বছর দু'য়েক আগে কাশ্মীরে ছিল রঞ্জনের বাবার পোস্টিং। কোনও বারে থাকতে পায় না। তাই সেবারে ছেলের জন্মদিনে ঘরে থাকবে বলে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসছিল। পথে হঠাৎ আর্মি কনভয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণে ওদের গাড়ি চুরমার হয়ে গেল। জন্মদিনে বাবার বদলে এল তার কফিন। দেখে রঞ্জন নির্বাক হয়ে গেল। কারও সঙ্গে কথা বলত না, বাইরে যেত না, সারাদিন ঘরে একলা গুম মেরে বসে থাকত। আপন মনে বিড়বিড় করে বলত — আমার জন্যে বাবা চলে গেল। আমি আমার জন্মদিনে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসার জন্যে জেদ না করলে বাবার এই দুর্ঘটনা হতো না। কলেজ যাওয়া বন্ধ করল, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেও মেলামেশা বন্ধ, খালি ঝিম মেরে ঘরে বসে থাকে। সবাই অনেক বোঝাল, আমিও বোঝালাম কিন্তু কিছু পরিবর্তন হল না। আত্মীয়স্বজন দেখে বলল— বাবাকে খুব ভালোবাসত তো, তাই এই অবস্থা। ধৈর্য ধরুন, ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মাসের পর মাস কাটল, কিছুই হল না। একজন সাইকায়াট্রিস্টকে দেখালাম। কিন্তু সে কী যে ওষুধ দিল খালি গোটাদিন ঝিম মেরে পড়ে থাকে। অবস্থা ভালো হবে কী, শরীর আরও দুর্বল হয়ে যেতে লাগল। মাস ছয়েক ওষুধ খাইয়ে বন্ধ করে দিলাম। শেষে অনেকে বলল— ওকে নিয়ে একটু বাইরে ঘুরে আসুন, মন ভালো হবে, উন্নতি হবে। তখন শুরু করলাম এদিক ওদিক বেড়াতে যাওয়া। তাই ক'দিন আগে গিয়েছিলাম বারাণসীতে বাবার দর্শন করতে। বাইরে গেলে একটু ভালো থাকে কিন্তু ঘরে এলে আবার একই অবস্থা।
শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘স্বামী তো গেলই। এখন ছেলেটারও যদি এই অবস্থা হয় তো আমি কী নিয়ে বাঁচি বল তো?' মহিলার দু'চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
পূজারও চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। এবার বুঝতে পারল এতদিন রঞ্জনের এই বিসদৃশ আচরণের কারণ। অথচ সে কী উলটোপালটাই না ভেবেছে তার সম্বন্ধে। বলল, “আমি একটু ওর কাছে যাব কাকিমা?”