শেষ পর্যন্ত সোনাগাছিতেই যাবে অলকানন্দা। তার তাড়না এখন বিপদসীমা ছাপিয়ে ফুঁসে ওঠা নদীর মতো ভয়ংকর। সেই জলের তোড় এখন অলকানন্দাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলতে চাইছে সোনাগাছিতে। তারপর অলকানন্দা সেরে নেবে তার আসল কাজ। চকার সঙ্গে হবে তার শেষ বোঝাপড়া। একটা তুমুল হেস্তনেস্ত করে ছাড়বে সে। জামার কলার ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে যাবে থানায়। সবাই দেখুক গোবরডাঙার চ্যাটার্জিপাড়ার, লালবাড়ির ছোটোবউয়ের আসল মূর্তি।
অফিসে গিয়ে কদিনই সুস্থির মতো কাজে মন দিতে পারছে না অলকানন্দা। ভেতরে ভেতরে একটা ছটফটানি ভাব লেগেই আছে। সেটা খেয়াল করেছে কস্তুরী। কস্তুরীর পাশের টেবিল অলকানন্দার।
কী হল তোর?
কাল সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি।
ঘুমোতে পারিসনি? কীসের অস্বস্তি? কী ব্যাপার রে তোর? কদিন ধরে লক্ষ্য করছি, কী হয়েছে?
অলকানন্দা এড়িয়ে যেতে গিয়ে, গেল না। বলল, তোকে বলে তো কোনও সুরাহা হবে না। খুবই বিশ্রী একটা কাণ্ড ঘটে গেছে। আমি কিছুতেই ব্যাপারটা বরদাস্ত করতে পারছি না। আবার মন থেকে ঝেড়েও ফেলতে পারছি না।
সব শুনে কস্তুরী একটা বড়ো করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। জলের গেলাস হাতে তুলে বলল, তোর মাথাটা সত্যিই গেছে। এসব তো খুবই বস্তাপচা ঘটনা। তুই এতে ফালতু মাথা গলাচ্ছিস। চিরকালই তো এসব হচ্ছে। তুই ভেবেও বা করবিটা কী?
আমি সোনাগাছিতে যাব।
জলের গেলাসে সবে ঠোঁট ছুঁইয়েছিল কস্তুরী। বেমক্কা বিষম খেয়ে কাশতে লাগল। ধরা গলায় বলল, তুই কোনও সাইকায়াট্রিস্ট-কে দেখা অলোকা। আমার ধারণা, তোর মাথাটা হ্যাং মোডে চলে গেছে। ডোন্ট বি সিলি অলোকা। মাটিতে পা রেখে চল। বাস্তবটা বোঝার চেষ্টা কর। ডোন্ট টেক এনি হুইমজিক্যাল ডিসিশন লাইক দিস। এই ধরনের ছেলেমানুষি জেদের কথা তোর মুখে মানায় না। কোনও ভদ্রঘরের মেয়ে ও-পাড়ায় পা দেয় নাকি? তোর বাড়িতে ক'বছর রান্না করেছে, তো কী হয়েছে? এসব কথা কেউ স্বীকার করে নাকি? লজ্জায় চেপে গেছে।