নিধিরাম বাঁড়ুজ্যে। তবে ঢাল নেই তরোয়াল নেই এমনটি নয়। আছে সবই এবং বিস্তর পরিমাণে। অবশ্য নিন্দুকেরা বলে থাকে— এক্কেবারে ভোঁতা মার্কা। ছোটোবেলা থেকেই কামারকে ইস্পাত ফাঁকি দিতে দিতে তার সব কিছুই নাকি ভোঁতা মেরে গেছে। বিদ্যেবুদ্ধিও তাই বিষম খাওয়ার মতো। তা যাইহোক, রক্তে তো বাঙালি। কবি সাহিত্যিক হতে দোষ কী?
বাবার পূজারি বামুনের ইমেজ তার ভয়ানক না-পসন্দ। যজমানি তো কদাপি না। সুতরাং কাঁধে ঝোলা সাইড ব্যাগ, হাওয়াই চপ্পল পায়ে তার চলা শুরু সাহিত্যের সরণি বেয়ে। ভেক না হলে ভিখ মেলে না— তাই পরনে লম্বা ঝুলের ঢলো ঢলো পাজামা-পাঞ্জাবি, পিঠ ছাড়িয়ে লম্বা চুল। চোখে রিমলেশ কালো রোদ চশমা। ঠোঁটে গনগনে আগুনের ঝুলন্ত সিগারেট। পকেট যদিও খালি জমিদারের। তাতে কী! ‘নামাবলি' নামক লিটল ম্যাগের সম্পাদক বলে কথা! কত কত কবি সাহিত্যিকের ধাইমা যে, তার ইয়ত্তা নেই।
এক এক কবিতা দু’শো, তিনশো— যাকে যেমন পটকানো যায়। তারপর একটা বই বের করে দিতে পারলে তো কথাই নেই। আহা স্বাদে গন্ধে যেন ইলিশ। নিজের তেলে নিজেই কেমন ভাজা হয়ে যায়। মুচমুচে মুখ থেকে সরতেই চায় না। নিধিরাম ইলিশ খেলে কম সে কম দিন দু’য়েক ব্রাশ করা তো দূরের কথা, সামান্য জল দিয়ে মুখটা পর্যন্ত ধোয় না। স্বাদটা ধুয়ে যাবে যে! নিধির মতো এরকম লিটল ম্যাগাজিন-এর সম্পাদকের তো রমরমা এখন। হাত বাড়ালেই বিশ-পঁচিশটা উঠে আসবে যখন তখন। আর তারাও প্রত্যেকেই এক একটি নিধিরাম। এ বলে আমাকে দ্যাখ, তো ও বলে আমাকে। তারা প্রায় একে অপরকে যে-কোনও ছুতোয় একটা সাহিত্যসভা ডেকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে।
একটা ফুট দেড়েকের উত্তরীয়, প্লাস্টিকের একটা স্মারক হাতে ধরিয়ে দিয়ে একপ্রস্থ জোর হাততালি ব্যস। এর খরচ-খরচা অবশ্য বহন করতে হয় যিনি সংবর্ধনা নেন তাকেই। এইভাবে দেওয়া-নেওয়া হতে হতে সম্পাদককুলের ঘর ভরতি স্মারক আর উত্তরীয়। এখন এমন অবস্থা ঘরে আর রাখার জায়গা নেই। এমত অবস্থায় নিধিরাম একদিন আসানসোল রেলের লোকোশপের একটা পরিত্যক্ত শেডে ওর আস্থাভাজন সম্পাদককুল ও বিশেষ কিছু গুণগ্রাহীকে জমায়েত হওয়ার ডাক দিল। আলোচনা হল। প্রস্তাবনাটা সকলের খুব পছন্দও হল। এককথায় যাকে বলে লুফে নিল।





