শি-ই-ই-ই-ই-ল কাটা-ই-ই। শি-ই-ই-ই-ই-ল কাটা-ই-ই। শি-ই-ই-ই-ই-ল কাটা-ই-ই। আওয়াজটা কানে যায়। প্রতীক্ষিত সে আওয়াজ। কতদিন ধরে খুঁজছে। ঝটাপট দেয়ালের হুকে ঝুলতে থাকা শার্ট খুলে নিয়ে গায়ে চাপাতে চাপাতে সিঁড়ি বেয়ে দুদ্দাড় নেমে আসে নীচে।
দুপুরবেলায় হরেক ফেরিওয়ালা চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে গৃহস্থের দিবানিদ্রার দফারফা করে দেয়। এই “মিশি লেবে গো’ বলে হাঁক পাড়ছে তো পরে পরেই ‘শিশি বোতল বিক্রি’ হেঁকে চলে যাচ্ছে। ধামা বাঁধাইওয়ালাও ডেকে ডেকে চলে গেছে, অবাক জলপানওয়ালা গেছে। একটু আগেই হেঁকে গেছে, ‘গামছা চা-ই-ই, বাঁদিপোতার গামছা চাই গো-ও-ও'। কিন্তু কতদিন থেকে শিল কাটাইওয়ালার খোঁজ নেই।
দুপুর ঝাঁ ঝাঁ করছে। রবিবার। ঋষভ নীচে নেমে দেখল কেউ কোথাও নেই। এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকেই গরম পড়েছে। এটা মে মাস। রাস্তা-ঘাট শুনশান। কোনদিক থেকে ডাকটা এসেছে! বাড়ির ডানদিকের রাস্তা বোসপাড়া লেন গিয়ে পেছনে পড়েছে বাগবাজার স্ট্রিটে। বাঁ দিকের শচীন মিত্র লেনও গিয়ে মিশেছে বাগবাজার স্ট্রিটে। বিভ্রান্ত লাগে ঋষভের। ঠিকই তো বলে গিন্নি, অকর্মণ্য, অপদার্থ লোক৷ শ্বশুরের দেওয়া জুটমিলের চাকরিটাও কয়েক মাস হল হারিয়েছে। কারখানায় যায়, ইউনিয়নের লোকদের সাথে ঘোরে কিন্তু জোর দিয়ে বলতে পারে না যে তোমাদের জন্য আমার চাকরি গেছে, তোমরা আমার চাকরি ফিরিয়ে দাও।
ঋষভ ফাঁকা রাস্তায় সোজা তাকাল, একটা রিক্সাওয়ালা এই রামকান্ত বোস স্ট্রিট যেখানে ভূপেন বোস অ্যাভিনিউতে গিয়ে পড়েছে, সেইখানে দাঁড়িয়ে ঠুন ঠুন শব্দ তুলছে। যদি কোনও সওয়ারি পাওয়া যায়। কিন্তু এই তীব্র গরমে মাঝদুপুরে কে বেরোবে! ডান দিকেও রাস্তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত চোখ ফেলল ঋষভ। কিন্তু কোথায়! শুনশান রাস্তা।
কাউকে তো দেখতে পাচ্ছে না। মনে একটা খটকা লাগল তার। সত্যি কি ডাকটা শুনেছে সে! না কি হ্যালুসিনেশন! মানে তার প্রয়োজনের তাগিদ থেকে মনের ভেতর ওই ডাকটার জন্ম হয়েছে। আবার দু'পাশে তাকাল ঋষভ। রাস্তার পিচের উপর হা হা করছে গ্রীষ্ম। মরীচিকা তৈরি হয়েছে। মনে হচ্ছে দূরের রাস্তায় পিচের একটা অংশ ভিজে আছে। ডান দিকেও যতদূরে চোখ যায় তেমনই শুনশান। আরে তাহলে ওই ডাকটা তার মালিককে নিয়ে কি উবে গেল! পেছন ফিরে গেট বন্ধ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে যাবে, ঠিক তখনই উলটো দিকের কানাগলির ভেতর থেকে বেরিয়ে এল সেই প্রাণসঞ্চারী আওয়াজ, শি-ই-ই-ই-ই-ল কাটা-ই-ই। শি-ই- ই-ই-ই-ল কাটা-ই-ই। শিল-চাকতি-জাঁতা কাটাই।