দোতলার নিজের ঘরে টেবিলের কাছে চেয়ারটা টেনে নিল। কলমটা খুলে বসল রানু। সামনে খোলা জানলা। জানলা দিয়ে সামনের ওই সবুজ মাঠ দেখা যায়। একটা রাস্তা, কিছু ঘরবাড়ি, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা পুকুরে সাঁতার কাটে, একটা- দুটো সাইকেল, রিকশা— রাস্তায় লড়বর করতে করতে চলে। এখানে বসেই রানু গল্পের প্লট খুঁজে বেড়ায়।
কখনও সামনের এই পরিবেশে, মাঠে, রাস্তায়। কখনও নিজের মনের মধ্যে আকুলি-বিকুলি করে ঝাপসা আলোয় হাতড়ে বেড়ায়। বেশ অনেকদিন পর বসেছে গল্প লিখতে। নতুন করে ভাবছে। মনে ইচ্ছে আজ একটা গল্প লিখবে। পাবলিশার-রাও বলে, লিখুন দিদি লিখুন। অনেকদিন কিছু পাঠাচ্ছেন না।
রানু মনে মনে বলে, নিকুচি করেছে লেখার! লিখে কী হবে শুনি। টাকাপয়সা তো কেউ দেয় না! লিখে কি আর আমার পেট ভরবে! তবে হ্যাঁ, ভরে। রানুও জানে মন ভরে। মনটা খুশিতে নেচে ওঠে। একটা করে গল্প শেষ হয় আর মনে হয় একটা সোনার বিস্কুট। থুড়ি! সোনার বিস্কুট বলা ঠিক হবে না, কারণ চোরের বাড়িতে থরে থরে সোনার বিস্কুট থাকে। বরং মনে হয় যেন স্বর্গের পারিজাত ফুল!
গন্ধ, বর্ণ একেবারে একম অদ্বিতীয়ম। আবার মনে হয় নিজের গর্ভজাত সন্তান। নিজের মনে তাকে সাজিয়েছে, জন্ম দিয়েছে। রানু কলম শক্ত করে ধরল। মাথায় একটা প্লট ঘুর ঘুর করছে, যদিও ধরতে ধরতেই আবার পালিয়ে যাচ্ছে! কলমটা চেপে ধরল। কিছুতেই পালাতে দেবে না রানু। শুরু তো হোক।
সাদা কাগজে একটা লাইন লিখতে না লিখতেই থমকে গেল রানুর কলম। কান দুটো সজাগ হল। নীচতলায় যেন কেমন চ্যাঁচামেচি হচ্ছে। কেউ বেশ জোরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলছে। কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করল রানু। ওই তো সুনুর মায়ের গলা। একটা পুরুষের কণ্ঠও যেন !
কলম বন্ধ করে বারান্দায় এসে দাঁড়াল রানু। এবার স্পষ্ট শুনতে পেল, সেলিমের কণ্ঠস্বর। সেলিম এসেছে। সেলিম এ বাড়িতে মালির কাজ করে, মাসে দু-তিনদিন আসে। বাগানের গাছগুলো, বারান্দার ফুলের গামলাগুলোর গোড়া খুসে আগাছা পরিষ্কার করে। তারপর সার, কীটনাশক দেয়। প্রয়োজনে গাছগুলো ছেঁটে দেয়। ওর যত্নে রানুর বাগানখানা ফুলে- ফেঁপে উঠেছে।