছি। দরজা ভাঙতে হতে পারে বা অন্য কোনও উপায়ে ওনাকে উদ্ধার করতে হবে।
একথা শুনেই সৌমিত্র যেন কেমন হয়ে গেল। মনে মনে ভেবে দেখল ওখানে বাঙালি কেউ থাকেন বলে তো তার জানা ছিল না। হতে পারে এমন কেউ যাকে দেখলে চিনতে পারবে। ভাবল এই অসময়ে অবশ্যই তার যাওয়া দরকার। তড়িঘড়ি করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল। আজকাল মোবাইল ছাড়া কোনও কাজই হয় না।
গন্তব্যে পৌঁছে গিয়ে শুনল, পাশের বাড়ির প্রতিবেশীরা বলছেন— গতকাল থেকে ১০৭ নম্বরের বয়স্কা মহিলা অনিতা সরকার দরজা খুলছেন না। উনি কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। ওনার স্বামী ভারত সরকারের জয়েন্ট সেক্রেটারি পদে ছিলেন এবং গত হয়েছেন অনেক বছর হল। এক ছেলে, সেও চাকরির খাতিরে আমেরিকাতে থাকেন। এর বেশি ওনারা কিছুই জানেন না। ভদ্রমহিলা খুবই অসামাজিক মানে যাকে বলে আনসোশ্যাল ছিলেন! কারও সঙ্গে মিশতেন না। এমনকী তাদের সঙ্গেও না।