ক্রিং ক্রিং…। ফোনটা অনবরত বেজে চলেছে। ঘড়িটার দিকে তাকালাম। বিরক্তি চেপে রেখে ফোনটা তুললাম। ওপাশ থেকে গলা ভেসে এল। প্রথমটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অজয়ের গলা। এক যুগ কেটে গেছে। কবে শেষবারের মতো ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল মনে পড়ল না। সেই কবেই ওর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে আর তার প্রধান কারণ ছিল ওর অহংকার। অহংকারে এতটাই ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিল যে বিবেক বলে ওর আর কিছুই ছিল না। ওর ব্যবহারে আমি এতটাই ব্যথা পেয়েছিলাম, যে ওর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে দিয়েছিলাম। ও-ও যোগাযোগ রাখার কোনও চেষ্টা করেনি। বন্ধুত্ব আছে বলেই যে ওর হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাব এমন কোনও মানে নেই। যেটা অন্যায় সেটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়াটাই আমার অভ্যাস। অজয়েরও সেটা খারাপ লাগতেই পারে তাই বলে এতটাও নয় যে ও খুব খারাপ ভাষায় আমাকে ওর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবে। এত বছরের বন্ধুত্ব, একজন মহিলার জন্যে এভাবে যে ওর কাছে মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে, সেটা দেখে আমি প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছিলাম। সেদিনই ঠিক করে নিয়েছিলাম অজয়ের সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্কই আর রাখব না।

আমি আর অজয় একই পাড়ায় থাকতাম। স্কুল, কলেজ সব একসঙ্গে। তারপর আলাদা চাকরির জগৎ। সুখ-দুঃখ আমরা সবসময় একসঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি। অজয় প্রথম বিয়ে করে নিজে দেখে। স্বাতিকে। স্বাতি যথেষ্ট সুন্দরী, বুদ্ধিমতী এবং ধনী পরিবারের মেয়ে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ও সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী। অজয়ের মা-বাবাও স্বাতিকে খুবই ভালোবাসতেন। ওর স্বভাবটাই এতটা মিষ্টি ছিল যে সকলেই ওকে পছন্দ করত। ওর সঙ্গে দাদা-বোনের সম্পর্ক পাতিয়েছিলাম। আমি ওর বাড়িতে গেলেই খাতিরদারীর কোনও সুযোগ ও হাতছাড়া করত না। আমিও ওকে নিজের বোন ছাড়া বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে কোনওদিন ভাবতে পারিনি।

এরই মধ্যে স্বাতি দুই সন্তানের মা হল। অজয় সরকারি চাকরি করত। প্রোমোশন পেয়ে পেয়ে এমন জায়গায় পেৌঁছে গিয়েছিল যেখানে উপরি-কামাইয়ের কোনও অন্ত ছিল না। মধ্যবিত্ত একটা পরিবারকে কালো টাকার আবর্তে ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছিল। কিন্তু ভগবান বাধ সাধলেন। অজয়ের কপালে সুখ সহ্য হল না। স্বাতি আক্রান্ত হল ক্যানসারে। তিন বছর ধরে জলের মতো টাকা খরচ করেও স্বাতিকে বাঁচানো গেল না। স্বাতির মৃত্যুতে অজয় প্রচন্ড ভাবে ভেঙে পড়ল। বাচ্চা দুটো অসময়ে তাদের মা-কে হারাল।

কথায় আছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব আঘাতের চিহ্নই ধীরে ধীরে মুছে যায় তা সে যত বড়ো আঘাতই হোক না কেন। কয়েকমাস পার হয়ে যাওয়ার পর অজয়ের ডিভোর্সি ছোটো বোন কানপুর থেকে চাকরি নিয়ে কলকাতায় দাদার কাছে এসে উঠল। পৈতৃক বাড়ি, আজয়ও বোনকে মানা করল না। অন্বেষার নিজের কোনও সন্তান না থাকায় দাদার বাচ্চাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিল। অজয়ও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাঁচল।

স্বাতির মৃত্যুর দুই বছর তখনও হয়নি। অন্বেষা এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজনেরা অজয়কে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার জন্যে চাপ দিতে আরম্ভ করল। অজয়ের বয়স তখন বিয়াল্লিশ ছুঁই ছুঁই। বাচ্চারা মায়ের আদর ফিরে পাবে এই ভেবে আমিও অজয়কে বিয়ে করার পরামর্শ দিই। অজয়ের মনে সংশয় ছিল যে সৎমা আসলে বাচ্চাদের সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করবে? অনেক বোঝাবার পরে অজয় রাজি হল কিন্তু চোখের জল ধরে রাখতে পারল না। লুকোবার চেষ্টা করলেও আমার কাছে ধরা পড়ে গেল। আমার কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘কী দোষে বল তো আমাকে মাঝ সমুদ্রে ফেলে রেখে দিয়ে স্বাতি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেল? আমি কি কখনও বাচ্চাদের মায়ের জায়গা নিতে পারি? রাত্তিরে আমি ওদের নিয়ে শুই। মাঝরাতে মায়ের জন্যে কেঁদে উঠলে আমি ওদের চুপ করাতে পারি না। অফিসে গেলে বাড়ি ফেরার জন্যে উতলা হয়ে উঠি, কত বেশি বাচ্চাদের সঙ্গে থাকতে পারব এই ভেবে। আমি সবসময় চাই যাতে ওরা মায়ের অভাব বুঝতে না পারে।’

অজয়ের কথায় আমিও ভাষা হারিয়ে ফেলি। মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সংযত করে বেশ জোরের সঙ্গে বলি, ‘যা হবার ছিল হয়েছে। অতীতে পড়ে না থেকে বর্তমান ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাব।’

‘কী ভাবব? বাচ্চারা বড়ো হচ্ছে কিন্তু মায়ের স্মৃতি আজও ওরা অাঁকড়ে ধরে রেখেছে। আজও চোখে ওদের জল আসে মায়ের কথা উঠলেই। ওদের জন্যেই আমার বেশি চিন্তা হয়।’

‘দ্যাখ, স্বাতির অভাব আমরা সকলেই ফিল করি আর বাচ্চারা তো করবেই। তুই দ্বিতীয় বিয়ে করলে হয়তো মায়ের এই অভাব কিছুটা হলেও দূর হবে।’

‘হতে পারে কিন্তু এর গ্যারান্টি কোথায়? যদি আমার বিয়ে করার বিচার ভুল প্রতিপন্ন হয়, তাহলে আমি নিজেকে কোনওদিন ক্ষমা করতে পারব না। বাচ্চাদের চোখেও আমি সারা জীবনের মতো অপরাধী হয়ে থাকব।’

অজয়ের ভয় অমূলক নয় জানি কিন্তু আশঙ্কার উপর নির্ভর করে পথচলা তো আর বন্ধ করা যায় না। ভবিষ্যতে কী হবে আর কী হবে না, সেটা কে জানে? এমনও তো হতে পারে অজয়-ই পুরোপুরি বদলে গেল?

অজয়ের জন্যে বহু পাত্রীর সম্বন্ধ এল। অন্বেষা অনেক সম্বন্ধ প্রথমেই নাকচ করে দিল সুন্দরী মেয়ে চাই বলে। নিন্দুকেরা এই নিয়ে মশকরা করতে ছাড়ল না যে এই বয়সেও সুন্দরী ভার্যার প্রয়োজন পড়ল। শেষে একটা সম্বন্ধ অজয়ের মনে ধরল। ফরসা, সুন্দরী, ডিভোর্সি, এক সন্তানের মা। নাম সুনন্দা। কানে এসেছিল মহিলার স্বামী কোনও কোম্পানিতে মার্কেটিং বিভাগে কাজ করতেন এবং পথ দুর্ঘটনায় তার একটা পা চলে যায়।

অজয় আর অন্বেষা দুজনেই যে সুনন্দাকে পছন্দ করেছিল তার প্রধান কারণ ছিল সুনন্দা সুন্দরী। ওর একটি মেয়ে, বয়স আট বছর। কেন জানি না সুনন্দার সঙ্গে অজয়ের বিয়েটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারিনি।

আমার সুনন্দাকে দেখে মনে হয়েছিল, অজয়ের জন্যে সুনন্দা উপযুক্ত নয়। অজয়ের দরকার ছিল ঘরোয়া একজন সাধারণ মেয়ের। কিন্তু সুনন্দা খুবই ব্যক্তিত্বময়ী এবং অজয়ের সঙ্গে ওর ব্যক্তিত্বের জমিন-আসমান ফারাক।

অজয় আমার বন্ধু ঠিকই কিন্তু মানবিকতার দৃষ্টি দিয়ে দেখলে মনে হয় ভগবান বোধহয় অন্যায়ই করেছেন সুনন্দার সঙ্গে। সুনন্দার মেয়ে শ্রেয়াও যথেষ্ট স্মার্ট এবং সুন্দরী সেই তুলনায় অজয়ের ছেলেমেয়ে অতটা অসাধারণ নয়। একলা কোনও নারীর পক্ষে একাকী সারাজীবন কাটানো সহজ নয় এবং সেই কারণেই হয়তো সুনন্দার মা-বাবা সামাজিক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে অজয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়াই উচিত মনে করেছেন।

সুনন্দার সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই অজয় প্রচণ্ড বদলে যেতে থাকে। স্ত্রীয়ের সৌন্দর্য ওকে কীরকম যেন একটা পাগল করে তুলতে থাকে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু এমনকী বাচ্চারাও ওর কাছে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। চোখের সামনে থেকে সরে গেলেই সুনন্দা অপর কারও হয়ে যেতে পারে এই ভয় অজয়কে কুরে কুরে খেতে আরম্ভ করে ফলে অফিস না যাওয়ারও নানা বাহানা ধীরে ধীরে অজয় তৈরি করা আরম্ভ করে।

আমার আসা-যাওয়াও অজয়ের বাড়িতে অনেক কমে গেল। অজয় আমাকেও সুনন্দার সঙ্গে সময় কাটাতে দিতে পছন্দ করত না। সর্বক্ষণ সুনন্দার সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থাকত। সুনন্দাও স্বামীর দুর্বলতা বুঝতে পেরে নিজের মতো অজয়কে চালাবার চেষ্টা করতে লাগল। নিজে যেটা ভালো বুঝত, অজয়কে দিয়ে সেটাই করাত। অজয়ের চারিত্রিক পরিবর্তন ওর দুই সন্তানকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করল। ওরা বাবার থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকল। অফিস থেকে ফিরে বাচ্চাদের ঘরে না ঢুকে অজয় সোজা সুনন্দার ঘরে চলে যেত।

সেদিন সুনন্দার কোনও আত্মীয়ের বিয়ে ছিল। অজয়, সুনন্দা মেয়েকে নিয়ে বিয়েতে যাবার জন্যে তৈরি হচ্ছিল। অজয়ের ছেলে অয়নও যাওয়ার জন্যে বাবার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু অজয় ওকে বকা দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়, ‘গিয়ে পড়াশোনা করো, কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।’

বাবার কথা শুনে ছেলে ঘরে এসে মায়ের ছবির সামনে দাঁড়ায়, চোখে জল ভর্তি। অন্বেষা ভাইপোর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ঘরে এসে ঢোকে। অয়নকে ছোট্ট থেকে দেখছে অন্বেষা, খুবই মুখচোরা ছেলে। বাপের মুখের উপর কথা বলবে এমন অভ্যাস ওদের দুই ভাই-বোনের কারওরই নেই। অজয় আজকাল সুনন্দার কথায় ওঠে বসে। সুনন্দার মেয়ের খেয়াল রাখাটা অজয়ের কাছে বেশি জরুরি। অন্বেষা প্রতিবাদ করাতে অজয় জানিয়েছিল, পিতৃহীন মেয়েকে সময় দেওয়াটা অনেক বেশি দরকার। অথচ অজয়ের একবারও মনে হয়নি মা-মরা তার নিজের দুটি সন্তানের কষ্ট। বাচ্চাদের স্কুলের মাইনে, জরুরি কিছু জিনিসপত্র কিনে দেওয়াকেই অজয় ভেবে নিত বাচ্চাদের প্রতি তার কর্তব্য শেষ। অয়ন আর রিয়া বুঝে গিয়েছিল তারা বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে। বাড়িতে যেটুকু ভালোবাসা পাচ্ছে সেটা পিসির কাছ থেকেই। বাড়ির পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল দুই ভাই-বোন।

হঠাৎই অজয় একদিন নিজের বাড়ি ছেড়ে সুনন্দা আর তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে স্বাতির পৈতৃক বাড়িতে এসে ওঠে। স্বাতির মা মৃত্যুর আগে নাতির নামে বাড়িটা লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন। অজয়ের নিজের বাস্তুভিটে ত্যাগ করার প্রধান কারণ ছিল ওখানে বাড়ির অন্যান্যদের মধ্যে ওর স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছিল। অন্বেষাই একমাত্র মাঝেমধ্যে বাচ্চাদের দেখতে অজয়ের নতুন আস্তানায় যেত।

আমি অয়নের থেকেই অজয়ের খবরাখবর পেতাম। অজয়ের ব্যবহারে আমিও খুশি ছিলাম না। অনেকবার মনে হয়েছে ওকে বোঝাই কিন্তু অপমানিত হওয়ার ভয়ে সবসময় পিছিয়ে এসেছি। এরই মধ্যে অয়নের কাছ থেকে জানতে পারলাম সুনন্দা মা হতে চলেছে। অজয়ের যা বয়স সেটা ভেবে অবাক হলাম। পঁয়তাল্লিশ ছুঁই ছুঁই, নিজের দুটি সন্তান প্রথম স্ত্রী থেকে। তাছাড়াও সুনন্দারও মেয়ে তখন এগারোয় পড়বে। সন্তানের সত্যিই কি কোনও দরকার ছিল ওদের জীবনে? হঠাৎই অজয় আর সুনন্দাকে প্রচন্ড স্বার্থপর বলে মনে হল আমার।

দ্বিতীয়বার অজয় যখন বিয়ে করতে সম্মতি দিয়েছিল তখনই ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল। ও বলেছিল একে অপরের সঙ্গী হতে পারবে বলেই এই বিয়ে করা। আর সন্তানরাও নতুন করে মা-বাবার স্নেহ ভালোবাসা পাবে। তাহলে হঠাৎ কী ভেবে সুনন্দা মা হবার জন্যে রাজি হয়ে গেল?

অজয়, সুনন্দার ছেলে হল। শহরের বড়ো হোটেলে পার্টিও দিল ওরা। আমন্ত্রিতদের লিস্টে আমারও নাম ছিল। অতিথিরা প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন ঠিকই কিন্তু আড়ালে আবডালে তাদের মুখে অজয়দের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য ছাড়া কিছু শুনলাম না। অবশ্য অজয়কে দেখলাম এব্যাপারে বেশ নির্লিপ্ত। ওর জগতে সুনন্দা এবং ওদের ছোট্ট শিশুসন্তান ছাড়া আর কেউই নজরে পড়ল না।

পার্টিতেই দেখা হয়ে গেল অয়ন আর রিয়ার সঙ্গে। এতটা উদাস ওদের আগে কখনও দেখিনি। জানি কারণটা অজয়। ওদের প্রতি অজয়ের উদাসীনতাই এর জন্যে দায়ী। টাকা-পয়সা দিয়ে বাচ্চাদের মন হয়তো ভোলানো যায় কিন্তু মন জয় করা সম্ভব নয়। অয়ন আর রিয়ার দরকার ছিল মায়ের স্নেহ মমতার কিন্তু মা না থাকায় কর্তব্যটা বর্তায় বাবার উপর। অথচ দ্বিতীয়বার বিয়ে করবার সময় বাচ্চারাই বাবাকে সবথেকে বেশি জোর দিয়েছিল নিজের জীবনসঙ্গিনী খুঁজে নেওয়ার জন্যে। সেই বাবাই যদি সন্তানদেরথেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে সন্তানদের মনের অবস্থা কী হতে পারে এটা কারওরই অজানা নয়।

একটা ব্যাপার আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল যে এই বয়সে অজয়ের কী দরকার ছিল তৃতীয় সন্তানের। তৃতীয় বলাও ভুল কারণ সুনন্দার মেয়েকে ধরলে অজয়ের মোট চারটি সন্তান। অয়নের সঙ্গে রাস্তায় একদিন দেখা হয়ে গেল। জোর করে বাড়িতে ধরে নিয়ে এলাম। স্বাভাবিক ভাবেই অজয়ের কথা উঠে এল। ‘আচ্ছা কাকু বলোতো, এই বয়সে বাবার আবার কেন ‘বাবা’ হওয়ার সাধ জাগল? বাড়ির বাইরে গেলেই বন্ধুরা, আত্মীয়স্বজনেরা এই নিয়ে হাসি তামাশা করতে ছাড়ে না। কোথাও মুখ দেখাতে পারি না। মনে হয় চুরির দায়ে আমিই চোর সাব্যস্ত হয়েছি। এইসব কারও ভালো লাগে বলো?’ অয়নের কথাগুলো এসে বুকে বিঁধল। কী উত্তর দেব বুঝে পেলাম না। অজয়কে নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে হল না। স্বাতির মুখটা মনে পড়ল। ও থাকলে কি অজয় পারত সন্তানদের এভাবে অবহেলা করতে, নিজের স্নেহ থেকে ওদের দূরে রাখতে? স্বাতিকে তো অজয় ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। তাহলে তার আমানতকে কী করে অজয় দূরে সরিয়ে রাখতে পারল শুধুমাত্র সুনন্দার জন্যে? অয়নের মুখেই শুনলাম সুনন্দার মা-বাবা ওদের বাড়িতে এসেছিল। ও সুনন্দার মা-কে, অজয়ের কাছে বলতে শুনেছে, ‘যাক বাবা এখন তোমার আর সুনন্দার পরিবার সম্পূর্ণ হল। এক ছেলে এক মেয়ের বাবা-মা তোমরা।’

আশ্চর্য হয়ে গেলাম, রাগও হল। তার মানে অয়ন আর রিয়া অজয়ের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর পড়ে না? সুনন্দাই তাহলে চতুর্থ সন্তানের জন্যে অজয়ের ব্রেন ওয়াশ করেছিল! হয়তো সুনন্দার মনে হয়েছিল অজয়ের সন্তান যদি সুনন্দা ধারণ না করে তাহলে সম্পত্তির পুরো অধিকার চলে যাবে অয়ন আর রিয়ার হাতে। মনে মনে সুনন্দাকেই দোষী ঠিক করে নিলাম।

কথা বলার জন্যে একদিন অজয়কে ফোন করে ওর বাড়ি গেলাম। অয়ন আর রিয়ার পক্ষ টেনে অজয়কে বোঝাবারও চেষ্টা করলাম, ‘দ্যাখ অজয় তুই অয়ন এবং রিয়ার সঙ্গে অন্যায় করছিস। ওদের মা মারা যাওয়ার পর তোর উপরেই ওদের ভরসা ছিল। কিন্তু সুনন্দাকে বিয়ে করার পর ওদের উপর থেকে স্নেহের হাতটা কেন তুলে নিলি তুই?’

‘কে বলেছে? জানিস অয়নের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের জন্য দশ লাখ টাকা খরচ করেছি। রিয়াকে প্রচুর টাকা দিয়ে এমবিএ কোর্সে ভর্তি করিয়েছি। আর তুই বলছিস আমি ওদের জন্য কিচ্ছু করিনি।’

‘টাকা দিয়ে স্নেহের অভাব পূরণ করা যায় না। তুই শুধু বাবার কর্তব্যটুকুই করেছিস।’

‘তোকে কি অয়ন আর রিয়া আমার কাছে পাঠিয়েছে? ওদের বলে দিস আমার পক্ষে যেটুকু করা সম্ভব ছিল আমি করেছি। এর বেশি কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আর তুই-ও আসতে পারিস এবার কারণ আমি চাই না এধরনের কথাবার্তা সুনন্দার কানে পৌঁছোক।’

এখানেই আমার আর অজয়ের সম্পর্কের ইতি। অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম সেদিন। অয়ন বিটেক পাশ করে চাকরি নিয়েছে খবর পেয়েছি। একদিন এল আমার কাছে বিয়ে করছে জানাতে।

‘বাবাকে জানিয়েছিস?’

‘না। আমাদের নিয়ে বাবা যখন কিছু ভাবে না তখন আমরা কী করছি না করছি জানাতে যাব কেন? কোনওদিন ভালোবেসে আমাদের সঙ্গে দুটো কথা বলে?’

‘তোদের পড়াশোনা তো করিয়েছে?’

‘পড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা শুধুই দায়িত্ব মনে করে। আমাদের সঙ্গে বাবার মনের সংযোগ সেই কবেই কেটে গেছে। টাকাপয়সা নিয়ে আমার বা বোনের কোনও চিন্তা নেই কারণ দিদা, মায়ের নামে যা টাকা রেখে গিয়েছিলেন তা এখন আমাদের দুই ভাইবোনের নামেই। তাছাড়া বাবারা এখন যে বাড়িতে রয়েছে সেটাও আমার নামেই।’

‘তোরা আজকালকার ছেলে, যা ভালো বুঝিস।’

অয়নের বিয়েতে আমি গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। শুনেছি অজয় রিয়ার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে কিন্তু আমাকে জানায়নি। তবে এটুকু জানতাম অয়নের সঙ্গে অজয় কোনওরকম সম্পর্ক রাখেনি।

সময় কারও জন্যে থেমে থাকে না। সম্পর্ক না থাকলেও অজয়ের সব খরবই আমার কানে আসত। সুনন্দার নামে একটা ফ্ল্যাট কিনে অজয়রা সেখানেই উঠে গিয়েছিল। অয়নও এসে বাবার হাত থেকে দিদার ফ্ল্যাটের চাবি হস্তগত করে। চাবি দেওয়ার সময় অজয়ও অয়নকে জানিয়ে দেয় পৈতৃক সম্পত্তি থেকে কানাকড়িও অয়ন পাবে না।

সুনন্দার মেয়েও ধীরে ধীরে বিবাহযোগ্য বয়সে এসে পৌঁছোয়। সুনন্দা পাত্রও পছন্দ করে কিন্তু পণের বড়োসড়ো টাকার অঙ্ক দিতে অজয় অস্বীকার করে। সুনন্দা আর অজয়ের মধ্যে সেই প্রথম ঝগড়ার সূত্রপাত। সুনন্দাই প্রথম অশান্তি শুরু করে অজয় পণের টাকা দিতে না চাইলে।

‘অয়নকে দশ লাখ টাকা খরচ করে পড়াতে পারো আর আমার মেয়ের বিয়ের জন্যে তোমার কাছে টাকা নেই?’

‘এভাবে কেন ভাবছ? ফ্ল্যাট কেনার পর আমার হাতে আর বেশি টাকা নেই। আর পণ দিয়ে মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা কি একান্ত দরকার? আর একটু দ্যাখো, ভালো ছেলে নিশ্চই পাবে যারা কিনা পণ চাইবে না।’

‘অয়নের থেকে কিছু টাকা চাও না। ওর তো উচিত বাবাকে কিছু টাকা দেওয়া।’

‘তোমার জন্যে ওর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখিনি। আজ কোন মুখে ওর কাছে টাকা চাইব?’

‘আমার জন্যে? বরং বলো ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দুটো পয়সা কামাচ্ছে বলে ও চালবাজ হয়ে গেছে।’

‘যাই বলো আমি ওর কাছে টাকা চাইতে পারব না।’

‘তাহলে এক কাজ করো। পৈতৃক বাড়িটা বিক্রি করে দাও।’ সুনন্দার এই প্রস্তাবটা অজয়ের খারাপ লাগল না কারণ ওই বাড়িতে শুধু অন্বেষাই থাকত। সেও প্রায় তিন বছর আগে নিজে ফ্ল্যাট কিনে চলে গেছে। বাড়ি বিক্রির খবরটা চারিদিকে চাউর হয়ে গেল। অয়নের কানেও খবরটা পৌঁছোল। সঙ্গে সঙ্গে সে অজয়ের কাছে গেল।

‘বাড়ি বিক্রি করলে সকলকে সমান ভাগ দিতে হবে,’ অয়ন বলল আজয়কে।

‘সকলকে মানে?’

‘রিয়াকেও ভাগ দিতে হবে।’

‘রিয়ার বিয়েতে আমি যা খরচ করেছি, তাতেই সব বরাবর হয়ে গেছে।’

‘তোমার লজ্জা করে না বাবা? বোনের বিয়ের হিসেব করছ?’

‘তোমাদের কাছে ফ্ল্যাট রয়েছে।’

‘সেটা দিদার ফ্ল্যাট। এটা আমার ঠাকুরদার বাড়ি। আইনত এটার উপর আমাদেরও অধিকার রয়েছে। সুতরাং বিক্রির সময়ই হোক অথবা টাকা ভাগ করার সময়, আমি সামনে থাকব।’ অয়নের সামনে সুনন্দা মুখ না খুললেও পরে অজয়কে একলা পেয়ে সুনন্দা এক মুহূর্তও দেরি করে না নিজের রাগ প্রকাশ করতে।

‘খুব তো ছেলে ছেলে করতে, এখন কীরকম মুখে ঝামাটা ঘষল। আমার ছেলে-মেয়েকে বঞ্চিত করে ওকে কেউকেটা বানিয়েছ। আজ তার ভালো প্রতিদান পেলে।’

‘আমি কারও অধিকার ছিনিয়ে নিইনি। তাছাড়া অয়নও আমারই সন্তান।’

‘সেটাই তো বলতে চাইছি। ছেলে হয়ে তাই এরকম দায়িত্বের কাজ করেছে।’

‘শ্রেয়া তোমার মেয়ে, আমার মেয়ে নয়’, অজয়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল।

অজয়ের কথায় সুনন্দাও আর রাগ সামলাতে পারে না, ‘তোমার মতো নির্লজ্জ আমি জীবনে দেখিনি। বিয়ের সময় তুমিই বলেছিলে আমার মেয়েকে বাবার পরিচয় দেবে। তোমার পরিচয়েই ও বড়ো হবে। এত সহজে আমি তোমাকে ছাড়ছি না।’

‘তোমারও আসল রূপ বেরিয়ে পড়েছে।’ ঘৃণা ঝরে পড়ে অজয়ের গলায়। ‘তোমার মেয়ের জন্যে আমার কাছে এক টাকাও নেই। ওকে ওর নিজের বাবার কাছে পাঠিয়ে দাও। আমি ওর বাবা নই।’

অজয়ের কথায় সুনন্দার আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। চোখে জল এনে সুনন্দা বলে, ‘তাহলে এই ছেলেও তোমার নয়? একেও কি তুমি অস্বীকার করবে?’ ইশারাটা নিজের ছেলের দিকে।

ছেলেকে দেখে অজয় কিছুটা শান্ত হয়। সুনন্দারও ঠোঁটে ছুঁয়ে যায় আত্মতৃপ্তির তীর্যক হাসি।

শেষমেশ অয়নের শর্ত অনুযায়ীই অজয়ের পৈতৃক সম্পত্তির বিক্রি স্থির হল এবং বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া গেল তা সমান ভাবে সকলের মধ্যে অজয়কে ভাগ করে দিতে হল। অবশ্য এই ঘটনার পর অজয় ছেলের মুখ না দেখার প্রতিজ্ঞা করল।

রিটায়ার করার পর অজয় ভীষণ একলা হয়ে গেল। অয়ন, রিয়ার সঙ্গে তো আগেই সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল। সুনন্দার মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে সুনন্দা আর ছোটো ছেলে। সেও দেখতে দেখতে কৈশোরে পা দিয়েছে। বাবার থেকে মায়ের সঙ্গেই তার বেশি ওঠাবসা। নামেই শুধু বাবা হয়ে থেকে গেছে অজয়, সুনন্দার ছেলে মেয়ের কাছে। সেই শুরু অজয়ের আত্মদহনের। অয়ন, রিয়ার কাছে সে প্রতিজ্ঞা করেছিল, সেই বাবার দায়িত্বটাও সে পুরোপুরি পালন করতে পারেনি। মনে মনে নিজেকেই ঘৃণা করতে শুরু করে অজয়। মানসিক এই পরিস্থিতির মধ্যেই পুরোনো সম্পর্কগুলো ঝালিয়ে নিতেই অজয় আমাকে ফোন করে।

এত বছর পর ওর গলা শুনে সত্যিই আশ্চর্য হয়েছিলাম কিন্তু বন্ধুত্বের টানে না গিয়েও পারলাম না। দেখলাম অনেক বদলে গেছে অজয়। নিজের ভুল শোধরাতে চায়। অয়ন, রিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চায় আমার সাহায্য নিয়ে। কথা দিতে পারলাম না শুধু আশ্বাস দিলাম যে চেষ্টা নিশ্চই করব। কয়েকদিন পরই সুনন্দা ফোন করে জানাল অজয় হাসপাতালে ভর্তি। দুদিন আগে রাতে শরীর খারাপ হওয়াতে পাড়ার সকলে মিলে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। সমস্যা হার্ট স্ট্রোক।

দৌড়োলাম হাসপাতালে। আরও চব্বিশ ঘণ্টা না কাটলে নাকি ডাক্তাররা আশ্বাস দিতে পারছেন না। অয়ন, রিয়াকেও জানালাম। খবর পেয়েই পরের দিন রিয়া বাবাকে দেখতে এল। আশা করেছিলাম সঙ্গে অয়নও আসবে। ও এল না। অয়নের বাড়ি গেলাম। অজয়ের সঙ্গে আমার যা কথা হয়েছে সবই ওকে জানালাম। সব শুনে ও বলল, ‘কাকু, কোনও সন্তানই চায় না তার মায়ের জায়গা সৎমা নিক। কিন্তু বাবার মুখ চেয়ে বাবার বিয়েতে বাধা দিইনি। বাবাও কথা দিয়েছিলেন ভালোবাসার কোনও অভাব আমাদের হবে না। কিন্তু নতুন মা আসার পর থেকে বাড়ির পরিবেশটাই বদলে গেল। মাকে আমি দোষ দেব না। আমার অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে যিনি আমাদের নিজের স্নেহ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। বোনের বিয়ে বাবা যেমন তেমন করে সেরেছেন অথচ নতুন মায়ের মেয়ের জন্যে পৈতৃক বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। আমার টাকার উপর কোনও মোহ নেই কিন্তু নতুন মা-কে বাবা ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন, তাহলে আমরা পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ কেন পাব না? বাবার পিএফ, বিমা, পেনশন সবকিছুর ওপর অধিকার রয়েছে নতুন মায়ের তাহলে আমরা আমাদের অধিকার ছাড়ব কেন?’

‘কিন্তু টাকার কি দরকার আছে তোর?’

‘আমাদের শুধু দরকার ছিল মা-বাবার ভালোবাসার যা ওঁরা আমাদের দেননি। মায়ের জায়গা হয়তো নেওয়া সম্ভব নয় কিন্তু রাত্রে ঘুমন্ত সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর তো করতে পারতেন।’

‘তোদের বাবা আজ অনুশোচনার আগুনে জ্বলছেন।’

‘অনুশোচনা তো করতেই হবে। নতুন মায়ের প্রতি মোহ, আকর্ষণ কমেছে বয়সের সঙ্গে তাই ছেলে মেয়ের কথা এখন মনে পড়েছে।’

‘তোদের বাবা যে ভুল করেছেন, তুইও কি একই ভুল করতে চাস? প্রতিশোধ নিতে চাস?’

‘আমি আর কী করব? যা অন্যায় করেছেন তার ফল আজ উনি ভোগ করছেন।’

‘তাও উনি তোর বাবা। উনি তোর কাছে কিছু চাইছেন না শুধু নিজের কৃতকর্মের জন্যে লজ্জিত। তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চান। একবার ওনার কাছে যা। তোর কাছে ক্ষমা চাইতে পারলে ওনার মনের বোঝা খানিকটা হালকা হবে।’

অয়ন আমার কথা শুনল। পরের দিন আমার সঙ্গে হাসপাতালে বাবাকে দেখতে এল। ওকে দেখে অজয়ের চোখের জল বাঁধ মানল না। অয়নের হাত চেপে ধরে রাখল, মুখ থেকে একটা কথাও বেরোল না। সুনন্দাও স্বামীর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অভদ্রতা না করে অয়নের কুশল জিজ্ঞেস করে চুপ করে থাকল।

অজয় যতদিন হাসপাতালে থাকল অয়ন নিয়ম করে বাবাকে দেখে যেত। হাসপাতাল থেকে ছাড়ার দিন অয়ন এসে সব বিল মিটিয়ে বাবাকে বাড়ি পেৌঁছে দিল। অজয় ছাড়ল না অয়নকে, ‘তোদের কাছে আমি অপরাধী। নিজের প্রতিজ্ঞা আমি রাখতে পারিনি। এতটাই স্বার্থপর হয়ে উঠেছিলাম যে ভুল করেও ভুলটাকে স্বীকার করিনি। আমাকে ক্ষমা করিস।’

‘মানুষের এতটা স্বার্থপর হওয়া উচিত নয় বাবা।’ অয়ন উত্তর করলে সুনন্দা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। অজয় ওকে থামিয়ে দিল। আমিও পুরোনো রাগ পুষে রেখেছিলাম। উপযুক্ত সময় দেখে মুখ থেকে বেরিয়েই গেল, ‘বউদি, তোমাদের দুজনের উচিত ছিল সংসারটাকে ধরে রাখার। ছেলে মেয়েদের মধ্যে ভেদাভেদ করা কখনওই উচিত হয়নি। সৎ বোন, সৎ ভাই এই চিন্তাটাই বাচ্চাদের মনে কেন আসবে যদি মা-বাবা সঠিক শিক্ষায় বাচ্চাদের মানুষ করে? তুমি আসতেই কেন অজয়ের ছেলে মেয়েকে নিজের সন্তান ভেবে মাতৃস্নেহে ভরিয়ে তুলতে পারোনি? অজয়কে বিয়ে করে তুমি যে সামাজিক সুরক্ষা পেয়েছ সেটা কীভাবে অস্বীকার করবে? অজয় তো তোমার সঙ্গে এমনটা করেনি। ও তোমার মেয়েকে বাবার পরিচয়ে বড়ো করেছে। ওর বিয়েতে, পৈতৃক বাড়ি বিক্রি করতেও ও পিছপা হয়নি।’ বহুদিনের জমে থাকা কথাগুলো বলতে পেরে অনেক হালকা মনে হচ্ছিল নিজেকে। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে আমি আর অয়ন অজয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজেদের গন্তব্যে রওনা হলাম।

খবর পেলাম অয়নের দিল্লিতে বদলি হয়েছে। বউকে নিয়ে একদিন দেখা করতে এল। জানাল পরের মাসে অজয়, সুনন্দাও ওর সঙ্গে দিল্লি যাচ্ছে। দুই তিন মাস ওখানে থেকে অয়নের সংসারটা গুছিয়ে দিয়ে কলকাতা ফিরবে। খুশি হলাম। দেরি করে হলেও সুনন্দা বউদি যে নিজেকে বদলাতে পেরেছে সেটা ভেবে আনন্দ পেলাম।

Tags:
COMMENT