যেভাবেই হোক, নিরাপদ জায়গায় একবার পৌঁছে যেতে পারলেই এই ভয়ানক নির্মমতার হাত থেকে আমরা রক্ষা পাব। ঠিক সেই সময় হঠাৎই আমার কানের খুব কাছে পুনরায় গুলির শব্দ পেলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার তীব্র আর্তনাদ আমার কানে এল। এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে পিছন ফিরেই আমি ছুটে গেলাম সেদিকে। দেখলাম প্রিয়াঙ্কা ওর ডানহাত চেপে ফুটপাতের উপর বসে পড়েছে। কোনওরকমে এলোমেলো ভাবে ছুটতে থাকা ভয়ার্ত শিক্ষার্থী এবং পথচারীদের সামলে ওকে নিয়ে এলাম সুরক্ষিত স্থানে। গুলিটা ওর কনুই ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। গলগল করে রক্ত পড়ছে। দ্রুত হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ওর প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে হবে। আমি অজিতেশদের বললাম, তোরা বাড়ি যা। আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।
অজিতেশ জবাব দিল, “আমরা তোর বন্ধু। এই সময় আমাদের তোর পাশে থাকা প্রয়োজন। আমরা একসঙ্গে হসপিটালে যাব। তারপর ওর চিকিৎসা হয়ে গেলে একসঙ্গেই বাড়ি ফিরব। এখন আর সময় বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি চল।”
—সেদিন ওর প্রাথমিক চিকিৎসার পর যখন ও সম্পূর্ণ ভাবে বিপদমুক্ত, তখন ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তারপর আমরা যে-যার বাড়ি ফিরেছিলাম। সেদিন ওর বাড়ি প্রথমবার দূর থেকে দেখেছিলাম। ছোট্ট বাড়ি। তবে বেশ প্রাচীন, জরাজীর্ণ। ঘরের সামনে আগাছায় ভরা পথ। সেদিনই বুঝেছিলাম ও কত গরিব ঘরের মেয়ে এবং ওর বাবা কতটা কষ্ট করে মেয়ের লেখাপড়া চালাচ্ছেন। যাই হোক, সেদিনের সেই দুর্ঘটনার জন্যই প্রিয়াঙ্কা আর আমার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। ওকে আর একা ছাড়তে আমার মন চাইছিল না।
আমার বন্ধুরাও বলেছিল সবসময় ওকে সঙ্গ দিতে। সত্যিই আমি ওদের কাছে ক্রমশই ঋণী হয়ে পড়ছিলাম এবং প্রিয়াঙ্কার মতো সুশীলা মেয়েকে জীবনসঙ্গী করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করেছিলাম। ওর হাতে হাত রেখে সেই কথাও আমি জানিয়েছিলাম আর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলাম ওকে ছাড়া আর কোনও মেয়েকে কখনওই ভালোবাসব না। বিয়ে আমি একমাত্র ওকেই করব।