লোকটাকে আজকাল গবুদার চায়ের দোকানে দেখা যাচ্ছে। একমাথা কোঁকড়ানো চুল। মুখ ভর্তি কাঁচাপাকা দাড়ি গোঁফ। বড়ো বড়ো দুটো সর্বগ্রাসী চোখ। কোনও কথা বলে না। গবুদা ভোরবেলা চায়ের দোকান খুললেই এসে দাঁড়ায় পায়ে পায়ে। চুপচাপ এক কোণে অপেক্ষা করে। বউনি হলেই লোকটা সামনে এসে দাঁড়ায়। গবুদার দয়ার শরীর। একটা মিষ্টি পাউরুটি আর বড়ো ভাঁড়ে এক কাপ চা। রোজকার বরাদ্দ ওর।
খেয়ে দেয়ে একটা বিড়ি ধরিয়ে নদী পাড়ে চলে যায়। সারাদিন বসে থাকে সেখানে।
পাড়ার লোকজনই দুবেলা পালা করে ভাত খেতে দেয়। শিবমন্দিরের চাতালে শুয়ে রাত কাটায় লোকটা।
মজার ব্যাপার হল ও যখন খেতে বসে তখন ক'টা কুকুর এসে জোটে আর তাদের সঙ্গেই খাবার ভাগ করে খায়। যেন আশ্চর্য এক মহাপুরুষ! মৌন সন্ন্যাসী।
আজ পর্যন্ত লোকটার নামধাম কিছুই জানা যায়নি। এই নিয়ে মাঝে মধ্যে জোর আলোচনা হয় গবুদার চায়ের দোকানে বসে থাকা মাতব্বরদের। লোকটা কথা বলতে পারে কিন্তু বলে না। খাবার সময় কুকুরদের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছে অনেকে। তবে কেন মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না সে? প্রশ্ন থেকেই যায়।
আজ রবিবার তাই রায়বাবুকে দিয়ে বাজার থেকে বেশ খানিকটা মটন আনিয়েছেন রায়গিন্নি। দুপুরে খেতে বসার আগে রায়বাবুকে দিয়ে পুকুর পাড়ে লোকটাকে দু'পিস মাংস আর ভাত পাঠিয়ে দেন। খানিক তৃপ্তি পান দু'জনেই।
শীতটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে এবার। গ্রামগঞ্জে ঠান্ডার প্রকোপ একটু বেশি শহরের তুলনায়। রায়গিন্নি আলমারি থেকে একটা পুরোনো মোটা কম্বল বের করে রায়বাবুকে দিয়ে বললেন- - যাও এটা ওই লোকটাকে দিয়ে এসো। ঠান্ডায় বড়ো কষ্ট পাচ্ছে যে। আচ্ছা এক কাজ করলে হয় না?
—কী কাজ? রায়বাবু জিজ্ঞেস করলেন।
—বলছি আমাদের একতলার একটা ঘরে ওকে থাকতে দিলে কেমন হয় !
—না না, ওসব ঝামেলায় গিয়ে কাজ নেই। অত দয়া দেখাবার কিছু হয়নি। জানা নেই শোনা নেই, শুধু শুধু বিপদ ডেকে আনার কী দরকার।