আজ আর কলম নিয়ে বসে লাভ নেই। বেশ ভালো একটা প্লট মাথায় এসেছিল কিন্তু ঝগড়াঝাঁটির মধ্যে পড়ে সেই প্লটটা হুস করে কোথায় যে পালিয়ে গেল! বাড়া ভাতে ছাই ফেলল ওই সুনুর মা। আজ রানুকে সারাক্ষণ ওদের দু'জনকে সামলাতে হবে। একটু চোখের আড়াল হলেই সুনুর মা খ্যাঁক খ্যাঁক করবে বেচারা সেলিমের ওপর! খুঁটে খুঁটে কত যে দোষ বার করবে। বারান্দায় বসে রইল রানু। প্রাচীরের দিকে নজর গেল। এখনও খাঁচাটা পড়ে আছে।
আজ-ই ওটা ফেলে দিতে বলবে। আহারে। খাঁচাটা দেখলে কান্না পায়। ময়না পাখিটা মরে গেল। কে জানত রোজ বেলা দুটো থেকে তিনটে পর্যন্ত খাঁচাটা সরিয়ে রাখত সুনুর মা। ক'দিন ছুটি নিয়েছিল। রানু জানতই না তাই খাঁচাটা সরায়নি। আর মধ্যগগনের গনগনে রোদ তখন খাঁচায় এসে পড়েছিল। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ সূর্যের তাপে ময়নাটা মরে গেল !
একটু একটু আনু আনু বলে ডাকতেও শিখেছিল। সেই কত বছর আগে ছোটো ভাইটাও আনুদিদি আনুদিদি যেই বলতে শিখল, কী যে হল! ক'দিন জ্বর হল আর ফিরল না। রানু মনে মনে ভাবে, আর কেউ যেন ওকে আনু বলে না ডাকে। ওই ডাকে মৃত্যুর ডাক আসে। রানুর জন্যই তো এমনটা হল। সুনুর মা যদি ছুটি না নিত তবে তো ময়নাটা আজও আনু আনু বলে চ্যাঁচাত। এই জন্যই এত দরকার সুনুর মাকে। সুনুর মা থাকলে দুর্ঘটনাটা এড়ানো যেত!
গতকাল রানুর ভাই এসে অনেকগুলো আপেল দিয়ে গেছে। লাল টকটকে, একেবারে গাছপাকা। কে খাবে এত? ক'টা আপেল ঝুড়িতে এনে সুনুর মার সামনে রাখল। রানু বলল, 'এগুলো নিয়ে যাস বাড়ি। সবাই খেয়ে নিস।' এমন প্রাপ্তি সুনুর মায়ের কপালে হামেশাই জোটে। কিছু বেশি মানেই ব্যাগ ভর্তি চলল সুনুদের বাড়ি। সুনুর মা-ও ভাবে এসব তারই হকের জিনিস! অন্য কেউ ভাগ বসাবে কেন?