বুঝল দীঘল। অনেক দিনের পরে ফের যেন সানাই সহকারে আজ সুবাসিত বাতাস বইছে। প্রেমের ঢেউ গুনে গুনে অনেকগুলো সমুদ্র পেরিয়ে এলেও অগুন্তি ঢেউ অপেক্ষমান। সারাজীবন এই ভাবেই কাটাবে দু'জনে। ও ঘরেই আছে সারপ্রাইজ। সোহা জানে ও ঘরই হল দীঘলের প্রাইভেট স্পেস। সোহা বিরক্ত করে না যখন ও ঘরে বসে সেতারে ডুবে যায় দীঘল। ওখানেই কি গন্ধরাজ এনে রেখেছে সোহা? ও জানে দীঘলের গন্ধরাজ প্রীতির কথা।
দরজার পর্দায় জোড়া ময়ূর। এদিকে দীঘল সদ্য স্নানের পরে স্বতঃস্ফূর্ত গন্ধরাজ যেন। পর্দা অল্প সরিয়ে দেয়াল ঘেঁষে রাখা ফ্লাওয়ার ভাসের দিকে তাকিয়ে গন্ধরাজ দেখতে পেল। গোছা গোছা গন্ধরাজ সাজিয়ে রেখেছে সোহা। অসাধারণ সারপ্রাইজ। মন মুহূর্তে স্নিগ্ধ হয়ে উঠতে উঠতে পর্দা পুরো সরিয়ে সোহাকে ডাকতে যেতেই দীঘল স্তম্ভিত হয়ে গেল। দীঘলের সুরের মূর্ছনায় ডুবে যাওয়ার ঘরে বসে সোহার বাবা-মা হাসছেন। আজ সেতার নিয়ে বসার ইচ্ছেটা মুহূর্তে খোলা জানলা দিয়ে উড়ে গেল। দীঘল নিজেকে সামলে নিতে নিতে বলল, 'আপনারা? কখন এলেন? কীভাবে? লকডাউনের মধ্যে...?'
—সে কী? আমরা যে আসব, তুমি জানতে না বুঝি? মেয়েটা চিরকাল বাচ্চাই রয়ে গেল। আমাদের বলেছে, দীঘল এলেই যেন সামনে না যাই। চমকে দেবে। তা, আসব যে, সেটা বলেনি? সোহার বাবা হাসছিলেন। দীঘল তাড়াতাড়ি করে প্রণামপর্ব সেরে নিল।
সোহা পিছন থেকে হেসে উঠেছে, ‘সারপ্রাইজ। চমকে গেলে তো? তুমি তো জানো, মা, বাবা লকডাউনের আগেই বাগুইহাটিতে মামার গৃহপ্রবেশে এসে আটকে পড়েছিল। সাতাশটা দিন ওখানে ছিল। আমি মামাকে বললাম, পুলিশের অনুমতি নিয়ে আমার এখানে দিয়ে যাও বাবা-মাকে। ব্যস। আজ দুপুরে চলে এল মামা। বাবা, মাকে নামিয়ে চলে গেল। নিজে থাকতে পারবে না। রাস্তায় আবার কোন ঝামেলা হয়, কে জানে! এখন যদ্দিন না লকডাউন উঠে যায়, বাবা-মা এখানেই...! কী মজা। আচ্ছা, তুমি কাল একবার বুধু মাছওলাকে ফোন করো। ভালো আড় যেন দেয়। মায়ের হাতের আড় মাছের ঝোল কতদিন খাইনি।'





