ভাইয়ের জ্বর কমছে না কিছুতেই। ওই ১০৪ ডিগ্রিতে আটকে রয়েছে। মলয়ের কপালে হাত রেখে থার্মোমিটার-টায় আর একবার চোখ বুলিয়ে নিল হিমানী। তারপর আবার কাপড় ভিজিয়ে মলয়ের কপালে রাখল।
নিজের মনে মনেই বিড়বিড় করতে থাকল হিমানী, কেন যে জ্বর নামছে না কে জানে? কতবার ভাইকে ডাক্তারের কাছে যেতে বললাম, কিন্তু সেই এক জেদ… ঠিক হয়ে যাবে।
দিদি চিন্তা করিস না, ডাক্তার দেখিয়ে বা কী হতো ক্ষীণ স্বরে মলয় হিমানীকে বোঝাবার চেষ্টা করে।
আমি আর তোর এই অবস্থা দেখতে পারছি না। চোখের তলায় কে যেন কালি ঢেলে দিয়েে মনে হচ্ছে! এত দুর্বল শরীর। আমি জানি মলির চলে যাওয়াটাকে তুই কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছিস না। তুই নিজেই তো কাণ্ডটা বাঁধিয়েিস। কাউকে কিছু না বলে ডিভোর্স নিয়ে নিলি? সাতবছর একসঙ্গে সংসার করলি। সন্তান হয়নি তো কী হয়েে? আমি জানি মলির দুবার মিসক্যারেজ হয়েে কিন্তু বাচ্চা দত্তক নিতেই বা কী অসুবিধা ছিল? মা-বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন বলার কেউ ছিল, এখন তো তোদের স্বাধীন জীবন।
আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না মলি কী করে এতটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ল? তুই চিরকালই কম কথা বলিস। বেচারা মলি নিঃসঙ্গতা কাটাবার জন্য স্কুলে পড়াবার চাকরি-টা নিল আর বাড়িতে টিউশন করা আরম্ভ করেছিল। ওর দুটো কাজই তুই মেনে নিতে পারলি না। তোর মনে হল টাকার জন্য ও কাজ করছে। তোর অহংকারে লাগল। ভাই, আমি ভালো করেই জানি, তুই আজও পুরোনো বস্তাপচা সংস্কার আঁকড়ে ধরে চলার চেষ্টা করিস। তুই শুধু যে মা-বাবাকে হারিয়েিস তা তো নয়, মলিও দ্বিতীয়বার মা-বাবার স্নেহের আঁচল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। জানিস-ই তো কী প্রচণ্ড ভালোবাসত ও মা-বাবাকে।
মলয় চুপ করে থাকে। হিমানী কথাগুলো না বলেও থাকতে পারে না। ও জানে দোষ মলয়ের তাই দোষটা চোখে আঙুল দিয়ে ওকে দ্যাখানো দরকার। হিমানী আবার বলে, তোর রাগ তো আমি জানি ভাই। নিশ্চয়ই চ্যাঁচামেচি করতিস মেযোর উপরে। একটা ভালো পড়াশোনা জানা মেয়ে একা সে করবেটাই বা কী? কারও সঙ্গে ওকে মিশতে দিবি না, বাড়িতেও কেউ আসা-যাওয়া করবে না। এখন ও চলে গেছে তাতেও তোর শান্তি নেই।
ও-বেচারারই বা কী অবস্থা কে জানে!
দিদি, প্লিজ চুপ কর, যন্ত্রণায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। তুই যা ভাবছিস তা মোটেই নয়। আমার কোনও সমস্যা হচ্ছে না! যার সঙ্গে খুশি ও থাকতে পারে, আমার কী? আমাকে বলেছে, আমি মরলেও জিজ্ঞেস করার কেউ থাকবে না আমার কাছে। ও এটাই চায়। তুই কী করে মলিকে সাপোর্ট করছিস? বেশি আর কী হবে মরেই যাব, এই তো?
তোর একটু শরীর খারাপ হলেই কান্নাকাটি করে একশা করত। তোর আঘাত লাগলে মুখ চুন করে ঘুরত। মায়ে অপারেশনের সময় কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞানই হয়ে পড়েছিল। ও যা মায়ে সেবা করেছে, আমিও হয়তো করতে পারতাম না। সেই মেয়ে সব ছেড়েছুড়ে সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে চলে গেল বিশ্বাস হয় না!
ওকে কনট্যাক্ট করার কোনও তো নম্বর হবে, আমাকে প্লিজ দে ভাই। একবার কথা বলতে চাই। ওর বান্ধবী শুভ্রার নম্বর তোর কাছে আছে? হিমানী নিজেই মলয়ের মোবাইলটা খাটের পাশ থেকে তুলে নিয়ে নম্বর খুঁজতে থাকে।
এখন আর কিছুই করার নেই দিদি। মলি নিজে বলেছে ও শশাঙ্ক-কে বিয়ে করে কানাডা চলে গেছে। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মলয়।
হিমানী মলয়ের থেকে চার বছরের বড়ো। হিমানীর বিয়ে পাঁচ বছর বাদে মলয়ের বিয়ে হয়। স্বভাবে মলয় আর মলি একেবারে বিপরীত দুটো মানুষ। মলয় অন্তর্মুখী আর মলি উচ্ছল ঝরনাধারার মতো। বিয়ে হয়ে এসেই মলয়ের মা-বাবাকে আপন করে নিয়েছিল মলি নিজের ব্যবহারে। হঠাত্-ই মলয়ের মা মারা যান স্ট্রোক-এ। বাবাও আর বেশিদিন বাঁচেননি। সুগারের রুগি ছিলেন।
মা-বাবার মৃত্যু মলয় মানতে পারেনি। ডিপ্রেসড থাকতে শুরু করে। মলিও কিছুতেই ওকে এই অবসাদ থেকে টেনে বের করতে পারে না। ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়া শুরু হয়।
অথচ মলি নিজের শ্বশুর-শাশুড়ির যত্নের কোনও অবহেলা কোনওদিন করেনি। বাড়ির সব কাজ সেরে মাঝেমধ্যে বাইরে ঘুরে আসত মলি। বাইরের কাজ থাকলে সেটা করে পাড়া-প্রতিবেশীদের খবরাখবর নিত। তাদের বাড়ি যেত, তাদের বাড়িতে ডাকত। সকলের সঙ্গে সঙ্গে শ্বশুর-শাশুড়িরও আদরের ছিল সে। সকলেই তাকে ভালোবাসত। কিন্তু তাঁরা মারা যাওয়ার পর থেকেই, লোকজনের বাড়িতে আসা-যাওয়াটা মলয়ের কাছে অসহ্য হয়ে উঠল। অল্পেতেই মলয বিরক্ত হতো। কখনও মায়ে মতো রান্নায় স্বাদ হয়নি বলে, মলিকে বকাবকি করত। আবার কখনও ওর এত বাইরে যাওয়া নিয়ে অশান্তি আরম্ভ করে দিত।
শশাঙ্ক মলির ছোটোবেলার বন্ধু। ক্লাস টুয়েভ অবধি একসঙ্গে পড়েছে। সবসময় হাসিমুখ, অন্যের প্রযোজনে পাশে দাঁড়ানো, লোকের বিপদে আগু-পিছু না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়া এই সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য সবার কাছেই খুব পপুলার ছিল শশাঙ্ক। স্কুল শেষ হওয়ার পর আর যোগাযোগ ছিল না, হঠাত্ই রাস্তায় একদিন মুখোমুখি দেখা। সেই একই রকম চেহারা রয়েে। মুখে দুষ্টু-মিষ্টি হাসিটা লেগে রয়েে। চোখদুটো যেন কথা বলছে। শুধু তফাত, আগের থেকে চেহারা খানিকটা ভারিক্কি হয়েে আর মুখের ফ্রেঞ্চকাট দাড়িটা।
আরে, শশাঙ্ক তুই, এখানে! চিনতে পারছিস? মলি খপ করে ওর হাতটা ধরে ফেলে।
হ্ঁযা। তুই মলি? বিশ্বাস হচ্ছে না। মলি মানেই সেই স্কার্ট-ব্লাউজ পরা, দুটো বিনুনি ঝোলানো, রুমাল দিয়ে নাক মুছতে থাকা মেযোকেই মনে পড়ে। শাড়ি পরে মাথায় সিঁদুর, না রে আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না! হা হা করে রাস্তার মাঝেই হাসতে আরম্ভ করে শশাঙ্ক।
আর তুই এখনও বিয়ে করিসনি? হেসেই জিজ্ঞেস করে মলি।
ঝটপট উত্তরও পেয়ে যায়, পাগল! এখনও আমি স্বাধীন। কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি, ভালো একটা চাকরিও জোগাড় করেছি। এত সহজে হাড়িকাঠে মাথা দেব ভেবেছিস? একটু তো প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নিই। মলির মনে হয় শশাঙ্ককেই মানায় এই প্রাণখোলা হাসিটায়।
কী করছিস? কিছু কেনাকাটা করার আছে নাকি? নয়তো চল বাইক সঙ্গে আছে, কোথাও বসে একটু আড্ডা মারি, শশাঙ্ক বলে।
না রে, সারাদিন বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠলে সন্ধেবেলায় একটু ঘুরে আসি। প্রযোজনে টুকিটাকি জিনিসও মাঝেমধ্যে কিনে নিই। সেটাই কিনতে যাচ্ছি এখন, হাসে মলি।
কেন রে, তোর পতিদেব বাইরের হাওয়া খেতে ভালোবাসে না! নাকি বউয়ে হাত ধরে বেরোনো তার পছন্দ নয়? নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে ওঠে শশাঙ্ক। লক্ষ্য করে না ওর এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে, মলির মুখে একটা ছায়া পড়ে, আবার মিলিয়ে যায়।
ঠিক আছে, চল না, জিনিসগুলো কিনে নে। তারপর কোথাও একটু চা খেয়ে তোকে না হয় আমি বাইকে ছেড়ে দিয়ে আসব।
খানিক্ষণের মধ্যে বাইকের পিছনে বসে যেতে যেতে মলি শশাঙ্কের বলে যাওয়া জোক্সগুলো একটার পর একটা শুনতে শুনতে, অনেকটা হালকা বোধ করল। মনের উপর থেকে একটা ভারী পাথর যেন সরে গেছে। শশাঙ্কটা কিছুতেই গম্ভীর হয়ে থাকতে দেয় না। খিলখিলিয়ে হেসে উঠল মলি এবার। বহুদিন বাদে এভাবে মনখুলে মলি হাসতে পারল। শশাঙ্কর দ্বারা বোধহয় কিছুই অসম্ভব নয়। শশাঙ্ক এবার প্লিজ থামবি। হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করছে, কপট রাগ প্রকাশ করল মলি। মলির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দুজনের কথা হচ্ছিল।
উফ্, মলি তুই কি বোরিং হয়ে গেছিস। কোথায় বরের সঙ্গে ঘুরবি, মুভি দেখতে যাবি, রেস্টুরেন্টে খাবি তা না করে
দোকান-বাজার করছিস। বিয়ে কেন করেছিস? চল তোর বরের জন্য সিঙাড়া কিনে দিই। কী করে না খায় দেখব। বাড়ি ঢুকে আগে গরম গরম চা কর। আশ্চর্য মলিকে বাড়িতে ছাড়তে অথবা বাড়িতে এসে মলির বরের সঙ্গে আলাপ করতে, এতটুকুও সঙ্কোচ বোধ ছিল না শশাঙ্কর। বরং মলি একটু বিব্রত বোধ করছিল। শশাঙ্কর উপস্থিতি মলয় কীভাবে নেবে, সেটা মলি বুঝে উঠতে পারছিল না।
দ্বিধা নিয়ে মলি শশাঙ্ককে নিয়ে বাড়িতে ঢুকল। মলয়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়ে শশাঙ্ককে বসিয়ে মলি চা করতে চলে গেল। চা-সিঙাড়া ট্রে-তে সাজিয়ে ঘরে ঢুকে দেখল মলয় চুপচাপ বসে, শশাঙ্ক একাই কথা বলে যাচ্ছে। শশাঙ্কর অনেকবার অনুরোধ করায় সিঙাড়ার একটা কোণ ভেঙে একটু মুখে দিয়ে প্লেট সরিয়ে রাখল। শশাঙ্কর মজার মজার কথাতেও মলয়ের মুখের কোনও পরিবর্তন হল না। মলয়ের মতে একটা বয়সের পর মানুষকে গম্ভীর হয়ে যেতে হয়। বাচ্চাদের মতন আচরণ তখন মানায় না। এর জন্য় কত বকা যে শুনতে হয় মলিকে, তার গুনতি করাই অসম্ভব।
ওদের কথার মাঝেই মলয় উঠতে চাইলে শশাঙ্ক উঠে দাঁড়ায়, আপনি বসুন, আমি এখন উঠব। অনেক বোর করলাম কিন্তু শিগগির আবার আসব। তৈরি থাকবেন।
গেট পর্যন্ত এসে মলির কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে শশাঙ্ক বলল, এই লোকটাকে মানুষ বানিয়ে তবে ছাড়ব। আমি সহজে হার মানছি না। একে কী করে তুই বিয়ে করেছিস মলি! কাল সন্ধেবেলায় দেখা হচ্ছে। বাই, দিয়ে স্পিডে বেরিয়ে গেল।
পরের দিন সন্ধে ছটার সময় শশাঙ্ক মলির বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ল। মলি দরজা খুলতেই পকেট থেকে তিনটে গোলাপি রঙের সিনেমার টিকিট চোখের সামনে নাচিয়ে শশাঙ্ক বলল, তাড়াতাড়ি তৈরি হ। তোর ব্যাজারমুখো বরটা কোথায়? ওটাকেও তৈরি হতে বল। আটটার শো। একটা ভালো কমেডি ছবি এসেছে।
তোকে তো বলেছিলাম মলয় সিনেমা দেখা পছন্দ করে না। বিশেষ করে কমেডি তো একেবারেই নয়। আরে ডাক না তোর বরকে। ওর পছন্দের ব্ল্যাক কফি খাওয়াব। রাতের ডিনারটাও না হয় আমার তরফ থেকেই। দ্যাখ এদিকটায় নতুন নতুন এসেছি কাউকে এখনও সেরকম চিনি না। ভাগ্যিস তোর সঙ্গে দেখা হয়েিল! নে নে তাড়াতাড়ি কর। কুড়ি মিনিট পর ক্যাব পেঁছে যাবে, শশাঙ্ক অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে।
মলয় না করা সত্ত্বেও জোর করে ধরে নিয়ে যায় শশাঙ্ক সিনেমা দেখাতে। সারাটা সন্ধে আর বিশেষ কথা বলে না মলয়। চুপচাপ ডিনার খাওয়া শেষ করে শশাঙ্ক ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। বাড়ি এসেই মলির উপর রাগ উগরে দেয় মলয়।
মলি, তোমার বন্ধু খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছে। ওকে আমার পছন্দ-অপছন্দগুলো বলে দিও। এরপর যদি করে, আমি কিন্তু যা-তা বলতে বাধ্য হব। ওর ফালতু রসিকতা তোমার মতো বেকারের পছন্দ, আমার নয়। মলিকে সাবধান করে দেয় মলয়।
শ্বশুর-শাশুড়ি মারা যেতে স্নেহভরা পরিবেশ মলিও হারিয়েিল। কুড়ি বছর বয়সে নিজের বাবাকে হারিয়েিল সে। চারপাশটা কেমন শূন্য মনে হয় মলির। চরম বিষাদেও নিজেকে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে দেয়নি মলি। ভাঙা মন জোড়া লাগিয়ে আবার নতুন উদ্যমে বাড়ির পরিবেশটাকে খুশিতে ভরিয়ে তুলেছিল।
কিন্তু মলয়ের ক্ষেত্রে পুরোপুরি হেরে গেছে মলি। দুবছর কেটে গেছে, মা-বাবার মৃতু্যর শোক আজও ভুলতে পারেনি মলয়। অবসাদের পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে, কাছেই একটা স্কুলে চাকরি নিয়েিল মলি। সেখানে সারাদিন বাচ্চা পড়িয়ে মনটা ভালো থাকত। এরপর বাড়িতেও বাচ্চাদের পড়াতে আরম্ভ করে সে। কিন্তু শনিবারগুলো মলয় বাড়ি থাকত। এছাড়া যেদিন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরত, সেদিন বাড়িতে চার-পাঁচটা বাচ্চার হাসি, কথাবার্তা, সবেতেই বিরক্ত হয়ে উঠত মলয়। তাই, মলয়কে খুশি করতে সপ্তাহান্তে বাচ্চা পড়ানো বন্ধ করে দিয়েিল মলি।
মলির ব্যস্ততার কারণে আর মলয়ের অপছন্দ করার ফলে, শশাঙ্কও মলির বাড়ি আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েিল। মাঝেমধ্যে শনিবার এলেও, মলির সঙ্গে গল্প করেই চলে যেত। মলয় একদিনও ওদের সঙ্গে বসে আড্ডায় যোগ দিত না। শশাঙ্কর মজা করার অভ্যাস কিছুটা প্রাণ ফিরিয়ে আনত মলির।
একদিন একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরতেই, মলয় দেখল বাড়িতে হইহই হচ্ছে। বাড়িতে কেক কাটা চলছে। মলির কোনও ছাত্রের জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল মলয়।
বাড়ি খালি হতেই মলয় একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ল মলির উপর, তোমাকে বলেছি না, বাড়ি ফিরে আমার একটু শান্তি চাই। এইসব ড্রামা আমার একদম পছন্দ নয়। কাল থেকে কোনও বাচ্চা যেন আমার বাড়িতে পড়তে না আসে। পড়াবার ইচ্ছে থাকলে কোথাও ঘর ভাড়া করে পড়াও। আমার খুশি তো তুমি কখনওই দ্যাখো না, যা ইচ্ছে তাই করো। আমি এটা বরদাস্ত করব না, বলে আবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
ধৈর্যের শেষ বাঁধটুকুও ভেঙে গেল মলির। মলয়ের কথাগুলো ছুরির আঘাত ওর কোমল হৃদয়টাকে রক্তাক্ত করে তুলল। মলয়ের ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় ধাক্কা মেরে জোর করে দরজা খুলিয়ে প্রথমবার মলয়ের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল।
তুমি কী বলছিলে? তোমার বাড়ি? তোমার খুশি? আমি তো বিয়ে পর এটাকেই নিজের বাড়ি বলে ভেবে এসেছি। তোমার হুকুম শোনার জন্য আমি বিয়ে করিনি। আমি তোমার চাকর নই। তুমি শুধু নিজের খুশির চিন্তা করো, বউয়ে খুশি নিয়ে একদিনও ভেবেছ?
আমিও আদরে মানুষ হয়েি। একটা বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মেযো সেটাকেই নিজের বাড়ি ভেবে নেয়, ওই বাড়ির নিয়মে নিজেকে আবার নতুন করে ঢেলে সাজায়। আর তুমি এক নিমেষে আমাকে বাইরের রাস্তা দেখিয়ে দিলে? তোমার যদি এরকমই মেয়ে পছন্দ ছিল তাহলে অনাথ, গরিব, অশিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করলেই পারতে। হাত জোড় করে তোমার আজ্ঞা পালন করত। কিন্তু তা তো হবার নয়। বিয়ে করতে হবে শিক্ষিত, সুন্দরী, ভালো ঘরের মেয়েে। যাতে সবার কাছে সম্মানটা বজায় থাকে, রাগে কাঁপতে কাঁপতে এক নিশ্বাসে মলি কথাগুলো বলে হাঁপাতে থাকে। মলয় বিস্ফারিত চোখে চেয়ে থাকে মলির দিকে, মুহূর্তে কোনও উত্তর জোগায় না মুখে।
পুরুষ মানুষ, বউয়ে কাছে হেরে যাওয়া লজ্জার কথা। সুতরাং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মলয় বলে উঠল, এতই যদি দম্ভ, বড়োলোক দেখে বিয়ে করলে না কেন? শশাঙ্কই তো ছিল। ওর সঙ্গে সময় কাটাবার জন্য তোমার মন কাঁদে সব সময়। কেন, আগে ও ভালো চাকরি করত না বলে বিয়ে করনি?
খবরদার মলয়, একটা বাজে কথা মুখ থেকে আর বার করবে না। তোমার নোংরা মনের পরিচয় আমি আগেই পেয়েি। আমি শশাঙ্কর কাছেই চলে যাচ্ছি। একটাই শান্তি, ও তোমার মতো নীচ মনের মানুষ নয়। ওর সঙ্গে আমি অনেক ভালো থাকব, বলে রাগের মাথায় শশাঙ্ককে ফোন করল মলি।
অফিস ফেরত শশাঙ্ক সোজা মলিদের বাড়ি এল। মলিকে বোঝাবার অনেক চেষ্টা করল। মলয়ও অনেক অনুনয়-বিনয় করল কিন্তু মলি মন ঠিক করে নিয়েিল। কেউই কিছু বোঝাতে পারল না মলিকে। অগত্যা শশাঙ্ক বলল, ঠিক আছে, তুই আমাকে মাসিমার নম্বরটা দে। আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি। এলাহাবাদে গিয়ে কয়ে দিন কাটিয়ে আয়। আমি টিকিট কেটে দিচ্ছি।
না রে, মা শুধু শুধু চিন্তায় পড়ে যাবে। সত্যিটা জানতে পারলে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না, জলে ভেসে যেতে থাকে মলির দুচোখ।
সত্যিটা বলবি কেন? বলবি এমনি ঘুরতে এসেছিস। ধীরে ধীরে দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। দুজনেরই রাগ ঠান্ডা হয়ে এসেছে। ঠিক আছে কালই আমি টিকিট কিনে নিচ্ছি।
মলিকে বুঝিয়েসুঝিয়ে শশাঙ্ক সবে বড়ো রাস্তায় পড়েছে। হঠাৎ-ই রং সাইড থেকে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মারল শশাঙ্কর বাইককে। ছিটকে পড়ল শশাঙ্ক। হেলমেট থাকা সত্ত্বেও বুঝতে পারল মাথায় চোট লেগেছে, পা-টাও নাড়াতে পারছে না। মলির মুখটা মনে পড়ল। ধীরে ধীরে জ্ঞান হারাল সে। ততক্ষণে ভিড় জমে গেছে। পুলিশ এসে অ্যাম্বুল্যান্স করে হাসপাতালে পেঁছোল শশাঙ্ককে। ততক্ষণে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। শশাঙ্ক তখন কোমায়। মোবাইলটাও ভেঙে রাস্তায় ছিটকে পড়েছিল।
তিনদিনের পরও যখন শশাঙ্ক এল না বা ওর ফোনও পাওয়া গেল না, মলয় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মলিকে ব্যঙ্গ করতে ছাড়ল না, তোমার ভালোবাসার মানুষ ভয় পেয়ে পালিয়েে।
সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। অন্যের সঙ্গে চলে যাব সেই ভয়ে কি ডিভোর্স দিচ্ছ না? বিরক্ত হয়ে মলি জিজ্ঞেস করে।
ভয় কাকে করব? শশাঙ্ককে? একটা উজবুক। কালই চলো ভালো কোনও উকিলের সঙ্গে কথা বলব।
ঠিক আছে, আবার অবস্থান বদলে ফেল না, রাগের মাথাতেই নিশ্চিত হতে চাইল মলি।
সত্যি বলতে কী, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়াল। শেষমেশ ডিভোর্সের পর সাহস করে মলি এলাহাবাদে মায়ে কাছে গিয়ে দাঁড়াতে, মলিনাদেবী শোকে পাথর হয়ে গেলেন। মলি ধীরে ধীরে তাঁকে আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারলেও, নিজে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারল না। শরীর ভাঙতে আরম্ভ করল। মলয়েরও মন আত্মগ্লানিতে ভরে উঠল। নিজের
অংহবোধ-এর জন্য মলির সঙ্গে ডিভোর্স নিয়েিল ঠিকই কিন্তু মনে মনে জানত ওদের সংসারের জন্য, ওর বুড়ো মা-বাবার জন্য মলি কতটা আত্মত্যাগ করেছে। মলি মিষ্টি ব্যবহার দিয়ে পাড়া-প্রতিবেশী সকলের মন জয় করে নিয়েিল। সকলেই জিজ্ঞেস করত মলি কেন চলে গেল? কিন্তু এর কোনও উত্তর ছিল না মলয়ের কাছে।
এ বাড়িতে আর কেউই আসত না। খালি বাড়িটা যেন গিলে খেতে আসত মলয়কে। আগে সামান্য চ্ঁযাচামেচি হলে রেগে উঠত, আর এখন খালি মনে হতো বাড়িতে কেউ তো আসুক। প্রায়শ্চিত্তের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে শয্যাশাযী হয়ে গিয়েিল মলয়। জল এগিয়ে দেওয়ারও কেউ ছিল না। ভাগ্যিস, হিমানীকে কেউ খবর দিয়েিল। দিদি না এলে এতদিনে প্রাণটুকুও হয়তো হারাতে হতো।
শুভ্রাকে ফোন করে হিমানী জানতে পারল, শুভ্রা ইদানীং আর এলাহাবাদে থাকে না। দিল্লি চলে গেছে। ও সোজাসুজি হিমানীকে বলল, এখন আর কী হবে দিদি। ডিভোর্স হয়ে গেছে। মলয় ওর জীবন নরক করে তুলেছিল। ওর দুঃখ সহ্য করতে না পেরে মাসিমাও মারা গেলেন। এখন মলি শশাঙ্ককে বিয়ে করে কানাডায় সেটেলড। ওরা ভালো আছে। আপনারা আর ওর চিন্তা করবেন না।
এটা কিছুতেই হতে পারে না শুভ্রা।
মলয়ের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে মলির, শশাঙ্ককে বিয়ে করায় অসুবিধা কোথায়…, জোরের সঙ্গে বলল শুভ্রা। সেটাই তো। আমি জানি ওই বাড়ির সঙ্গে ও কতটা ক্লোজ ছিল। এই বাড়ি, এই বাড়ির মানুষগুলোর সঙ্গেও। ভাইয়ে বউ ছিল ও, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বও কিছু কম ছিল না। মলি ডিভোর্স করে বিয়ে করে নিল, মন কিছুতেই মানতে চাইছে না। শুভ্রা ঠিক করে বলো। একবার বলো তুমি যা বলছ সব মিথ্যা। মাত্র দেড় বছর হল আমরা নিউজিল্যান্ডে শিফ্ট করেছি, আর এর মধ্যে এত কাণ্ড! প্লিজ শুভ্রা ওর কনট্যাক্ট নম্বরটা একবার দাও। আমি ওর মুখ থেকে নিজের কানে শুনতে চাই, হিমানী করুণ স্বরে রিকোযে্ট করে শুভ্রাকে।
দিদি, ও নম্বর দিতে বারণ করেছে। আর কী করবেই বা তুমি? হাড় কটা রয়ে গেছে শরীরে। ওর অবস্থা চোখে দেখতে পারবে না। কেউ ওর কথা জিজ্ঞেস করলে এগুলোই সবাইকে বলতে বলেছে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে শুভ্রা। হিমানীর অনুরোধ কিছুতেই ফেলতে পারে না, হেরে গিয়ে মলির নতুন নম্বরটা হিমানীকে দিয়ে দেয় শুভ্রা।
শুভ্রা, এটা তো ইন্ডিয়ারই নম্বর, আশ্চর্য হয় হিমানী।
দিদি মলি শশাঙ্ককেও বিয়ে করেনি, কানাডাও যায়নি। শশাঙ্ক আমার পিসির ছেলে। কলকাতায় গিয়ে সাংঘাতিক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। চারমাস কোমাতে পড়ে ছিল। তারপর জ্ঞান ফিরলেও নানা সমস্যা হচ্ছিল। পিসিরা ওকে দিল্লিতে নিয়ে এসে চিকিত্সা করায়। এখন ভালো হয়ে ওরা সবাই এলাহাবাদ ফিরে গেছে। শশাঙ্কই আমাকে মলির খবরাখবর দিতে থাকে। শুভ্রা বিস্তারিত খুলে বলে হিমানীকে।
হিমানী, শুভ্রার ফোন ছেড়েই মলির নম্বর ডায়াল করে।
হ্যালো… সেই মিষ্টি গলা কিন্তু আজ তাতে আর যেন প্রাণ নেই।
মলি, আমি তোর হিমানীদি। এতটা পর করে দিলি আমাদের! কাউকে কিছু জানালি না। কী করলি তোরা? তোরা কি পাগল!
ওদিকে কোনও উত্তর নেই দীর্ঘশ্বাসের মৃদু আওয়াজ ছাড়া।
তোদের দুজনকে ভালোমতন জানি। তোর যা অবস্থা, মলয়েরও তাই। মলয়ও বিছানায় পড়ে রয়েে। এত ভালোবাসা কিন্তু এত ইগো কেন? মলয় প্রচুর ভুল করেছে। প্রিয়জনদের হারিয়ে ওর মাথায় ভত চেপেছিল যার জন্য তোকে ও হারিয়েে। আজ নিজের আচরণের জন্য ও লজ্জিত। প্রতি মুহূর্তে তোকে মিস করছে। মলি, মলয় আজও তোকেই ভালোবাসে।
মলি নিশ্চুপ।
এই ভাবে চললে দুজনের কেউই বাঁচবি না। অনেক তো লুকোবার চেষ্টা করলি। শুভ্রা আমাকে সব সত্যিটা বলেছে। ফিরে আয় মলি। আমি আসছি তোর কাছে, ভাইটাকেও কান ধরে নিয়ে আসব। আগে তো ক্ষমা চাইবে তোর কাছে। এরপর কখনও যদি তোকে দুঃখ দেয়, তোকে কাঁদায় তাহলে ও আমায় জীবিত পাবে না, এই আমি ওকেও জানিয়ে রাখলাম।
হিমানীর কথা শেষ হওয়ার আগেই মলয় বিছানা থেকে উঠে বসে দিদির মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরল, দিদি আর কোনও দিন এই কথাটা বলবি না।
তাহলে দুজনেই কান ধরে ক্ষমা চা আমার কাছে, মৃদু হেসে হিমানী বলল, যেটা মলয় ছাড়াও ফোনের ওপাশে মলির কানে গিয়ে পেঁছোল। মলি এমন একটা মেয়ে যে পুরো বাড়ি মাথায় করে রেখেছিল, সবাইকে আপন করে নিয়েিল তার সঙ্গে তুই অ্যাডজাস্ট করতে পারলি না ভাই, কেন? মানছি তোর কিছু পছন্দ, অভ্যাস, সংস্কার আছে, সেরকম মলিরও তো কিছু চাহিদা আছে… তাই না কি? অ্যাডজাস্ট খালি ওই করে যাবে? আমি কি প্রথম থেকে এরকম ছিলাম? রানার জন্য অনেক নিজেকে বদলেছি। রানাও নিজেকে কম বদলায়নি। তাই আজ আমরা সুখী দম্পতি। তোকেও ভাই বদলাতে হবে, কিছু ত্যাগ করতে হবে মলির জন্য। পারবি না মলির জন্য নিজেকে বদলাতে? আশা নিয়ে মলয়কে জিজ্ঞেস করে হিমানী।
হ্ঁযা দিদি, তুই যা বলছিস আমি শুনব, আশ্বাস দেয় মলয়।
তাহলে কথা বল ওর সাথে। নম্বর-টা ডায়াল করে হিমানী ভাইয়ে হাতে ফোনটা দিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল।
মলি, কোন মুখ নিয়ে আমি কথা বলব তোমার সাথে। আমি অপরাধী, আমাকে পারো তো ক্ষমা করে দাও। বিয়ে পর থেকে বাড়ির সব দাযিত্ব তুমি পালন করেছ। হনিমুন কেন কখনও কোথাও তোমাকে বেড়াতে নিয়ে যাইনি। নিজের ইচ্ছে শুধু তোমার উপর চাপিয়ে গিয়েি। তোমার সঙ্গে পা মিলিয়ে দুপা হাঁটতেও কখনও চেষ্টা করিনি আমি। বাচ্চা দত্তক নিতে চেয়ে, আমি মত দিইনি। বাড়িতে টিউশন আরম্ভ করেছিলে, সেখানেও আমি তোমাকে অপমান করেছি। তোমার বন্ধু সম্পর্কে যা নয় তাই বলেছি। তোমাকে পাঁকে নামাতেও আমি দ্বিধা করিনি। এতটা নীচে নামতে পেরেছি আমি। মলি এতদিন আমি যা করে এসেছি সব ভুল করেছি! তুমি কেন কেউই সহ্য করতে পারত না। প্লিজ কিছু বলো মলি। আমাকে থাপ্পড় মারো, গালাগালি দাও, বাজে কথা বলো কিন্তু প্লিজ কথা বলো, কথা না বললে আমি ওখানে চলে আসব।, মলয় অনুনয় বিনয় করতে থাকে।
ফোনের ওপাশ থেকে মলির কান্না মলয়ের বুকের গভীরে ক্ষত আরও বাড়িয়ে তোলে।
আমি আসছি মলি তখন মন ভরে আমাকে মেরে নিও কিন্তু তুমি আমার প্রাণ। আমাকে আমার প্রাণ ফিরিয়ে দাও। দিদিকে দিচ্ছি আমি বলে হিমানীকে ফোন ধরায় মলয়।
আর কাঁদিস না মলি, অনেক কেঁদেছিস তোরা দুজন। তুই আসার জন্য তৈরি থাকিস। মলয় ফিট হলেই ওকে নিয়ে যাচ্ছি, হিমানী বলে। ওপাশে কান্না বন্ধ হয়ে গিয়েিল, কিছু বলবি না মলি! হেসে জিজ্ঞেস করে হিমানী। না দিদি তোমরা এসো, ক্ষীণ স্বরে মলি উত্তর দেয়।
তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নে, আমরা আসছি। বিয়ে দিয়ে নতুন বউ ঘরে তুলব। দুর্গাপুজো এবার কলকাতায় একসঙ্গে কাটাব ঠিক করেই রেখেছি। রানা তোদের নিয়ে অসম্ভব চিন্তায় রয়েে। ওকেও আনন্দের খবরটা জানাতে হবে। দিদির উপর বিশ্বাস রাখ মলি। তোর সংসার তোর প্রতীক্ষায় রয়েে। ব্যস শুধু নিজের বাড়ি ফিরে আয় মলি।
ঠিক আছে দিদি। তোমরা যা চাও তাই হবে, মলির স্বরে প্রাণ ফিরে এসেছে হিমানী ঠিকই ধরতে পেরেছিল।
নে ভাই, এবার তুইও সুস্থ হয়ে নে, তাড়াতাড়ি আমরা সবাই একসঙ্গে এলাহাবাদ যাব, হিমানী মলয়ের কপালের জলপট্টিটা বদলাতে বদলাতে মৃদু হেসে বলে।
মলয়কে ওষুধ খাইয়ে হিমানী উঠে গিয়ে স্বামীকে ফোন করল, মলি আর মলয়ের সুসংবাদটা দেবে বলে।