পর্ব ২
সুশীলা দেখতে সুন্দরী, তার উপর মাঞ্জা দিয়ে গেছিল। বাড়ি ফিরে সুনীল, শালাকে ফোন করে বলল, ‘অব সে ডগডর কে পাস অপনি পাগলেট দিদিকো তুমহি লেকে জানা, আজ বহুৎ বেইজ্জত হুয়া মেরা।’
বলা বাহুল্য ডাক্তারের ওষুধ বেশিদিন চলল না এবং চরিত্রের পরিবর্তনও এল না। এই অসুবিধার জন্য সুনীল কোনও লম্বা দূরত্বের ট্রেনজার্নি সুশীলাকে নিয়ে করে না। কারণ সুশীলা ট্রেনের টয়লেটে কিছুতেই যাবে না। একবার ভাগ্নির বিয়েতে গুয়াহাটি নিয়ে গেছিল। গুয়াহাটি পৌঁছোতে বিকেল হয়ে গেল। সমস্যা দেখে, সুনীল ফিরতি পথে ফ্লাইটে এল।
সুশীলার এই আচরণে সবচেয়ে দুঃখী সুশীলার শ্বাশুড়ি মা। ভদ্রমহিলা যৌথ পরিবারে সংসার করেছেন, ভাসুর, দেওর ও জায়েদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেন। ওনারা এখন বাড়ির কাছাকাছি সবাই থাকেন। এছাড়া সুশীলার তিন ননদ। তারাও কাছাকাছি থাকেন। এরা সবাই সুশীলার ছোঁয়াছুঁয়ির ও সেই নিয়ে ঘ্যানঘ্যানানিতে বিরক্ত হয়ে সহজে এই বাড়িতে পা রাখেন না। এই নিয়ে বাড়িতে কম অশান্তি হয়নি। কিন্তু সুশীলা নিজেকে একটুও বদলায়নি।
নিজের এই চারিত্রিক অবস্থা নিয়ে সুশীলা কখনও মনে মনে নিজেই বিব্রত বোধ করে। বুঝে পায় না কী করবে! একেক সময় মনে করে কিছুতেই এসব নিয়ে ভাববে না। কিন্তু সেরকম কিছু দেখলে মনের মধ্যে খচখচ হতেই থাকে। নিজের এই বিব্রত বোধ কাউকে বললে একমাত্র রেখা ছাড়া সবাই বিস্তর জ্ঞান দেয়।
কাজের মেয়ে রেখা সুশীলাকে খুব তেলিয়ে চলে। রেখাই একমাত্র সুশীলাকে বোঝে, এরকমটাই সুশীলা মনে করে। তার জন্য মাঝে মাঝে দুশো চারশো টাকা রেখাকে ধারও দেয়। সেগুলো পরে ধার থেকে দান-এ পরিবর্তিত হয়ে যায়। টাকা ফেরত কখনওই বেচারি রেখা দিতে পারে না। তবুও টাকা নেওয়ার সময় ধার বলেই সুশীলার থেকে নেয়।
একদিন সুশীলা যখন ওর মনের দুঃখের কথা রেখাকে বলে, রেখা ওকে আশ্বস্ত করে, বলে ও এক গুনিনকে জানে যার অব্যর্থ ঝাড়ফুঁকে এসব নিমেষে ঠিক হয়ে যায়। সেইমতো বাড়ির লোককে লুকিয়ে সুশীলা রেখার সঙ্গে গুনিনের ডেরায় পৌঁছোয়। গুনিন গঙ্গার পাড়ে এক পোড়ো বাড়িতে ভেড়া বানিয়েছে। বাড়ির ভিতর ঢুকেই সুশীলার গা ছমছম করতে থাকে। নিজেকেই নিজে দোষ দেয় এই ভেবে যে, এরকম জায়গায় কাজের লোকের কথায় এই ভাবে আসাটা ঠিক হয়নি।