বদলির চাকরি অনুজার। রিটায়ারমেন্ট-এর আর বছর ছয়েক বাকি। তার মধ্যে আবার নাগপুরে ট্রান্সফারের অর্ডার। চাকরির সুবাদে প্রায় তিরিশটা বছর ঘরসংসার, স্বামী-সন্তান ছেড়ে থাকতে হয়েছে তাকে। তিনবছর আগে কলকাতায় পোস্টিং হওয়ার সময়তেই ঠিক করেছিল এবার কলকাতার বাড়িতেই পাকাপাকিভাবে থেকে যাবে। হাজার হোক এখানেই তার পরিবার। ভিআরএস নেওয়ার ডিসিশন নিয়েই ফেলেছিল। সেইমতো আজ কদিন যাবৎ-ই অফিস আর ব্যাংক-এ ছুটোছুটি করতে হচ্ছে তাকে। স্বামী অলোক ইউনিভার্সিটি যাওয়ার পথেই তাকে ব্যাংক-এ ড্রপ করে দিয়ে গেছে। কাজ শেষ করে বাইরে বেরোতেই অনুজার চোখে পড়ে আকাশের ভয়ংকর করাল রূপ। রাশি রাশি কালো মেঘ সূর্যকে একেবারে গ্রাস করে ফেলেছে। মেঘ ভেদ করে বিদ্যুত্যের তীব্র ঝলকানি যেন মেঘের বুক চিরে বেরিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এক লহমায় আকাশটা ভেঙ্গে পড়বে মাটিতে।
আর এক মুহূর্তও দেরি না করে একটা রিকশা ধরে সোজা বাড়ির পথে রওনা দেয় অনুজা। মাঝপথেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সঙ্গে হাওয়ার ভীষণ রকম দাপট। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই রিকশা কোনওরকমে এগিয়ে চলে বাড়ির দিকে। ততক্ষণে ভিজে একেবারে কাকস্নান অবস্থা। রিকশা থেকে নেমে কোনওরকমে তালাটা খুলে সোজা বাথরুমে ঢুকে যায় অনুজা। তখনই কলিং-বেল-এর আওয়াজ কানে যায় তার। একবার নয় একাধিকবার। যেনতেনপ্রকারে শাড়িটা জড়িয়ে আইহোলে চোখ রাখতেই নজর পড়ে দরজায় পাশের বাড়ির মায়া। বেশ অবাকই লাগল অনুজার। এরকম ঝড়-জল মাথায় করে... কিছু ঘটল নাকি...!
দরজা খুলতেই হাঁফাতে হাঁফাতে ঘরে ঢুকে আসে মায়া। তার শরীরের বেশ খানিকটা অংশ ভিজে গেছে। চোখ একেবারে রক্তবর্ণ। কোনও কিছু বলার আগেই সামনে থাকা একটা তোয়ালে মায়ার দিকে এগিয়ে দেয় অনুজা। ‘কী হয়েছে এরকম অবস্থা কেন তোমার?’
‘রিনিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অনুজা।’ শুনেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে অনুজার।
‘কী যা-তা বলছ?’
‘সেই কোন সকালে বাজার যাচ্ছি বলে বেরিয়েছে, আড়াইটে বাজতে চলল এখনও ফেরেনি। ফোনেও পাচ্ছি না, লাগাতার সুইচড্ অফ আসছে। আমি একা মানুষ কী করি বলোতো?’